শ্রমিকদের সামাজিক নিরাপত্তায় প্রয়োজন Somoybulletin

[ad_1]

ঢাকা: একটা বয়সে এসে শ্রমিকরা কর্মক্ষমতা হারাচ্ছে। ফলে তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে এক প্রকার শঙ্কা দেখা দিচ্ছে।

এই শঙ্কা দূর করতে তথ্য ঘাটতি বা যথাযথ ডাটা না থাকায় শ্রমিকদের জন্য সামাজিক সুরক্ষা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।

পাশাপাশি পেশাগত কারণে শ্রমিকরা যে অসুস্থ হচ্ছে, সে বিষয়ে প্রতিষ্ঠানগুলো এবং সরকার ঠিকমতো সুরক্ষা দিতে পারছে না। একই সঙ্গে নিম্নতম মজুরির বিষয়ে শ্রমিক ও মালিক প্রতিনিধিদের এবং সরকারের অদক্ষতা কাজ করছে। যেকারণে বাংলাদেশের শ্রমিকদের সুরক্ষার বিষটি সংবিধানে থাকলেও এটি বাস্তবায়ন হচ্ছে না বলে মনে করছেন বিশিষ্টজনরা।

তাই শ্রমিকদের সামাজিক নিরাপত্তায় সমন্বিত উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন বলে মনে করছেন তারা।

শনিবার (১৪ অক্টোবর) রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিকে ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া লিমিটেডের (ইডব্লিউএমজিএল) কনফারেন্স হলে ‘শ্রমিকের সামাজিক সুরক্ষা: বাংলাদেশের শ্রম খাতের সুষম উন্নয়ন’ শীর্ষক এক গোলটেবিল আলোচনা সভায় এমন মত দেন বক্তারা। গোলটেবিল আলোচনা সভাটি যৌথভাবে আয়োজন করে দৈনিক কালের কণ্ঠ ও জিআইজেড।

শ্রমিকের সুরক্ষার বিষয়ে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের শ্রম অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব তৌফিকুল আরিফ বলেন, সামাজিক সুরক্ষা বলতে আমরা বুঝি একটা দেশের সকল জনগণের সুরক্ষার বিষয়টি। আর এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে শ্রমিকের সুরক্ষার বিষয়টি। আমাদের দেশের সামাজিক ও অর্থনীতির কাঠামো হিসেবে একজন শ্রমিক কী পরিমাণ সামাজিক সুরক্ষা পাবে, কতটুকু আমরা করেছি আর কতটুকু করা যাবে—এ বিষয়গুলো যদি আলোচনার মাধ্যমে একমত হতে পারি, তাহলে যারা নীতিনির্ধারক আছেন তাদের সামনে তুলে ধরা যেতে পারে। আমাদের শ্রম আইনে শ্রমিকের সুরক্ষার বিষয়ে অনেক কিছুই আছে।

নিম্নতম মজুরির বিষয়ে শ্রমিক ও মালিক প্রতিনিধিদের এবং সরকারের অদক্ষতা আছে উল্লেখ করে শ্রম অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব বলেন, যখন ৪৩টি সেক্টরে নিম্নতম মজুরি পাঁচ বছর থাকবে। প্রতি পাঁচ বছর পর পর এটাকে যখন পুনঃনির্ধারণ করতে না পারা যায়, সেটি একটি অদক্ষতার বিষয় বলে আমি মনে করছি। তবে বাস্তবতার বিষয় হলো, এ নিয়ে যারা কাজ করেন, তাদের এককভাবে সিদ্ধান্ত দেওয়ার সুযোগ নেই। মালিক প্রতিনিধি ও শ্রমিক প্রতিনিধির সঙ্গে আলোচনা করতে হয়। নিম্নতম মজুরি পুনঃনির্ধারণ করতে যখন কোনো শ্রমিক প্রতিনিধি বা মালিক প্রতিনিধির নাম চাওয়া হয় তখন তা এক বছরেও পাওয়া যায় না।

তথ্য ঘাটতির কারণে শ্রমিকদের জন্য সামাজিক সুরক্ষা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, রপ্তানিমুখী শিল্পের কর্মহীন হয়ে পড়া শ্রমিকদের, দুস্থ শ্রমিকদের জন্য যে সুরক্ষা কার্যক্রম এবং নীতিমালা নেওয়া হয়েছে, সেখানে বাস্তবিক অর্থে তথ্যের ঘাটতি থাকার কারণে যে সকল শ্রমিকদের আসলেই এই সহায়তার প্রয়োজন ছিল; তাদের আমরা তা প্রদান করতে পারিনি। যেখানে তিন মাস একজন শ্রমিককে তিন হাজার টাকা করে সহায়তা দেওয়ার কথা নীতিমালায় ছিল। যেখানে আমরা এ পর্যন্ত ১০ হাজার ৩৩১ জন শ্রমিককে সাড়ে ৯ কোটি টাকা দিতে পেরেছি। এ বছর আমাদের লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে ৫০ হাজার শ্রমিককে দেওয়া। কিন্তু তথ্য ঘাটতির কারণের পাশাপাশি কারখানাগুলোর মালিকেরা চায় না যেসব শ্রমিক চাকরি হারাচ্ছে তারা সহায়তা পাক। ফলে মালিকেরা শ্রমিকদের কোনো তথ্য না দেওয়াতে সরকার এই কাজগুলো বাস্তবায়ন করতে পারছে না।

রানা প্লাজা ও তাজরীন গার্মেন্টসের দুর্ঘটনায় যে ২ হাজার ১১৮ জন আহত শ্রমিক আছে, তাদের সরকার নিয়মিত চিকিৎসার খরচ দিয়ে আসছে বলেও জানান শ্রম অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব তৌফিকুল আরিফ।

একটা বয়সে শ্রমিকদের কর্মক্ষমতা হারানোর ফলে তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে যে শঙ্কা, সেটা দূরীকরণে নিশ্চিত ভবিষ্যৎ প্রদান করতে সরকার কাজ করছে উল্লেখ করে সোশাল প্রোটেকশন পলিসি সাপোর্ট ইউএনডিপি প্রোগ্রাম ম্যানেজার আমিনুল আরিফীন বলেন, গার্মেন্টসের যারা টেকনিক্যাল এক্সপার্ট তারা কিন্তু প্রতিমাসে নিজেকে নিলামে ওঠায়। তখন কিন্তু সে এমনও আছে যে মাসে চার লাখ টাকার উপর আয় করে। কিন্তু এই আয় সে অন্য চাকরিজীবীদের মতো দীর্ঘ সময় ধরে করতে পারে না। কারণ তার বয়স যখন ৩৫ এর বেশি হয়ে যায়, তখন কিন্তু সে তার আগের পরিশ্রম দিতে পারে না। তাই দেখা যায় একটা সময় তার আয়ের ক্ষেত্রে এক ধরনের অনিশ্চিয়তা দেখা দেয়। যদিও সে একটা বয়সে অনেক আয় করেছে। তারপরও তার ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তায় থাকে। তাই শ্রমিকের সুরক্ষার বিষয়টি নিয়ে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আর এই বিষটায় আমরা মূলত কাজ করতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছি।

পেশাগত কারণে শ্রমিকরা অসুস্থ হলে প্রতিষ্ঠানগুলো এবং সরকার সুরক্ষা দিতে পারছে না উল্লেখ করে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব হেলথ অ্যান্ড সায়েন্সের পেশাগত ও পরিবেশগত স্বাস্থ্য বিভাগের অধ্যাপক ড. মাহমুদ ফারুকী বলেন, শ্রমিকদের সামাজিক সুরক্ষা বিষয়টি বঙ্গবন্ধুর আমল থেকেই আমাদের সংবিধানেই যথাযথভাবে বলা ছিল। পাশাপাশি আমাদের গার্মেন্টস সেক্টরে দাতা সংস্থাগুলো কাজ করে যে একর্ড-এলায়েন্স তৈরি করেছিল। তার ফলে সেই সেক্টরে সামাজিক সুরক্ষার বিষটি অনেক উন্নত হয়েছে। তবে আমাদের শ্রমিকরা পেশাগত কারণে যে অসুস্থ হয়, সে বিষয়ে কিন্তু আমরা সুরক্ষা দিতে পারছি না। যেমন কর্মক্ষেত্রে বিভিন্ন রকম ধুলাবালির বা অস্বাস্থ্যগত পরিবেশের কারণে তারা অসুস্থ হচ্ছে। ফলে দেখা যায়, শ্রমিকরা সাধারণত ৩৫ বছরের পর আর কর্মক্ষমতা আগের মতো থাকে না।

শ্রমিকদের কর্মক্ষমতা শুষে নেওয়ার পর তারা যখন কর্মঅক্ষম হচ্ছে তখন তাদের সুরক্ষার বিষটি নিশ্চিত করা হচ্ছে না উল্লেখ করে একশন এইড বাংলাদেশের উইমেন রাইট ইকুইটির ম্যানেজার মরিয়ম নেসা বলেন, আমরা শ্রমিকদের নিয়ে যত কথা বলি সবই কিন্তু গার্মেন্টস সেক্টর নিয়ে কথা বলি বা উদাহরণ দেই। কিন্তু এছাড়া শ্রমিকদের অন্য যে সকল সেক্টর আছে সেখানে কিন্তু আমরা তেমন কোনো তথ্য জানি না। যেমন একজন কনস্ট্রাকশন লেভার কীভাবে তার কর্মের জন্য চুক্তি করছে, সে কতটা সেফটি নিয়ে কাজ করছে, তার কর্মক্ষেত্রে কী অসুবিধা আছে— এসব বিষয়ে কিন্তু আমাদের কাছে তথ্য কম। তবে গার্মেন্টস সেক্টরে যে নারীরা কাজ করে তাদের সুরক্ষার বিষয়টি আরও করুণ। পুরুষরা ৩৫ বছরের পর কর্মঅক্ষম হয়, সেখানে নারীরা আরও আগে হয়।

বাংলাদেশের শ্রমিকদের সুরক্ষার বিষটি সংবিধানে থাকলেও এটি বাস্তবায়ন হচ্ছে না বলে মনে করেন বিলস নির্বাহী কমিটির সম্পাদক সাকিল আখতার চৌধুরী। তিনি বলেন, আমাদের শ্রমিকদের সামাজিক, প্রাকৃতিক, অর্থনৈতিকভাবে সুরক্ষার জন্যই এই সুরক্ষার প্রয়োজন। এটা না হলে পরবর্তী জীবনে সে একটা অনিশ্চয়তায় পড়ে যায়। তাই আমাদের শ্রমিকদের যে সকল কারণে সামাজিক সুরক্ষা চাই এর প্রথমে আসে একজন শ্রমিকের পরবর্তী জীবনে চিকিৎসার বিষয়টি। আর এই সুরক্ষা চাওয়াটা কিন্তু তার কোনো অন্যায় নয়। কারন সে কিন্তু কর্মক্ষেত্র থেকেই অসুস্থ হয়েছে। তবে আমাদের দেশে শ্রমিকদের সুরক্ষার বিষটি সংবিধানে থাকলেও এটি বাস্তবায়ন হচ্ছে না।

সামাজির সুরক্ষার জন্য ইন্স্যুরেন্সের বিষটি জাতীয় পর্যায়ে বাস্তবায়ন করার চেষ্টা হচ্ছে জানিয়ে আইএলও-এর স্যোশাল প্রোটেকশনের ন্যাশনাল প্রোগ্রাম অফিসার ফারজানা রেজা বলেন, কর্মক্ষেত্রে কোনো শ্রমিক আহত বা নিহত হলে তাদের সুরক্ষার জন্য আমরা আইএলও-এর টু জিরো টু-এর মাধ্যমে ইনসুরেন্সের আয়তায় আনার চেষ্টা করছি। যেটা এখন আরএমজি সেক্টরে পাইলট পর্যায়ে আছে। সেখানে কোন শ্রমিক কর্মক্ষেত্রে নিহত হলে তার পরিবারকে সুরক্ষা দেব। পাশাপাশি পরবর্তীতে ইনসুরেন্সের বিষটি জাতীয় পর্যায়ে বাস্তবায়ন করার চেষ্টা হচ্ছে। সেখানে কাজ করা ব্যাক্তি বা বেকারদের জন্যও এই ইনসুরেন্সের আয়তায় আনার ব্যবস্থা করা হবে।

সামজিক সুরক্ষার বিষয়ে যথাযথ তথ্য বা ডাটার অনেক ঘাটতি আছে জানিয়ে বাংলাদেশ এমপ্লয়ার্স ফেডারেশনের মহাসচিব ফারুখ আহমেদ বলেন, সচেতন নাগরিক হিসেবে দেশের সবারই অধিকার আছে সামাজিক সুরক্ষা পাওয়া। তবে শ্রমিকদের ক্ষেত্রে এইটা আরও ভালোভাবে বাস্তবায়ন করার প্রয়োজন আছে। আমাদের টোটাল জনসংখ্যার প্রায় ১০ ভাগ প্রতিবন্দী ব্যক্তি আছে, যাদেরও সামাজিক সুরক্ষার প্রয়োজন আছে। ফলে নাগরিকদের সুরক্ষার বিষয়ে সরকার কাজ করছে। তারপরও বিষয়টি যেন আরও ত্বরান্বিত হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে সরকারের।  

সামাজিক সুরক্ষা আইনের খারাপ দিক ও রাষ্ট্রীয় এবং সামাজিকভাবে একটি শ্রমিককে সুরক্ষা দেওয়ার বিষয়ে আলোচনা করেছেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্টের সভাপতি রাজেকুজ্জামান রতন। তিনি বলেন, আমাদের শ্রম আইনের প্রথম খারাপ দিক হচ্ছে, ‘না’ দিয়ে শুরু করা। এখানে চারটা ‘না’ আছে। চারটা ‘না’ এর কারণে শ্রম আইন বাস্তবায়ন হচ্ছে না। শ্রম একটা সামাজিক প্রোডাক্ট। এখানে শ্রম কিছু লোক করে আর যার সুফল পায় পুরো সমাজ। কিন্তু সমাজ কি সেই শ্রমিকের যে প্রাপ্য বা সামাজিক সুরক্ষা সেটা কি ঠিকমতো দিচ্ছে?

তিনি বলেন, আমাদের শ্রম আইনে আছে একজন ‘ল্যাকটেটিং মা’ (বাচ্চাকে দুধ খাওয়ায়) সামাজিক সুরক্ষা পাবে। কিন্তু এটা পেতে তার আয় মাসে ৫ হাজার টাকার নিচে হতে হবে। তাহলে একজন কনস্ট্রাকশন খাতে কাজ করে এমন নারী প্রতিদিন যদি ২০০ টাকা করেও আয় করে তার মাসিক আয় কিন্তু ৬ হাজার টাকার উপরে থাকে। ফলে সেই নারীর সামাজিক সুরক্ষার প্রয়োজন থাকলেও, কিন্তু সে এই সুরক্ষার আয়তায় থাকছে না। যেটা সামাজিক সুরক্ষা আইনের একটা খারাপ দিক।

বাংলাদেশ সময়: ২২৫০ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৪, ২০২৩
ইএসএস/এমজেএফ



[ad_2]
Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *