১০ লাখের বেশি মানুষের অনিশ্চিত জীবন গাজার যে Somoybulletin

[ad_1]

গাজার খান ইউনিস শহর। ইসরায়েল-হামাস সংঘাতের মধ্যে গাজা উপত্যকার লাখো বাসিন্দা উত্তরাঞ্চল থেকে এই শহরে পালিয়ে এসেছেন।

যে পারেন নিয়ে এসেছেন, তেল থাকলে গাড়িতে, নয়তো ঘোড়ার গাড়িতে, আর কোনো উপায় না থাকলে পায়ে ভর করে।  

উত্তর গাজার বাসিন্দারা শহরটিকে খুব ভালো অবস্থায় পাননি। আর খান ইউনিস শহর রাতারাতি দ্বিগুণ লোক ধারণের জন্য প্রস্তুত ছিল না। প্রতিটি ঘর, প্রতিটি গলি, প্রতিটি রাস্তা পুরুষ, নারী আর তরুণ- তরুণীতে পরিপূর্ণ। আর কোথাও তাদের যাওয়ার নেই।

হামাস বলছে, উত্তর গাজার ১১ লাখ লোকের চার লাখ গত ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সালাহ আল-দিন সড়কের দক্ষিণ দিকে চলে গেছে। ইসরায়েল বাসিন্দাদের উত্তর গাজা ছেড়ে যাওয়ার নির্দেশ দেয়। অবরুদ্ধ গাজায় এরপরই মানুষ এলাকা ছাড়তে শুরু করে।

বিবিসির সাংবাদিক রুশদি আবু আলুওফ উত্তর গাজা ছেড়ে যাওয়া বাসিন্দাদের সঙ্গে ছিলেন। সঙ্গে ছিলেন তার স্ত্রী, তিন সন্তান, আর দুইদিনের সমপরিমাণ খাবার।  

ইসরায়েলে হামাসের বন্দুকধারীরা হামলা চালিয়ে ১৩শ মানুষকে হত্যার পর গাজায় ইসরায়েল পাল্টা বোমাবর্ষণ শুরু করে।

ইসরায়েলের এই চলমান হামলা ও সম্ভাব্য অভিযান সত্ত্বেও হামাস গাজাবাসীকে তাদের অবস্থানে থাকার নির্দেশ দেয়। যা অনেক মানুষ মেনে নেয়নি।

অবরুদ্ধ এই সংকীর্ণ উপত্যকা পৃথিবী থেকে এখন বিচ্ছিন্ন, যেখানে বিকল্প অতি সীমিত। নিরাপত্তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। এর মধ্যেই গাজার উত্তরাঞ্চল ছেড়ে খান ইউনিসে বাসিন্দারা জমা হচ্ছে।

বাসিন্দাদের অনেকেই ইসরায়েলিদের বোমায় তাদের বাড়িঘর হারিয়েছে। অনেকে স্বজন হারিয়েছেন। সবাই ভীত। জড়ো হওয়া বাসিন্দারা জানেন না পরে কী হবে। সব মিলিয়ে তাদের সামনে অনিশ্চিত এক সময়।

খান ইউনিসে এমনিতেই চার লাখ লোকের বাস। উত্তরের পাশাপাশি পূর্ব থেকে আসা লোকে রাতারাতি এই শহরের জনসংখ্যা এক মিলিয়নের বেশি হয়ে গেছে। পূর্ব থেকে আসা লোকেরা ২০১৪ সালের যুদ্ধে ভয়াবহভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলেন।

এখন খান ইউনিস শহরে আলাদাভাবে প্রত্যেকের জন্য আশ্রয়, খাবার দরকার। কেউ জানে না কত সময় ধরে এভাবে থাকতে হবে।  

শহরটির সীমিত সম্পদ দ্রুত ফুরিয়ে যাচ্ছে। এটি এমন এক শহর যা ইতোমধ্যেই নিঃশেষ হয়ে গিয়েছিল। আর এখন জনস্রোত এতোটাই বড় আকার নিয়েছে যে সবকিছু ভেঙে পড়তে শুরু হয়েছে।

এখানকার প্রধান হাসপাতালটি আগে থেকেই প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের অভাবে ভুগছিল। এখন এখানে শুধু অসুস্থ ও আহতরাই আসছেন না, বরং হাসপাতালটি উত্তরাঞ্চল থেকে আসা মানুষগুলোর আশ্রয়স্থল হয়ে উঠেছে।

বাস্তুচ্যুত এই মানুষেরা হাসপাতালের করিডোরে লাইন ধরে অপেক্ষা করছেন। আর চিকিৎসকরা ইসরায়েলি বোমার আঘাতে আহত নতুন এই মানুষদের সেবায় কাজ করছেন।

তাদের আহাজারি আর প্রার্থনার শব্দে ভারী হয়ে পড়েছে আশেপাশের বাতাস। এখানে আসার জন্য আসলে কাউকে দোষ দেওয়া যায় না।

কারণ যুদ্ধের সময়ে হাসপাতালগুলো আন্তর্জাতিক আইন দ্বারা সুরক্ষিত সবচেয়ে নিরাপদ স্থানগুলোর মধ্যে একটি। এমন কিছু ব্যবস্থার কারণে হাসপাতালের এই আহত মানুষগুলো সম্ভবত ভাগ্যবান, অন্তত এখনকার মতো ভাগ্যবান বলাই যায়।

চিকিৎসকরা বলছেন যে, নতুন হতাহতের স্রোত সামাল দেওয়ার মতো তাদের কাছে প্রায় কিছুই নেই।

রোগীদের জন্য দিনে জনপ্রতি তিনশ মিলিলিটার পানি সরবরাহ করা হয়। শরণার্থীরা তার কিছুই পায় না।

তবে খান ইউনিসের বাসিন্দারা নতুন আসা এই মানুষদের সাদরে গ্রহণ করেছেন। খান ইউনিস আগে থেকেই বেশ ঘনবসতি এলাকা অর্থাৎ অনেক মানুষ অল্প জায়গায় বসবাস করতেন। এখন নতুনরা আসায় তারা রীতিমতো ঠাসাঠাসি করে থাকছেন।

সেখানে ছোট ছোট ফ্ল্যাটগুলো ৫০ থেকে ৬০ জন মানুষের আশ্রয়স্থল হয়ে উঠেছে। কেউ এভাবে বেশি দিন বাঁচতে পারে না।

বিবিসির এই সাংবাদিক বলছেন, আমার পরিবার এখন অন্য আরও চারজনের সাথে দুটি ছোট বেডরুমের একটি ফ্ল্যাটে ভাগাভাগি করে থাকছে। আমরা অন্তত কয়েক মিটারের মতো ব্যক্তিগত স্থান পেয়েছি। এজন্য আমরা নিজেদের ভাগ্যবান মনে করি।

শহরজুড়ে থাকা স্কুলগুলো, যুদ্ধ থেকে ‘নিরাপদ’ স্থান বলে বিবেচিত। এই স্কুলগুলো অসংখ্য পরিবারে পরিপূর্ণ – এসব মানুষের সংখ্যা হাজার হাজার, নিশ্চিতভাবে কে জানে? হয়তো গুনেও শেষ করা যাবে না।

জাতিসংঘের ত্রাণ বিষয়ক সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএর পরিচালিত একটি স্কুলের, প্রতিটি শ্রেণীকক্ষ কানায় কানায় পূর্ণ, প্রতিটি বারান্দার জায়গা লাইন ধরে মানুষের কাপড় ঝোলানো।

মা-দাদিরা উঠোনে না হলে পার্কের বেঞ্চে রান্না করছেন কারণ তাদের ক্ষুধার্ত শিশুরা অধৈর্য হয়ে অপেক্ষা করছে।

কিন্তু যখন আর কোনো জায়গা থাকে না এবং আসলেই কোনো জায়গা থাকে না – তখন এই মানুষগুলো অনিবার্যভাবে রাস্তায় ছিটকে পড়ে।

গাজার এই শহরের অলিগলি এবং আন্ডারপাসগুলো মানুষে মানুষে ছেয়ে গেছে। ধুলা, ময়লা আর ধ্বংসস্তূপের মধ্যে এই মানুষগুলো জীবনযাপন করছে, ঘুমাচ্ছে।

তারা অপেক্ষা করছে আরও ভালো কিছুর জন্য, যে অপেক্ষার প্রহর হয়তো কখনোই ফুরোবে না।

এই শহরে এখন খাদ্য সীমিত, জ্বালানী সীমিত, দোকানপাটে কোথাও কোনো পানি নেই। পানির স্টেশনগুলোই একমাত্র ভরসা, সব মিলিয়ে এক বিপর্যয়কর পরিস্থিতি।

আর এই শহর যে হামলা থেকে নিরাপদ, সেটাও বলা যাবে না। এখানেও নিয়মিত বোমা হামলা হচ্ছে। পালিয়ে আসা মানুষগুলো এখনও একটি যুদ্ধক্ষেত্রেই আছে। ধসে পড়া ভবন ও আবর্জনার স্তূপ রাস্তায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে।

গাজা থেকে বেরিয়ে আসার একমাত্র বিকল্প হলো মিশরের রাফাহ সীমান্ত দিয়ে ওই পারে যাওয়া, কিন্তু ওই রাফাহ ক্রসিংও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

কায়রো জানে যে, ওই সীমানা খুলে দিলে নতুন এক মানবিক বিপর্যয়ের সূচনা হবে। রাফাহ থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে অন্তত ১০ লাখ উদ্বাস্তু গাজাবাসী এখন অপেক্ষায় আছে। সীমানা একবার খুলে দিলে এখানে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হবে। গাজার বিদেশি পাসপোর্টধারী অনেকে রাফাহ সীমান্তে জড়ো হয়েছেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৫৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৬, ২০২৩
আরএইচ 



[ad_2]
Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *