পানিতে তৈরি হচ্ছে ১৪০০ ফুটের বিশাল মণ্ডপ Somoybulletin

[ad_1]

রাজবাড়ী: রাজবাড়ী জেলার বালিয়াকান্দি উপজেলার আলোকদিয়া গ্রামে পুকুরের জলের ওপরে ১০ হাজার বাঁশ, ৩ টন লোহা ও লক্ষাধিক মণ কাঠ দিয়ে তৈরি হচ্ছে এক হাজার ৪০০ ফুটের বিশাল মণ্ডপ। থাকছো প্রতিমাসহ ৪ শতাধিক দেব দেবীর প্রতিমা প্রদর্শন।

তৈরি করা হয়েছে বিশাল আকৃতির শিব দেবতাসহ হিন্দু ধর্মের কাহিনি অবলম্বনে বিভিন্ন দেব-দেবীর মূর্তি।  

দেশ ও দেশের বাহিরে থেকে আসবেন কয়েক লক্ষাধিক ভক্ত ও দর্শনার্থী। প্রায় কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এ বিশাল কর্মযজ্ঞের আয়োজনে চলছে এখন শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি।

দেবী দুর্গার আগমন উপলক্ষে এই ব্যস্ততা চলবে বৃহস্পতিবার (১৯ অক্টোবর) ৬ষ্ঠী পূজার আগ মুহূর্ত পর্যন্ত। আয়োজকদের দাবি এটিই দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মধ্যে সবচেয়ে বড় ও ভিন্নধর্মী দূর্গাপূজার আয়োজন।

শরতের আগমনের সঙ্গে আগমন ঘটবে দেবী দুর্গার। দেবীর আর্শীবাদক্ষণ কে ঘিরে উৎসবের আমেজ সনাতন ধর্মালম্বীদের মধ্যে। প্রতিমাকে সৌন্দর্যে সুসজ্জিত করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন কারিগরেরা। তাদের প্রত্যাশা দেবীর আগমনে শান্তি ছড়িয়ে পরবে সারাবিশ্বে।

জানা গেছে, বালিয়াকান্দির ব্যতিক্রমী এই পূজায় বিশেষ আকর্ষণ হিসেবে তৈরি করা করা হয়েছে পুকুরের জলের ওপরে বিশাল আকৃতির ১০ হাজার বাঁশ দিয়ে প্রায় এক একর জমির ওপরে মণ্ডপ। যা গত ৪ মাস ধরে দিনরাত পরিশ্রম করে তৈরি করছেন শতাধিক শ্রমিক। মন্দিরের প্রতিটি আলাদা আলাদা স্তরে থাকবে দর্শনার্থীদের জন্য হিন্দু ধর্মের বিভিন্ন কাহিনীর অবলম্বনে ৪০০ দেব-দেবীর প্রতিমা প্রদর্শনী। যা চলবে পূজার দশমী শেষে লক্ষ্মী পূজার দিন পর্যন্ত। এই আয়োজনে খুশি স্থানীয় সনাতন ধর্মের মানুষেরা। প্রতি বছরের ন্যায় এবারো তারা মেতে উঠবে দুর্গা পূজার আনন্দ উল্লাসে।

1697441210 738 পানিতে তৈরি হচ্ছে ১৪০০ ফুটের বিশাল মণ্ডপ Somoybulletinপ্রায় দুই যুগ ধরে আয়োজিত বালিয়াকান্দির এই ব্যতিক্রমী দুর্গাপূজায় মায়ের সেবায় নিজেকে বিলিয়ে দেন ভক্তরা। ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে আনন্দ ভাগাভাগি করে নেন সকল ধর্মের মানুষ। সনাতন ধর্মের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় এই দুর্গাপূজার উৎসবে সাধারণ মানুষের জান মালের নিরাপত্তায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন ও নিরাপত্তা প্রদান করে স্থানীয় প্রশাসন।

স্থানীয় প্রশাসন ও পূজা পরিষদের তথ্যমতে, চলতি বছর রাজবাড়ী জেলার ৫টি উপজেলায় মোট ৪৪৬টি পূজা মণ্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। দুর্গা দুর্গাতিনাশিনী-দশভূজা দেবী দুর্গা এবার আসছেন ঘোটকে আর বিদায় ও নেবেন ঘোটকে। মায়ের আগমনে ঘুচে যাবে সকলের দুঃখ বেদনা এমনটিই কামনা করছেন হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা।

ভিন্নধর্মী এই আয়োজনের আয়োজক কমিটি গ্রাম জামালপুর আলোকদিয়া সার্বজনীন দুর্গা মন্দিরের কমিটির সূত্রে জানা গেছে, মণ্ডপের ভেতরে মেট্রোরেলের মধ্যে থাকবে বিভিন্ন সময়ে পৃথিবীতে জন্ম নেওয়া সনাতন ধর্মের ২০ জন মনীষীর প্রতিমা। মণ্ডপের মধ্যে প্রতিমা দিয়ে ফুটিয়ে তোলা হবে সনাতন ধর্মের বিভিন্ন বিষয়। দক্ষযজ্ঞ, সতীর দেহ ত্যাগ, সতীর দেহ থেকে ৫১টি তীর্থ ক্ষেত্র, শ্রীকৃষ্ণের কুঞ্জবন ইত্যাদি।

1697441210 118 পানিতে তৈরি হচ্ছে ১৪০০ ফুটের বিশাল মণ্ডপ Somoybulletinসরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, পানির ওপর বাঁশ দিয়ে ৬টি মণ্ডপ তৈরি করা হয়েছে। বেশ কয়েকটি মণ্ডপে স্থাপন করা হয়েছে প্রতিমা। মণ্ডপে প্রবেশ করে ১৪০০ ফুট হেঁটে শেষ করতে হবে প্রতিমা দর্শন। মণ্ডপে প্রবেশের সময় চোখে পড়বে শিবের বিশালাকৃতির মূর্তি। এরপর মূল প্রবেশ পথ দিয়ে এগিয়ে গেলে দেখা যাবে বড় মন্দির।

সেখানে তুলে ধরা হয়েছে দক্ষযজ্ঞের কাহিনি। দক্ষযজ্ঞ থেকে শুরু করে সতীর পুনর্জন্ম ও ৫১টি শক্তিপীঠের কাহিনি সাজানো হয়েছে মূর্তিগুলো দিয়ে। এরপর পুকুরের পানির ওপর তৈরি করা হয়েছে ওভারব্রিজ। ব্রিজের দুই পাশে পানির ফোয়ারার মধ্য দিয়ে সামনের মণ্ডপে মেট্রোরেলের ভেতরে রাখা হয়েছে ২০ জন মনীষীর প্রতিমা। সেগুলো দেখে সামনে এগিয়ে গেলে দেখা যাবে সনাতন ধর্মের আরেক কাহিনি। সেটি শেষ করে পরের মণ্ডপে দেখা যাবে কুঞ্জবনে শ্রীকৃষ্ণের শৈশব। এরপর দেবীর ঘটকে বিদায়ের আরেকটি দৃশ্য। শেষে মূল পূজা মণ্ডপ।

1697441211 852 পানিতে তৈরি হচ্ছে ১৪০০ ফুটের বিশাল মণ্ডপ Somoybulletinপ্রতিমা তৈরির কারিগর সনজিত কুমার পাল বাংলানিউজকে জানান, গত ৪ মাস ধরে আমরা এখানে কাজ করছি। মহাষষ্ঠীর দিনের আগে শেষ হবে এই কাজ। আমাদের এই আয়োজন হবে দেশসেরা। বাঁশ দিয়ে নির্মিত মন্দিরের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। মণ্ডপে সরকারের উন্নয়ন চিত্র তুলে ধরা হবে। যেখানে থাকবে মেট্রোরেল, পানির ফোয়ারা।

বাঁশের কাঠামো দিয়ে মণ্ডপ তৈরির কারিগর জ্ঞানেন্দ্র নাথ বলেন, আমরা প্রতিবছর ব্যতিক্রমী আয়োজন করে থাকি। এবার ১০ হাজার বাঁশ, কয়েক লাখ মণ কাঠ, ৩ টনের বেশি লোহা দিয়ে ১৪০০ ফুটের মণ্ডপ তৈরির কাজ করছি। প্রতিদিন ৫০ জন শ্রমিক দিন রাত ধরে কাজ করছে এখানে।

আলোকদিয়া দুর্গাপূজা কমিটির সাধারণ সম্পাদক গোবিন্দ বিশ্বাস জানান, আমরা প্রতি বছর এখানে ব্যতিক্রমী আয়োজন করি। করোনার পর তিন বছর বড় পরিসরে এই আয়োজন করতে পারিনি। এ বছর আবার শুরু করেছি। এখানে পূজা দেখতে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে দর্শনার্থীরা আসেন। এবারো কয়েক লাখ দর্শনার্থীর সমাগম হবে। ব্যতিক্রমী এই আয়োজনে আমাদের বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে। এরই মধ্যে মণ্ডপ তৈরির ৮০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। নির্দিষ্ট সময়ে কাজ শেষ করতে ৫০ জন শ্রমিক কাজ করছে। প্রতিমার কাজও শেষের দিকে। ৬টি মণ্ডপে সনাতন ধর্মের কাহিনি ফুটিয়ে তোলা হবে। ভেতরে সরকারের উন্নয়ন চিত্র তুলে ধরা হবে। যেখানে মেট্রোরেলের ভেতরে মাটির তৈরি মনীষীদের প্রতিমা রাখা হয়েছে।  

1697441211 587 পানিতে তৈরি হচ্ছে ১৪০০ ফুটের বিশাল মণ্ডপ Somoybulletinরাজবাড়ীর সহকারী পুলিশ সুপার (পাংশা সার্কেল) সুমন কুমার সাহা বাংলানিউজকে জানান, রাজবাড়ীতে এ বছর ৪৪৬টি মণ্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। প্রতিটি মণ্ডপে আমাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে। তবে বালিয়াকান্দি উপজেলার জামালপুর ইউনিয়নের আলোকদিয়া গ্রামে বড় পরিসরে দুর্গাপূজা হবে। সেখানে আমাদের তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে। পোশাক এবং সাদা পোশাকে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন থাকবে।

রাজবাড়ী জেলা প্রশাসক আবু কায়সার খান বাংলানিউজকে জানান, আসন্ন শারদীয় দুর্গোৎসবে রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দির আলোকদিয়া গ্রামের মন্দির কমিটি ব্যতিক্রমী আয়োজন করেছে। তাদের আয়োজন সম্পর্কে আমি অবগত। সনাতন ধর্মের কয়েকটি দিক সেখানে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। যেখান থেকে মানুষ সনাতন ধর্ম সম্পর্কে জানতে পারবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৩২১ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৬, ২০২৩
এসএম



[ad_2]
Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *