[ad_1]
ঢাকা: ভিটামিন ডি-র স্বল্পতা, দীর্ঘ মেয়াদে গ্যাসের ওষুধ ও স্টেরয়েড ট্যাবলেট সেবন, খাদ্যে প্রয়োজনীয় ক্যালসিয়াম ও আমিষের অভাবে হাড় ক্ষয়ের রোগ বাড়ছে। ৫০ বছরের বেশি বয়সীদের প্রতি তিনজনে একজন নারী এবং প্রতি ৫ জনে একজন পুরুষ অস্টিওপোরোসিস বা হাড় ক্ষয় রোগে ভুগছেন।
এমন পরিস্থিতিতে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অস্টিওপোরোসিস রোধে সাধারণ মানুষ ও চিকিৎসকদের সচেতনতার বাড়ানোসহ এ রোগের ঝুঁকিতে থাকা ব্যক্তিদের স্ক্রিনিং, অস্টিওপোরেসিস পরীক্ষা ও সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসা জরুরি।
সোমবার (১৬ অক্টোবর) রাজধানীর বসুন্ধার আবাসিক এলাকায় ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপ কনফারেন্স হলে ‘শক্ত ও মজবুত হাড় গঠন করুন’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা এসব কথা বলেন। বিশ্ব অস্টেওপোরোসিস দিবস-২০২৩ উপলক্ষে যৌথভাবে গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করে অস্টেওপোরোসিস টাস্কফোর্স, বাংলাদেশ অ্যান্ডোক্রাইন সোসাইটি ও কালের কণ্ঠ।
বারডেম জেনারেল হাসপাতালের পরিচালক (শিক্ষা), বাংলাদেশ অ্যান্ডোক্রাইন সোসাইটির প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও অস্টিওপোরেসিস টাস্কফোর্সের উপদেষ্টা অধ্যাপক ফারুক পাঠান এ রোগ ও এর কারণ সম্পর্কে বলেন।
তিনি বলেন, আক্ষরিকভাবে অস্টিও শব্দের অর্থ হাড় ও পোরেসিস মানে হলো গর্ত। শরীরের হাড় ক্রমশ ক্ষয় হওয়াকে আমরা অস্টিওপোরেসিস বলি। এতে শুধু ক্ষয় না; হাড়ের ঘনত্বও কমতে থেকে এবং এর সূক্ষ্ম কাঠামো (মাইক্রোস্ট্রাকচার) দ্রুত লোপ পেতে থাকে। এতে করে হাড় দুর্বল ও ভঙ্গুর হয়ে পড়ে। অর্থাৎ, অল্প আঘাতেই হাড় ভেঙে যেতে পারে। জন্মের পর থেকে আমাদের হাড় গঠন শুরু হয়। ২৫ থেকে ৩০ বছর পর্যন্ত আমাদের বেশির ভাগ হাড় গঠন হয়। ৪০ বছর পর থেকে হাড় ক্ষয় হতে থাকে, ৫০ বছরের পর থেকে তা খুব দ্রুত হয়।
নানা কারণে হাড় ক্ষয় হতে পারে। এর মধ্যে কিছু কারণ আছে যেগুলো আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই। যেমন, যত বয়স বাড়বে ততই অস্টিওপোরেসিস বা হাড় ক্ষয়ের ঝুঁকি বাড়বে। মেয়েদের ক্ষেত্রে ইস্ট্রোজেন হরমোন এবং ছেলেদের ক্ষেত্রে টেস্টোস্টেরন হরমোনের পরিমাণ কমে গেলে হাড় ক্ষয় হতে পারে। মেয়েদের বেলায় মেনোপজের (ঋতুস্রাব মা মাসিক বন্ধ হয়ে যাওয়া) পর হাড় দ্রুত ক্ষয় হতে থাকে, ৬৫ বা ৭০ বছর বয়সের পর তা আরও দ্রুত ক্ষয় হতে থাকে।
পুরুষদের তুলনায় নারীদের হাড় ক্ষয়ের প্রবণতা বেশি থাকে উল্লেখ করে তিনি বলেন, পরিবারের কারও মধ্যে হাড় ক্ষয়ের প্রবণতা জিনগতভাবে থাকলে তা অন্য সদস্যদের মধ্যেও আসতে পারে। বিশ্বে এশিয়া মহাদেশের বাসিন্দাদের মধ্যে হাড় ক্ষয়ের প্রবণতা বেশি।
এছাড়া প্রয়োজনীয় পুষ্টির অভাবে নারী-পুরুষ উভয়েরই হাড় ক্ষয় হতে পারে। ভিটামিন ডি ও ক্যালসিয়ামের অভাবে, হজমের সমস্যা ও অন্যান্য অপুষ্টিজনিত কারণে পুরুষ-মহিলা উভয়েরই হাড় ক্ষয় হতে পারে। ধূমপান ও অ্যালকোহল সেবনের কারণে হাড় ক্ষয়ের প্রবণতা বাড়ে। এ বিষয়গুলো চাইলে আমরা ঠিক করতে পারি। জীবনযাপনের ধরন পরিবর্তন করা একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এখানে। এছাড়া কিছু ওষুধের কারণে হাড় ক্ষয় হতে পারে। বিভিন্ন কারণ জড়িত থাকতে পারে। এজন্য সবার আগে কারণ চিহ্নিত করতে হবে।
কোন বয়সে অস্টিওপোরোসিসের ঝুকি বেশি এ বিষয়ে অস্টেওপোরোসিস টাস্কফোর্স, বাংলাদেশ অ্যান্ডোক্রাইন সোসাইটির উপদেষ্টা ও ইউনাইটেড হাসপাতালের অ্যান্ডোক্রাইনজি বিভাগের সিনিয়র কনসালটেন্ট অধ্যাপক মো. হাফিজুর রহমান বলেন, হাড় ক্ষয় হচ্ছে হাড়ের সর্বাধিক কমন রোগ। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এ রোগের প্রকোপ বেড়ে যায়। দেখা যাচ্ছে যে, পুরুষের তুলনায় নারীদের হাড় ক্ষয়ের প্রবণতা বেশি। ২৩ শতাংশ ক্ষেত্রে নারী হাড় ক্ষয়ে আক্রান্ত ও ১২ শতাংশ ক্ষেত্রে পুরুষ এ রোগে আক্রান্ত। বিশেষ করে নারীদের যখন নেনোপজ বা ঋতুস্রাব বন্ধ হয়ে যায় তখনেই হাড় ক্ষয়ের প্রবণতা বেড়ে যায়। ছেলে ক্ষেত্রে যাদের বয়স বছরের বেশি তাদের হাড় ক্ষয়ের প্রবণতা বেড়ে যায়। এছাড়া যারা ক্ষীণকায় বা যাদের শরীরে ওজন কম, যারা কায়িক পরিশ্রম করছে না, ক্যালসিয়াম জাতীয় খাবার কম খাচ্ছে, যাদের ভিটামিন ডি-র অভাব, খাবারে বেশি করে লবণ খায়, ধুমপান করে, মদ্যপায়ী- তাদের হাড় ক্ষয়ের সম্ভাবনা বেশি থাকে।
এছাড়া কিছু রোগ কুশিং সিনড্রোম বা কর্টিসল হরমোন বেড়ে যাওয়া, থায়রয়েড অক্সিটোসিস যদি থায়রয়েড হরমোন অত্যাধিক বেড়ে যায় এছাড়া পুরুষ বা নারী হরমোন যদি শরীরে কমে যায়, জয়েন্টের রোগ রিমাইটেড আর্থাটাইটিস এসব ক্ষেত্রেও অস্টিওপরোসিস হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
কিছু ওষুধের ক্ষেত্রেও এটি বাড়ে। যেমন- কর্টিসল হরমোন যদি ব্যবহার করা হয়, কেউ যদি থায়রয়েড হরমোন শরীরের প্রয়োজনের বেশি পান করলে, এছাড়া গ্যাসের ওষুধ র্দীঘদিন খেলে অস্টিওপরোসিস বেড়ে যায়।
বিশ্বে অস্টিওপোরোসিস রোগীর সংখ্যা কত? বাংলাদেশে এ সংখ্যা কত? এ বিষয়ে অস্টেওপোরোসিস টাস্কফোর্স, বাংলাদেশ অ্যান্ডোক্রাইন সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক ও বিএসএমএমইউ’র অ্যান্ডোক্রাইনজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. শাহজাদা সেলিম বলেন, বিশ্বে ৫০ বছরের বেশি বয়সী নারীদের তিনজনে ১ জন ও ৫জনে একজন পুরুষের হাড় ক্ষয়ের রোগ আছে। আর কমপক্ষে দশজনে একজন ফ্র্যাকচারে আক্রান্ত হচ্ছে। ৬০-৭০ বছরে নারীদের পাঁচজনে একজন, ৭০-৮০ প্রতি তিনজনে দুজন। পুরুষের ক্ষেত্রে তিনজনে একজন।
তিনি বলেন, আজকের হাড় ক্ষয় কালকের হাড় ভাঙা বা ফ্র্যাকচারের কারণ। ২০২১ সালের এক বৈশ্যিক জরিপে দেখা গেছে দুই মিলিয়ন ফ্র্যাকচার হয়েছে হাড় ক্ষয়ের কারণে। শুধুমাত্র যুক্তরাষ্ট্রে ৮ দশমিক ৯ মিলিয়ন ছিল। ২০৩৫ সালে নয় মিলিয়নে দাঁড়াবে।
ধারণা করা হয়, বাংলাদেশে ৫০ বছর বয়সী মানুষ ৩০ শতাংশের বেশি। আমরা একটি সমীক্ষায় দেখেছি ডায়াবেটিকস আক্রান্তদের মধ্যে এ রোগ বেশি পাওয়া যাচ্ছে।
বাংলাদেশে গড় আয়ু বাড়ার কারণে হাড় ক্ষয়ের রোগী বাড়ছে। সামনে এটি আরও বাড়তে পারে আশঙ্কা করা হচ্ছে। একটা বেশি বয়সী নারী বা পুরুষের যদি হাড় ক্ষয় হয়ে যায় পরবর্তীতে ফ্র্যাকচার হয় তাহলে তার কর্মক্ষমতা কমে যায়। এতে পরিবারের ওপরে বাড়তি চাপ তৈরি হয়। কম বয়সি হলে চাকরি হারাতে পারেন। এজন্য বেশি সংখ্যক অস্টিওপোরোসিস রোগীদের সেবা দেওয়ার জন্য আমাদের কাঠামোগতভাবে প্রস্তুতি নিতে হবে।
বৈঠকে অস্টিওপোরেসিসের লক্ষণ ও উপসর্গ নিয়ে কথা বলেন বারডেম হাসপাতালের অ্যান্ডোক্রাইনোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক, বাংলাদেশ অ্যান্ডোক্রাইন সোসাইটির সহসভাপতি ও অস্টিওপোরেসিস টাস্কফোর্সের উপদেষ্টা ডা. ফারিয়া আফসানা। তিনি বলেন, অস্টিওপোরেসিস একটি নীরব রোগ। সাধারণত খুব বেশি লক্ষণ এটি প্রকাশ করে না। কিন্তু তারপরও আমরা কিছু কিছু লক্ষণ দেখলে আমরা চিন্তা করি যে ওই পুরুষ বা মহিলার অস্টিওপোরেসিস বা হাড় ক্ষয় রোগ থাকতে পারে। সেক্ষেত্রে লো-ট্রমা ফ্র্যাকচার বা অল্প আঘাতে হাড় ভেঙে যাওয়া, হাড় ক্ষয়ের ফলে কুঁজো হয়ে যাওয়ার মত লক্ষণগুলো আমরা দেখি। আবার সাধারণভাবে অনেক রোগী শরীরে বা মাংসে ব্যথার কথা বলে থাকেন যা অস্টিওপোরেসিসের একটা লক্ষণ হতে পারে।
তিনি বলেন, এখানে গুরুত্বপূর্ণ হলো, যেহেতু অস্টিওপোরেসিসের সুনির্দিষ্ট কোনো লক্ষণ বা উপসর্গ নেই- সেক্ষেত্রে ঝুঁকিগুলো জানা এবং কাদের অস্টিওপোরেসিস হতে পারে তাদেরকে আগে থেকেই স্ক্রিনিং (ঝুঁকিপূর্ণ ব্যাক্তিদের খুঁজে বের করা বা রোগের প্রাথমিক শনাক্ত করা) করে নেওয়া উচিত। হাড় ক্ষয়ের পূর্বাবস্থাকে অস্টিওপেনিয়া বলা হয়। এখান থেকেই চিকিৎসাটা শুরু করা উচিত। ধূমপায়ী ও মদ্যপায়ীদেরও স্ক্রিনিংয়ের আওতায় আনতে হবে। তাহলেই এবারের অস্টিওপোরেসিস দিবসের প্রতিপাদ্য শক্ত ও মজবুত হাড় গঠন করার উদ্দেশ্য সফল হবে।
অস্টিওপোরেসিসের প্রভাবে হওয়া দীর্ঘমেয়াদি সমস্যাগুলো নিয়ে কথা বলেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের অ্যান্ডোক্রাইনোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক, বাংলাদেশ অ্যান্ডোক্রাইন সোসাইটির বৈজ্ঞানিক ও গবেষণা সম্পাদক এবং অস্টিওপোরেসিস টাস্কফোর্সের উপদেষ্টা ডা. এম সাইফুদ্দিন। তিনি বলেন, অস্টিওপোরেসিসের একটি ঝুঁকি হলো হাড় ভেঙে যাওয়া। এটা একজন মানুষ ও তার পরিবারের জন্য একটা বিপর্যয় হতে পারে। হাড় ভেঙে গেলে অনেক সময় একজন মানুষের কর্মক্ষমতা কমে যায় এবং অন্যদের ওপর নির্ভরশীল হয়ে থাকতে হয়। লম্বা সময় ধরে সেই ব্যক্তির সেবা করার জন্য পরিবারের কি পরিমাণ সময় ও অর্থ ব্যয় হচ্ছে অন্যদের ব্যয় হচ্ছে তা অন্যদের পক্ষে উপলব্ধি করা কঠিন।
কোমরের হাড় ভেঙে গিয়ে রোগী যদি শয্যাশায়ী হয়ে পড়ে তখন অনেক সময় দেখা যায় কোমরের পেছনের ঘা তৈরি হচ্ছে। সেখান থেকে রক্তনালীতে সংক্রমণ হয়ে তা সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়তে পারে। লম্বা সময় শুয়ে থাকায় রক্তনালী জমাট বেঁধে ব্রেন স্ট্রোক বা হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়ে। হাড় ভাঙায় সাধারণ মানুষ ও চিকিত্সকদের সচেতনতার বাড়ানোর জন্য অস্টিওপোরেসিস টাস্কফোর্স দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে যাচ্ছে। আমাদের দেশে ৫০ বছর বয়সের পর আমাদের বাবা-মা ও আত্মীয়-স্বজনদের হাড় ক্ষয়ের পরীক্ষা করানো উচিত।
অস্টিওপোরোসিস কোন কোন ভিটামিনেরর অভাবে হয় এ বিষয়ে অস্টেওপোরোসিস টাস্কফোর্স, বাংলাদেশ অ্যান্ডোক্রাইন সোসাইটির নিবাহী কমিটির সদস্য ও এভারকেয়ার হাসপাতালের অ্যান্ডোক্রাইনজি বিভাগের সহকারি অধ্যাপক ডা. আহসানুল হক আমিন বলেন, অস্টেওপোরোসিস হলো একটা বিশেষ অবস্থায় পরিণতি। এজন্য আমাদের প্রতিরোধে নজর দিতে হবে ক্ষয় হওয়ার আগে।
তিনি বলেন, যে সময়ে আমাদের হাড় গড়ে উঠছে সেসময়ে যদি আমরা মজবুত বা শক্ত করে গড়ে তুলতে না পারি তাহলে অস্টেওপোরোসিস ভয়াবহতা দিকে আমরা ধাবিত হবো। এ ক্ষেত্রে ভিটামিন ডি অত্যন্ত গুরুত্বপূরর্ণ। কারণ, ভিটামিন ডি যদি স্বল্পতা থাকে তাহলে হাড়কে শক্ত করার জন্য প্রয়োজনীয় ক্যালসিয়াম কোনো কাজ করবে না। এজন্য সূর্যের আলো থেকে ভিটামিন নিশ্চিত করতে হবে। বিশেষ করে স্কুল কলেজের পড়ুয়া শিশুদের সূর্যের আলো গায়ে লাগানো, খেলার মাঠের ব্যবস্থা করতে হবে। আমাদের নাগরিক জীবনে এটা একটা বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে এর সঙ্গে আমাদের হাড়ে রক্ত চলাচল খুব ভালোভাবে না হয়, কায়িক পরিশ্রম যদি বেড়ে ওঠার বয়সে না হয় তাহলে হাড়ের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে পারবো না। এতে অস্টেওপোরোসিস পরিণতি আরও বাড়বে।
বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, ভিটামিন ‘এ’ একটা প্রোটিন তৈরি করে। যেটা ক্যালসিয়ামকে হাড় গঠণে সহায়তা করে। এ বি-১, বি-৬, বি-১২ এগুলো উল্লেখযোগ্য উপাদান। ভিটামিন ‘সি’ শুধু হাড় না মাসেল গঠণে সহায়তা করে। এছাড়া ম্যাগনেশিয়াম, জিংক, ফসফরাস এদের অত্যন্ত ভুমিকা আছে। এসব ক্ষেত্রে ফলমূল ও ভেজালমুক্ত খাদ্যের বড় ভুমিকা রয়েছে। আমাদের পুষ্টিকর খাদ্যের জোগাড় করতে হবে। সেজন্য সামাজিকভাবে একটা আন্দোলন তৈরি করতে হবে। সরকার ও সমাজকে এগিয়ে আসতে হবে।
হাড় ক্ষয় রোধে লাইফস্টাইল কেমন হবে এ বিষয়ে অস্টেওপোরোসিস টাস্কফোর্স, বাংলাদেশ অ্যান্ডোক্রাইন সোসাইটির উপদেষ্ঠা ও বিএসএমএমইউ’র অ্যান্ডোক্রাইনজি বিভাগের সহকারি অধ্যাপক ডা. মারুফা মোস্তারী বলেন, অস্টেওপোরোসিসের কারণে হাড় ভেঙে যায়। সুস্থ জীবন ব্যবস্থা মেনে চলা এবং নিয়মিত ব্যায়াম করা গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে। শরীর চর্চা করলে যেমন হাড় গঠনে ভুমিকা রয়েছে তেমনি মাংশপেশিকে শক্ত করতে ভূমিকা রাখে।
তিনি বলেন, খাবারের ক্ষেত্রে সুষম খাবার খাওয়া এবং সেটা হতে হবে ছোট বেলা থেকে। কারণ, হাড় গঠন প্রক্রিয়া শিশুকাল থেকে চলতে থাকে। ২৫ থেকে ৩০ বছর বয়সে হাড়ের ঘনত্ব বেশি হয়। ৪০ বছরের পর ক্ষয় হয়ে থাকে। এজন্য দৈনন্দিন ক্যালসিয়ামের চাহিদার যোগান দিতে হবে। এক হাজার থেকে বারশ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম খাবারে যেন থাকে। একই সঙ্গে খাদ্যে প্রয়োজনীয় আমিষ থাকতে হবে। ভিটামিন ডি সেটা সকাল দশটা থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত পর্যন্ত ১৫ থেকে ২০ মিনিট সূর্যের আলোতে থাকা। তা না হলে ভিটামিন ডি ওষুধ সেবন করতে হবে।
ধুমপান-মদ্যপানের অভ্যাস পরিহার করা, অতিরিক্ত চা-কফি না খাওয়া। কেউ কেউ আবার পাতে আলাদা লবণ নিয়ে থাকেন এছাড়া জাঙ্কফুড খাদ্যে উচ্চ মাত্রায় সোডিয়াম থাকে তা শরীর থেকে ক্যালসিয়াম বের করে দিতে সাহায্য করে সুতরাং খাদ্যে লবণের পরিমাণ কমাতে হবে।
হাড় ক্ষয় নিয়ে প্রচলিত ভুল ধারণাগুলো তুলে ধরেন জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানের (নিটোর) অ্যান্ডোক্রাইনোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক, বাংলাদেশ অ্যান্ডোক্রাইন সোসাইটির সদস্য (নির্বাহী কমিটি) ও অস্টিওপোরেসিস টাস্কফোর্সের উপদেষ্টা ডা. আফসার আহামদ (মেরাজ)।
তিনি বলেন, প্রচলিত একটি ধারণা হলো- শুধু মহিলারাই অস্টিওপোরেসিসে আক্রান্ত হয়। অস্টিওপোরেসিসে নারীদের আক্রান্তের হার ৮০ শতাংশ হলেও পুরুষরাও বিশেষ করে ৫০ বছরের বেশি বয়স যাদের তাদের শতকরা ২০ ভাগ এই রোগে আক্রান্ত হতে পারেন। প্রচলিত আরেকটি ধারণা হলো শুধু বয়জ্যেষ্ঠ ব্যক্তিরাই এ রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকেন।
দেখা যাচ্ছে, বয়সজনিত কারণ ছাড়াও অনেক অস্টিওপোরেসিস রোগী আমাদের সমাজে আছেন। আরেকটি ভুল ধারণা হচ্ছে ব্যথা হলে বা হাড় ভেঙে গেলে আমরা অস্টিওপোরেসিস বুঝতে পারবো। অস্টিওপোরেসিসে একটি নীরব ঘাতক। লক্ষণ প্রকাশ পাওয়ার অনেক আগে থেকেই এই রোগের প্রক্রিয়া শরীরের মধ্যে চলমান থাকে। হাড়ের পরীক্ষা বা অস্টিওপোরেসিসের পরীক্ষা খুব ব্যয়বহুল ও কষ্টসাধ্য- এরকম একটি ভুল ধারণাও আমাদের সমাজে প্রচলিত আছে। অস্টিওপোরেসিস খুব সহজ একটি পরীক্ষার মাধ্যমে নির্ণয় করা যায় যেটি বোন মিনারেল ডেনসিটি (বিএমডি) নামে পরিচিত। এটি ১০ মিনিটের মধ্যেই নির্ণয় করা সম্ভব। একটি বড় ভুল ধারণা হলো, অস্টিওপোরেসিসের যুগোপযোগী চিকিৎসা নেই ও প্রতিরোধযোগ্য নয়। এটি আসলে প্রতিরোধযোগ্য। খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাত্রার সঠিক সমন্বয় এবং ঝুঁকিতে থাকা ব্যক্তিদের যদি আলাদা করতে পারি তাহলে আমরা খুব সহজেই রোগটিকে প্রতিরোধ করতে পারবো। এছাড়া বর্তমান চিকিত্সাব্যবস্থায় ক্ষয়ে যাওয়া হাড়কেও পুনর্গঠন বা বিনির্মাণ করা সম্ভব। কিন্তু এই চিকিত্সাব্যবস্থা কিছুটা ব্যয়বহুল। এজন্য আমাদের সমাজ ব্যবস্থায় রোগটির প্রতিরোধের ওপরই গুরুত্ব দিতে হবে।
হাড় ক্ষয়ের চিকিৎসা কখন শুরু করা উচিত তা নিয়ে কথা বলেন কুমিল্লার আর্মি মেডিকেল কলেজের মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক, বাংলাদেশ অ্যান্ডোক্রাইন সোসাইটির যুগ্ম সাংগঠনিক সম্পাদক ও অস্টিওপোরেসিস টাস্কফোর্সের সদস্য সচিব ডা. মোহাম্মদ শাহ আলম।
তিনি বলেন, অস্টিওপোরেসিসের চিকিত্সা নিয়ে পৃথিবীর অনেক দেশেই গাইডলাইন রয়েছে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে আমাদেরও একটা গাইডলাইন তৈরি করা উচিত। আমরা অনেক সময় দেখি একজন মানুষ যখন কোমর ব্যথা বা গিঁটে ব্যথা নিয়ে কোনো ডাক্তারের কাছে যায় তখনই অস্টিওপোরেসিসের চিকিৎসা দিয়ে দেওয়া হয়। এটা ভুল। চিকিৎসা দেওয়ার জন্য কিছু বৈজ্ঞানিক বিষয় মেনে চলতে হবে।
প্রথমেই আমাদের দেখতে হবে যে কাদের আমরা চিকিৎসা দেব। একজন বয়স্ক মানুষ যখন সাধারণ কাজকর্ম করার সময় বা কোনো কারণ ছাড়াই দাঁড়ানো অবস্থা থেকে পড়ে হাড় ভেঙে যায় তখন তাকে আমাদের চিকিৎসা দিতে হবে। দ্বিতীয়ত, বিএমডি পরীক্ষায় অস্টিওপোরেসিস ধরা পড়লে চিকিৎসা দিতে হবে। তৃতীয়ত, বিএমডি পরীক্ষায় অস্টিওপোরেসিস না হয়ে অস্টিওপেনিয়া বা হাড় পাতলা শনাক্ত হয় এবং সঙ্গে যদি অন্য কোনো ঝুঁকির কারণ যেমন- স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ সেবন বা হরমোনের সমস্যা থাকলে তখন তাদের চিকিৎসা দিতে হবে। শুধুমাত্র কোমর ব্যথা, হাঁটু ব্যথার ওপর নির্ভর করে আমরা চিকিৎসা দেব না।
গোলটেবিল বৈঠকটির সঞ্চালনা করেন দৈনিক কালের কণ্ঠের সম্পাদক শাহেদ মুহাম্মদ আলী। তিনি বলেন, অস্টিওপোরেসিস নিয়ে সচেতনতার জায়গায় সাধারণ মানুষের পাশাপাশি চিকিত্সক সমাজসহ চিকিত্সা ব্যবস্থাপনায় জড়িত সবার ভূমিকা জরুরি।
বাংলাদেশ সময়: ০০০৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৭, ২০২৩
ইএসএস/এমজে
[ad_2]
Source link