[ad_1]
কলকাতা: নোবেল পুরস্কারের জন্য এক নয়, একাধিক বার মনোনীত হয়েছিল তাঁর নাম৷ কিন্তু কোনওদিনই নোবেল শান্তি পুরস্কার পাননি মহাত্মা গান্ধি। অহিংস আন্দোলনের জন্য বিশ্ববন্দিত মহাত্মা গান্ধিকে কেন একবারও নোবেল শান্তি পুরস্কার দেওয়া হয়নি, গান্ধিজির জন্মদিন উপলক্ষে সেই ইতিহাস এবং অজানা তথ্য তুলে ধরল নোবেল পুরস্কারের দায়িত্ব প্রাপ্ত প্যানেল
সোশ্যাল মিডিয়া এক্স-এ নোবেল প্রাইজ প্যানেল জানিয়েছে, ১৯৩৭, ১৯৩৮, ১৯৩৯, ১৯৪৭ এমন কী মৃত্যুর কয়েকদিন আগে ১৯৪৮ সালেও নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য মহাত্মা গান্ধির নাম মনোনীত করা হয়েছিল৷ কিন্তু একবারো তাঁর হাতে পুরস্কার ওঠেনি৷ ১৯৪৮ সালে হত্যার আগে গান্ধিজিকে শান্তি পুরস্কার না দেওয়ার সিদ্ধান্তও বড় ভুল বলে মনে করেন অনেকে৷
নোবেল প্রাইজ প্যানেলের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৩৭ সালে নরওয়ের সংসদের এক সদস্য ওলে কোলবজর্নসেন প্রথমবার নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য মহাত্মা গান্ধির নাম প্রস্তাব করেন৷ সম্ভাব্য পুরস্কার প্রাপক হিসেবে চূড়ান্ত ১৩ জনের তালিকাতেও নাম ছিল মহাত্মা গান্ধির৷ কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাঁর হাতে ওঠেনি নোবেল শান্তি পুরস্কার৷
কারণ পুরস্কার প্রাপকের নাম বেছে নেয় যে প্যানেল, সেখানে মহাত্মা গান্ধির সমালোচকদের মত ছিল, গান্ধিজির বেশ কিছু অহিংস আন্দোলনই পরবর্তী সময়ে হিংসাত্মক আন্দোলনের রূপ নিয়েছে৷ উদাহরণ হিসেবে ব্রিটিশ শাসিত ভারতে ১৯২০-২১ সালে অসহযোগ আন্দোলন চলাকালীন গোরক্ষপুরে বেশ কয়েকজন পুলিশকর্মীকে হত্যা করে উন্মত্ত জনতা৷
আবার নোবেল শান্তি পুরস্কার প্যানেলের কয়েকজন সদস্যের মত ছিল, গান্ধিজির নীতি বা মতাদর্শ ভারতীয় পরিস্থিতির জন্য উপযুক্ত ছিল, কিন্তু তা গোটা বিশ্বের জন্য প্রযোজ্য নয়৷ নোবেল কমিটির পরামর্শদাতা জেকব এস ওর্ম মুলার দাবি করেছিলেন, দক্ষিণ আফ্রিকাতেও গান্ধিজির দীর্ঘ অহিংস আন্দোলনও মূলত ছিল ভারতীয়দের জন্যই৷
আরও পড়ুন: উত্তরবঙ্গজুড়ে ভূমিকম্প, কাঁপল প্রায় সব জেলাই! রিখটার স্কেলে মাত্রা ৫.৩
১৯৩৮ এবং ১৯৩৯ সালে ফের মহাত্মা গান্ধির নাম নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য মনোনীত করা হয়৷ কিন্তু দু বারই তাঁর নাম বাদ দেয় নোবেল কমিটি৷ এর প্রায় দশ বছর পরে ১৯৪৭ সালে নোবেল কমিটির বেছে নেওয়া ছ জনের তালিকায় নাম ছিল মহাত্মা গান্ধির৷ কিন্তু সেই সময় ভারত এবং পাকিস্তান দ্বন্দ্বের পরিবেশে পাঁচ জনের কমিটির মধ্যে তিন জনই মহাত্মা গান্ধিকে নোবেল শান্তি পুরস্কার দেওয়ার বিপক্ষে ছিলেন৷
এর পরের বছর অর্থাৎ ১৯৪৮ সালের ৩০ জানুয়ারি খুন হন মহাত্মা গান্ধি৷ এর ঠিক দু দিন পরই ছিল নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য নাম প্রস্তাব করার শেষ দিন৷ দেখা যায়, মহাত্মা গান্ধিকে শান্তি পুরস্কার দেওয়ার প্রস্তাব সহ ছটি চিঠি নোবেল কমিটির কাছে জমা পড়েছে৷ যাঁরা মহাত্মা গান্ধির নাম প্রস্তাব করেছিলেন, তাঁদের মধ্যে বেশ কয়েকজন নোবেল শান্তি পুরস্কার প্রাপকও ছিলেন৷
কিন্তু সেই সময় মরণোত্তর নোবেল শান্তি পুরস্কার কেউ পাননি৷ নোবেল ফাউন্ডেশনের তৎকালীন বিধি অনুযায়ী, নির্দিষ্ট কয়েকটি ক্ষেত্রেই মরণোত্তর নোবেল শান্তি পুরস্কার দেওয়ার সুযোগ ছিল৷
নরওয়ের নোবেল ইনস্টিটিউট-এর ডিরেক্টর অগাস্ট স্কোউ এ নিয়ে সুইডেনের পুরস্কার প্রদানকারী কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের মতামত চান৷ তারা জানায়, মহাত্মা গান্ধির মৃত্যুর আগে যদি তাঁকে মরণোত্তর নোবেল শান্তি পুরস্কার দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিেয় ফেলা হত, তা হলে কিছু বলার ছিল না৷ কিন্তু মৃত্যুর ঠিক পরে তাঁকে নোবেল শান্তি পুরস্কার দেওয়ার সিদ্ধান্ত ঠিক হবে না বলেই মত দেয় ওই প্রতিষ্ঠানগুলি৷ শেষ পর্যন্ত ১৯৪৮ সালে কাউকেই নোবেল শান্তি পুরস্কার দেওয়া হয়নি৷ কারণ নরওয়ের নোবেল কমিটির মনে হয়েছিল, ওই সময় এই পুরস্কারের যোগ্য প্রাপক কেউ ছিলেন না৷ অনেকেই মনে করেন মহাত্মা গান্ধির নাম নোবেল প্রাপকদের তালিকায় থাকা উচিত ছিল, সম্ভবত সেই আবেগকে সম্মান দিয়েই নোবেল শান্তি পুরস্কার প্রাপকদের তালিকায় একটি জায়গা মহাত্মা গান্ধিকে সম্মান জানিয়েই ফাঁকা রেখে দেওয়া হয়েছিল৷
১৯৬০ সাল পর্যন্ত কেবলমাত্র আমেরিকান এবং ইউরোপিয়ানদেরই নোবেল শান্তি পুরস্কার দেওয়া হত৷ নোবেল পুরস্কার দেওয়ার সঙ্গে যুক্ত প্যানেলও জানায়, মহাত্মা গান্ধি অতীতের নোবেল পুরস্কার জয়ীদের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা৷ তিনি কোনও রাজনীতিবিদ অথবা আন্তর্জাতিক আইন নিয়ে কাজ করা ব্যক্তিত্ব নন৷ আবার মানবিকতার জন্য ত্রাণ কাজও করেন৷ তিনি নতুন এক ধরনের নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ীদের ঘরানা তৈরি করবেন৷
নিউজ১৮ বাংলায় সবার আগে পড়ুন ব্রেকিং নিউজ। থাকছে দৈনিক টাটকা খবর, খবরের লাইভ আপডেট। সবচেয়ে ভরসাযোগ্য বাংলা খবর পড়ুন নিউজ১৮ বাংলার ওয়েবসাইটে।
Tags: Mahatma Gnadhi
Source link