বাড়ি নেওয়ার কথা বলে প্যারালাইজড বাবাকে Somoybulletin

[ad_1]

কুমিল্লা: ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার বড় গোবিন্দপুর স্টেশন এলাকায় অনাহারে দিন কাটাচ্ছিলেন সত্তরোর্ধ্ব প্যারালাইসিস রোগে আক্রান্ত এক বৃদ্ধ (৭০)।  

কেউ জানতে চাইলে তিনি বলতেন, আমার ছেলেরা এসে আমাকে নিয়ে যাবে।

আমাকে এখানে বসে থাকতে বলেছে, তারা আসবে।  

গত ৬ অক্টোবর ভোর থেকে শনিবার পর্যন্ত রোদ-বৃষ্টির মধ্যে এভাবে পড়েছিলে সাদা চুল-দাড়ির ওই বৃদ্ধ। পাশে এক ভাঙা হুইল চেয়ার। বেশ কয়েকদিন অযত্ন-অবহেলায় পাগল বেশে রূপ নিয়েছিল তার।  

প্যারালাইসিস রোগে আক্রান্ত হওয়ায় বাম হাত ও পা তেমন নড়াচড়া করতে না পেরে একই স্থানে মল-মূত্র ত্যাগ করতে বাধ্য হন এই বৃদ্ধ। দেখতে দেখতে এক সপ্তাহ কেটে গেলেও খোঁজ নিতে আসেননি তার সন্তানেরা।  

ওই বৃদ্ধ জানিয়েছেন, তার বাড়ি নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার ছয়ানী ইউনিয়নের ভবানী জীবনপুরের নয়নপুর গ্রামে। তিন ছেলে এক মেয়ের বাবা। বড় ছেলে হারুন, মেজ ছেলে মঈন, ছোট ছেলে জসিম উদ্দিন। সবাই চাকরি করেন।

তিনি বলেন, আমাকে হাসপাতাল থেকে বাড়ি নিয়ে যাওয়ার কথা বলে রাতে গাড়ি থেকে নামিয়ে এখানে রেখে যায় আমার ছেলে হারুনসহ আরও ২জন।  

স্থানীয়দের মধ্যে অধিকাংশরাই এক নজর দেখে বাড়তি ঝামেলা মনে করে এড়িয়ে যান। আবার কারও মন কাঁদলেও আইনি ঝামেলার ভয়ে দূরে ছিলেন।  

অবশেষে সেই বৃদ্ধের পাশে এসে দাঁড়ান দেবিদ্বার উপজেলার বরকামতা ইউনিয়নের বাসিন্দা রাইহানা ইসলাম রুনা। তিনি বিভিন্ন জায়গায় যোগাযোগ করে ব্যর্থ হলে সাংবাদিকদের জানান।

বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) তাপস শীলকে জানালে তিনি বৃদ্ধকে হাসপাতালে নিয়ে আসেন। বর্তমানে তার চিকিৎসা চলছে সেখানে।  

রাইহানা ইসলাম রুনা বলেন, গত ২৯ সেপ্টেম্বর আমার বাবা মারা গেছেন। গত ৮ অক্টোবর সকালে আমি মহাসড়কের গোবিন্দপুর স্টেশনে নেমে গ্রামের বাড়িতে যাওয়ার জন্য অটোরিকশায় উঠব, তখন এই বৃদ্ধ লোকটিকে দেখি। আমার সদ্য প্রয়াত বাবার কথা মনে পড়ে আবেগ ধরে রাখতে পারিনি। ওই বৃদ্ধ লোকটির সঙ্গে কথা বলার পর জানতে পারি, ৬ অক্টোবর রাতে ওনার ছেলেরা নাকি হাসপাতাল থেকে বাড়ি নেওয়ার কথা বলে হুইল চেয়ারে বসিয়ে এখানে ফেলে যায়। তাকে সেবা দিতে আমি চান্দিনা থানা পুলিশের কাছে, উপজেলা সমাজ সেবা কার্যালয়ে গিয়ে যোগাযোগ করি। কিন্তু আমার কথা কেউ কানে নেয়নি। এক সপ্তাহ ধরে বিভিন্ন স্থানে দৌড়ঝাঁপ করেও কোনো কূলকিনারা করতে না পেরে অবশেষে সাংবাদিকদের বিষয়টি জানাই।  

তিনি বলেন, শনিবার রাতে ১০টায় ইএনও তাপস শীল গোবিন্দপুর স্টেশনে গিয়ে বিস্তারিত শুনেন। গাড়িযোগে তাকে হাসপাতালে নিয়ে আসেন ইউএনও। হাসপাতালের রেজিস্ট্রারে অভিভাবকের স্থানে নাম লেখান ইউএনও নিজেই।  

উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. আরিফুর রহমান বলেন, আমরা ওই বৃদ্ধের চিকিৎসাসেবা চালিয়ে যাচ্ছি। ওই বৃদ্ধের বাম হাত ও বাম পা প্যারালাইসিস রোগে আক্রান্ত। বেশ কয়েকদিন অবহেলায় থাকায় এবং বার্ধক্যজনিত কারণে কিছুটা মানসিক অস্থিরতা রয়েছে। আরও কোনো সমস্যা আছে কি না তা পর্যবেক্ষণ করছি।

রোববার চান্দিনা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) তাপস শীল বলেন, ঘটনাটি আমি শোনার সঙ্গে সঙ্গে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে যাই। মহাসড়কের গোবিন্দপুর স্টেশনের আশরা রাস্তার মাথা থেকে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছি। তার নাম ও ঠিকানা যাচাই-বাছাই করে পরিবারের লোকজনদের খুঁজে বের করার চেষ্টা করছি।  

বাংলাদেশ সময়: ১১২৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৬, ২০২৩
এসএএইচ 



[ad_2]
Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *