বুড়ির বাঁধে মাছ ধরার উৎসব Somoybulletin

[ad_1]

ঠাকুরগাঁও: ঠাকুরগাঁওয়ের শুক নদীর তীরে বুড়ির বাঁধ এলাকায় মাছ ধরার ধুম পড়েছে। খেওয়া জাল, পলো আর মাছ রাখার পাত্র খালই নিয়ে ভোর থেকেই এ এলাকায় জড়ো হয়েছেন হাজার হাজার মানুষ।

 

সোমবার (১৬ অক্টোবর) বিকেলে বাঁধের গেট খুলে দেওয়ার পরই মাছ ধরতে নেমে পড়েন শত শত মানুষ। এভাবে আগামী কয়েকদিন হই হুল্লোড় করে মাছ ধরবেন শত শত শৌখিন মানুষ।  

কেউ ভেলায়, কেউ ছোট নৌকায় করে মাছ ধরছেন। আর বাঁধে দাঁড়িয়ে তাদের উৎসাহ দিয়ে যাচ্ছেন বন্ধু-বান্ধব ও স্বজনরা।

মঙ্গলবার সকালে বুড়ির বাঁধ এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সারাদিন ধরে মাছ ধরার জন্য আশপাশের কয়েক গ্রামের ও জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে শত শত মানুষ এসেছেন নদীর তীরে। নারী, পুরুষ, শিশু ও বৃদ্ধ সবাই নেমে পড়েছেন মাছ ধরতে। কারও হাতে খেওয়া জাল, কারও হাতে লাফি জাল, কারও হাতে পলো। অনেকে আবার খালি হাতেই চেষ্টা করছেন মাছ ধরতে। সব মিলিয়ে উৎসবমুখর একটি পরিবেশ বিরাজ করছে শুক নদীর তীরে।  
 
সোমবার বিকেলে বাঁধের গেট খোলার পর সন্ধ্যা ৭টা থেকে এ মাছ ধরা উৎসব শুরু হয়েছে। ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার চিলারং ও আকচা ইউনিয়নের মাঝামাঝি জায়গায় অবস্থিত এ বাঁধটি। গেট খোলার পর এখানে যে কেউ চাইলেই মাছ ধরতে পারে।
 
তবে মাছ ধরতে আসা সবার অভিযোগ, এবার মাছ তেমন পাওয়া যাচ্ছে না। রাত থেকে জাল ফেলেও কাঙ্ক্ষিত মাছ পাচ্ছেন না কেউ। দেশীয় প্রজাতির মাছ নেই বললেই চলে গত কয়েক বছর আগেও এ বাঁধে প্রচুর দেশি মাছ ধরা পড়ত, কিন্তু এখন মাছ নেই। কারেন্ট জাল, রিং জালের কারণে দেশীয় মাছ বিলুপ্তির পথে।

শুধু মাছ ধরতে নয়, অনেকে নদীর তীরে ভিড় করছেন মাছ কিনতেও। ক্রেতারা বলছেন, মাছের দাম অনেক বেশি। দেশীয় মাছ তো পাওয়া যায় না। এখানে যাও পাওয়া যাচ্ছে, দাম অনেক বেশি। পুঁটি মাছ ৩০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। তাই অনেক ক্রেতাই মাছ না কিনেই বাড়ি ফিরছেন।

এ উৎসবকে ঘিরে বাঁধের বিভিন্ন জায়গায় বসেছে খাবারের হোটেল, ফলের দোকান, খেলনা ও প্রসাধনীর দোকান। বাইরে থেকে আসা মানুষের মোটরসাইকেল ও বাইসাইকেল রাখার জন্য তৈরি হয়েছে অস্থায়ী গ্যারেজও।

জানা যায়, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতায় ১৯৫১-৫২ সালের দিকে শুষ্ক মৌসুমে এ অঞ্চলের কৃষি জমির সেচ সুবিধার জন্য এলাকায় একটি জলকপাট নির্মাণ করা হয়। জলকপাটে আটকে থাকা সেই পানিতে প্রতি বছর মৎস্য অধিদপ্তরের উদ্যোগে বিভিন্ন জাতের মাছের পোনা ছাড়া হয়। আর এ পোনাগুলোর দেখভাল করে আকচা ও চিলারং ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি)।

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার সেনুয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা আশরাফুল ইসলাম বলেন, প্রতিবার আমি এখানে মাছ ধরতে আসি। বিভিন্ন জায়গা থেকে এখানে অনেক মানুষ আসেন মাছ ধরতে। সবাই মিলে মাছ ধরতে খুব ভালো লাগে। পুরো এলাকা মেলায় পরিণত হয়েছে। তবে গত দুই বছর ধরে তেমন মাছ পাওয়া যাচ্ছে না। আগে অনেক মাছ পাওয়া গেলেও এখন দেশীয় মাছের আকাল।

মাছ ধরতে আসা জেলেরা বলেন, জলকপাট আগামী কয়েকদিন খোলা থাকবে। মাছ ধরাও চলবে এ কয়েকদিন। তবে প্রথম দুদিনই মাছ ধরার জন্য মানুষের ভিড় সবচেয়ে বেশি হয়। আর গত দুই/তিন বছর ধরে মাছ খুব কম পাওয়া যাচ্ছে। রিং জাল, কারেন্ট জালের কারণে এখন দেশীয় মাছ নেই। তাই শখের বসে মাছ ধরতে এসে হতাশ হয়ে ফিরে যেতে হচ্ছে।

মাছ ধরতে আসা আনসারুল্লাহ বলেন, আমি সকালে মাছ ধরতে এসেছি। মূলত আনন্দ-উল্লাসের জন্য প্রতিবারে শখের বসে এখানে মাছ ধরতে আসি। ভোর থেকে সকাল ৯টা পর্যন্ত মাছ ধরেছি। পুঁটি, টেংরাসহ অল্প কিছু মাছ পেয়েছি। এতক্ষণ থেকে যেভাবে পরিশ্রম হয়েছে, সেই অনুপাতে মাছ পাওয়া যায়নি।

সকালে ঠাকুরগাঁও শহর থেকে মাছ কিনতে আসা রিপন বলেন, দেশীয় প্রজাতির মাছ বাসার সবাই পছন্দ করে। তাই টাটকা মাছ কিনতে এখানে সকালেই চলে এসেছি। কিন্তু এসে দেখি মাছ তেমন নেই। যাও বা আছে, দাম অনেক বেশি। দেখি অল্প কিছু মাছ নিয়ে চলে যেতে হবে।

বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড ঠাকুরগাঁওয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী গোলাম যাকারিয়া বলেন, ১৯৫১-৫২ সালের দিকে বুড়ির বাঁধ সেচ প্রকল্পটি নির্মাণ করা হয়। বাঁধটির সামনে একটি অভয়াশ্রম আছে। প্রতি বছর বাঁধটি ছেড়ে দেওয়ার পর এখানে অনেক মানুষের সমাগম ঘটে। যারা এখানে মাছ ধরতে আসেন। আমরা মনে করছি, এর মাধ্যমে আমিষের চাহিদা কিছুটা হলেও পূরণ হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৫৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৭, ২০২৩
এসআই



[ad_2]
Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *