[ad_1]
তেল আভিভ: প্রায় বছর পঞ্চাশ আগের ঘটনা। ১৯৭৩ সালের ৬ অক্টোবর উদযাপিত হচ্ছিল ইয়োম কিপ্পুর। ইহুদিদের পবিত্র দিন হিসেবে গণ্য হয় এই দিনটি। আর এমন পবিত্র দিনে আরব দেশগুলির জোট একাধিক আকস্মিক আক্রমণ চালায় ইজরায়েল অধিকৃত অঞ্চলগুলির উপর। শুরু হয়ে যায় ইয়োম কিপ্পুর যুদ্ধ!
যুদ্ধের দামামা বেজে যায়। আরব জোটের বিরুদ্ধে আক্রমণ করে বসে ইজরায়েল। এই যুদ্ধের অধিকাংশটাই গোলান হাইটস, সিনাই এবং ইজরায়েলের অধিকৃত অন্যান্য এলাকায়। ১৯৬৭ সালে ছয় দিনব্যাপী চলে এই যুদ্ধ। তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন যখন একটি বিশ্ব পারমাণবিক সতর্কতা জারি করেন, তখন ভূ-রাজনৈতিক অশান্তি একটি গুরুত্বপূর্ণ মাত্রায় পৌঁছে যায়।
আরও পড়ুন– দীর্ঘ সময় ধরে চলে আসছে ইজরায়েল-প্যালেস্তাইন সংঘর্ষ; রইল এর উৎপত্তি এবং সংক্ষিপ্ত ইতিহাস
যুদ্ধের পরিস্থিতি আরও অগ্নিগর্ভ হতে শুরু করলে দ্য অর্গানাইজেশন অফ দ্য পেট্রোলিয়াম এক্সপোর্টিং কান্ট্রিজ (ওপিইসি)-র আরব সদস্যরা পশ্চিমের সমস্ত দেশগুলিতে তেল সরবরাহ বন্ধ করে দেয়। কারণ ওই দেশগুলি ইজরায়েলকে সমর্থন করছিল। ফলে সব মিলিয়ে গোটা বিশ্বে একটি শক্তি সঙ্কট তৈরি হয়েছিল।
Photo-(AP Photo/Maya Alleruzzo)
দুই সপ্তাহ ধরে চলা যুদ্ধে যেন মৃত্যু মিছিল চলতে থাকে। প্রায় ২০ হাজার মানুষের প্রাণ হারায়। তবে যুদ্ধে জয়লাভ করে ইজরায়েল। আর যুদ্ধের সূচনার সময়ে তাদের হাতে যে পরিমাণ জমি ছিল, যুদ্ধ জয়ের পর সেই পরিমাণ আরও বৃদ্ধি পায়।
আরও পড়ুন– হামাস কী? কারা তাদের মদত দিচ্ছে? আর কেনই বা তারা এখন ইজরায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নেমেছে?
আর সেই যুদ্ধের প্রায় ৫০ বছর পরের ঘটনার দিকে চোখ রাখা যাক। চলতি বছরের ৭ অক্টোবর ইজরায়েলের বুকে আছড়ে পড়ে প্রায় হাজার পাঁচেক রকেট। আর এর সঙ্গে সঙ্গে গাজার হামাস গোষ্ঠী অপারেশন ‘আল-আকসা ফ্লাড’-এর সূত্রপাতের ঘোষণা করেছে। এখানেই শেষ নয়, ওয়েস্ট ব্যাঙ্কে প্রতিরোধ বাহিনীকেও মোতায়েন করার জন্য আহ্বান জানিয়েছে তারা। এছাড়া এই লড়াইয়ে তাদের পাশে থাকার জন্য আর্জি জানানো হয়েছে আরব এবং ইসলামপন্থী দেশগুলিকেও। হামাসের অভিযোগ, প্যালেস্তাইনি জমি অবৈধ ভাবে দখল করে রেখেছে ইজরায়েল।
(AP Photo/Hatem Moussa)
সাম্প্রতিক এই হামলার জন্য ইজরায়েল এবং প্যালেস্তাইনের দীর্ঘকালীন সংঘাতকেই দায়ী করেছেন হামাসের কর্মকর্তারা। বিশেষ করে দায়ী করা হয়েছে পবিত্র আল-আকসা মসজিদ এলাকাকে ঘিরে ইজরায়েল এবং প্যালেস্তাইনের সংঘাতকেই। এই মসজিদে প্রার্থনা করে মুসলিম এবং ইহুদি উভয় সম্প্রদায়ের মানুষই। আর দীর্ঘ অশান্তির এক ইতিহাসও রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হল ২০২১ সালে ইজরায়েল এবং হামাসের মধ্যে ১১ দিনব্যাপী রক্তক্ষয়ী লড়াইও।
ইহুদি ধর্মের পবিত্রতম সিমচ্যাট তোরাহ-র দিনে ইজরায়েলের উপর হামলা ১৯৭৩ সালের ইয়োম কিপ্পুর যুদ্ধ শুরু হওয়ার আকস্মিক আক্রমণের কথা মনে করিয়ে দেয়। আসল বিষয়টা হল যে, হামাস এই দিনটিকেই বেছে নিয়েছিল। কারণ এটা শুধুমাত্র ইহুদিদের জন্য পবিত্র নয়, তার সঙ্গে ১৯৭৩ সালের সংঘাতের পঞ্চাশ বর্ষপূর্তিও বটে! আর এর তাৎপর্য তো রয়েছেই! ইজরায়েলের সংবাদমাধ্যম গত কয়েক দিন ধরেই ইয়োম কিপ্পুর যুদ্ধের কথা স্মরণ করছে। শনিবার ইজরায়েলের বহু মানুষই কয়েক দশক আগে ঘটে যাওয়া সংঘাত এবং সাম্প্রতিক এই সংঘর্ষের মধ্যে মিল খুঁজে পাচ্ছেন।
ওই দিন সিমচ্যাট তোরাহ উদযাপনের পরিকল্পনা করেছিলেন বহু ইজরায়েলি। সেই সময়ই ইজরায়েলের বুকে বৃষ্টির মতো নেমে আসে হাজার হাজার ক্ষেপণাস্ত্র। সেই সঙ্গে স্থল-সমুদ্র-আকাশ পথে ইজরায়েলের মাটিতে অনুপ্রবেশ করে হামাস। যার বলি হয়েছে শতাধিক মানুষ।
হামাসের এই হামলার পরেই ইজরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু ‘যুদ্ধের পরিস্থিতি’ বলে ঘোষণা করে দিয়েছেন। সেই সঙ্গে এই হামলার জবাবে সংবেদনশীল গাজা স্ট্রিপে প্যালেস্তাইনি ওই গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে পাল্টা আক্রমণ শানানোর নির্দেশও দিয়েছেন তিনি।
ওয়েস্ট ব্যাঙ্কে হামাস নিজেদের বাহিনীকে ডেকে পাঠায়। ইজরায়েলের বিরুদ্ধে এই লড়াইয়ে শামিল হওয়ার জন্য তারা আরব এবং ইসলামপন্থী দুনিয়ার দেশগুলির কাছেও আর্জি জানায়। সাম্প্রতিক এই সংঘাতের দিকে আলোকপাত করলে দেখা যাবে যে, পূর্ব জেরুজালেম, গাজা ও ওয়েস্ট ব্যাঙ্কে ইজরায়েল এবং প্যালেস্তাইনের মধ্যে সংঘাত আর অশান্তি এখন তুঙ্গে। এর জেরে অনেকেই আশঙ্কা করছেন যে, পশ্চিম এশিয়ায় দীর্ঘকালীন যুদ্ধের দামামা বেজে গিয়েছে।
শনিবার গাজা থেকে ইজরায়েলের উপর আকস্মিক ভাবে ভয়ঙ্কর হামলা চালিয়েছে হামাস। আর সাম্প্রতিক কয়েক বছরে এটাই ছিল সবথেকে বড় হামলা। এই হামলায় এখনও পর্যন্ত প্রাণ হারিয়েছেন অসংখ্য ইজরায়েলি নাগরিক। জখম হয়েছে এক হাজারেরও বেশি মানুষ। শুধু তা-ই নয়, গাজার দিকেও প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ৩১৩ জন এবং জখম হয়েছেন ১৭০০ জনেরও বেশি।
নিউজ১৮ বাংলায় সবার আগে পড়ুন ব্রেকিং নিউজ। থাকছে দৈনিক টাটকা খবর, খবরের লাইভ আপডেট। সবচেয়ে ভরসাযোগ্য বাংলা খবর পড়ুন নিউজ১৮ বাংলার ওয়েবসাইটে।
Source link