[ad_1]
মৌলভীবাজার: মৌলভীবাজারের জড়ীর ফুলতলা ইউনিয়নের অংশজুড়ে রয়েছে জুড়ী নদী। সম্প্রতি একটি দুষ্টচক্র এই নদীতে বিষ ঢেলে দেয়।
এতে বিষক্রিয়ায় মরছে নদীর মাছ ও জলজ প্রাণিকুল। ধ্বংস হয়েছে নানান জীববৈচিত্র্য। এ ঘটনাটি জানাজানি হলে স্থানীয় চেয়ারম্যান আব্দুল আলিম শেলু বিষয়টি তদন্ত করেন। তাছাড়া নদীতে বছরে একাধিক বার বিষ ঢেলে দেওয়ার প্রমাণও পান তিনি।
জানা যায়, দেশীয় প্রজাতির মিঠা পানির মাছে ভরপুর ছিল ঐতিহ্যবাহী জুড়ী নদীতে। শুষ্ক ও বর্ষা মৌসুমে নানা জাতের মাছ ধরার উৎসব হতো। নদী তীরের বাসিন্দারা হগরা, পলো, কুচা আর জাল দিয়ে মাছ ধরা উৎসবে অংশ নিতেন। এখনো সেই রেওয়াজ থাকলেও নেই আগের মতো মাছ। নানা কারণের মধ্যে অন্যতম কারণ হলো বছরে কয়েক বার বিষ প্রয়োগে মাছ নিধন। ওই দুষ্টচক্রের কবলে পড়ে এখন ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে জুড়ী নদীর মাছ ও জীববৈচিত্র্য।
স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, গেল বছর নদীটি সংস্কার হয়। এতে তাদের প্রত্যাশা বাড়ে আগের মতো মাছ ও জীববৈচিত্র্যের। কিন্তু নদীর উজানে একটি দুষ্ট চক্রের খপ্পরে পড়ে এখন অস্তিত্ব সংকটে জুড়ী নদী।
জানা যায়, সম্প্রতি চলতি বছরের ১৪ অক্টোবর নদীর ভাটিতে জালের ফাঁদ আর উজানে দেওয়া হয় বিষ। মরা আধমরা ছোট-বড় মাছ ভেসে এসে আটকা পড়ে ওই ফাঁদে। এভাবেই পরিকল্পিত অপকৌশলে বিষপ্রয়োগে ধরা হচ্ছে মাছ। এতে ধ্বংস হচ্ছে দেশীয় প্রজাতির নানা প্রজাতির মিঠা পানির মাছ। আর লুট হচ্ছে হাজার হাজার টাকার মাছ। ওই দুষ্টচক্রের কবলে পড়ে এখন হুমকিতে পড়েছে জুড়ীর অন্যতম জুড়ী নদী ও দেশের সবচেয়ে বড় হাওর হাকালুকি হাওরের দেশীয় প্রজাতির মাছ ও জলজ প্রাণী।
নদী তীরের বাসিন্দারা জানালেন, প্রতি বছরই শুষ্ক মৌসুমের শুরুতে একটি দুষ্টচক্র নদীতে বিষ দিয়ে মাছ ধরে। কিন্তু এবছর অনেক আগে থেকে ওই চক্রটি বিষ দিয়ে মাছ নিধন শুরু করেছে।
নদী তীরের স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, নদীর উজানে বিষ দিয়ে একটি দুষ্টচক্র নদীর ভাটি এলাকায় বৈদ্যুতিক তার ব্যবহার করে নানা কৌশলে মাছ ধরছে। এতে করে দেশীয় প্রজাতির নানা জাতের ছোট-বড় মাছের পাশাপাশি নিধন হচ্ছে সাপ, ব্যাঙ, কাঁকড়া, কুচিয়াসহ নানা জলজ প্রাণী। হুমকির মুখে পড়ছে নানা জাতের জলজ উদ্ভিদ, খাবার ও বাসস্থান। বিষক্রিয়ায় নষ্ট হচ্ছে মাছ ও জলজ প্রাণীর প্রাকৃতিক খাবার ও প্রজনন। ব্যাহত হচ্ছে মাছ ও জলজ প্রাণীর বংশবিস্তার।
ভৌগলিক অবস্থান থেকে জানা গেছে, নদীটির উৎস জুড়ী নদী ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের উত্তরপূর্ব অংশের পাহাড়ি অঞ্চলে উৎপত্তি লাভ করেছে। তারপর মৌলভীবাজারের কুলাউড়ার ধর্মনগর দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে। নদীটির শেষ ভাগ গিয়ে মিলিত হয়েছে হাকালুকি হাওরে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জুড়ী নদী তীরের কয়েকজন বাসিন্দারা জানান, ফুলতলা ইউনিয়নের কিছু দুষ্কৃতকারী প্রতিবছরই নদীতে বিষ দিয়ে মাছ ধরে। রাতের শেষ দিকে অথবা ভোরে নদীর উজানের দিকে বিষ দেয় ওই চক্র। আর ওই চক্রের সদস্যরা নদীর ভাটি অঞ্চলে জাল দিয়ে ও অন্যান্য কৌশলে মাছ ধরে। নদীতে মরা বা আধমরা ও পচা মাছ দলবেঁধে ভাসতে দেখে নদী তীরের বাসিন্দারা বুঝতে পারেন নদীতে বিষ দেওয়া হয়েছে।
স্থানীয়রা বলছেন, এভাবে নদীতে বিষ দেওয়ার ফলে ছোট বড় মাছ মরে যাওয়াতে নদীতে এখন আর আগের মতো মাছ পাওয়া যাচ্ছে না। হুমকিতে পড়ছে দেশীয় প্রজাতির মিঠাপানির মৎস্য ভাণ্ডার হিসেবে খ্যাত দেশের সবচেয়ে বড় হাওর হাকালুকি ও এর আশপাশের অনেক ছোট ছোট গাঙ ও খাল বিলের মাছ ও জলজ প্রাণী।
তারা অভিযোগ করে বলেন, মৎস্য বিভাগ যদি দ্রুত জোরালো পদক্ষেপ নিতো তা হলে ওই রকমভাবে দেশীয় প্রজাতির মাছ নিধন হতো না।
এ বিষয়ে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল আলিম সেলু বলেন, বিষয়টি তদন্ত করে বছরে একাধিকবার নদীতে বিষ ঢেলে দেওয়ার প্রমাণও পেয়েছি। জুড়ী নদীর সাথে ফুলতলা ইউনিয়নের ইতিহাস জড়িয়ে আছে। জুড়ী নদীর জীববৈচিত্র্য রক্ষায় জনপ্রতিনিধিদের সম্পৃক্ত করে সচেতনতা বাড়াতে অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। তিনি দেশীয় মৎস্যসম্পদ রক্ষায় সবার সচেতনতা ও সহযোগিতা চান।
এ প্রসঙ্গে জুড়ী উপজেলার মৎস্য কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামান জানান, অভিযোগ পেলে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।
বাংলাদেশ সময়: ২১৫০ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৮, ২০২৩
বিবিবি/এএটি
[ad_2]
Source link