[ad_1]
এশিয়ান গেমসে সোনা জিতেছে ভারতীয় পুরুষ ক্রিকেট দল। অধিনায়ক ঋতুরাজ গায়কোয়াড়-সহ দলের বেশ কয়েকজন খেলোয়াড় জাতীয় টিমের সদস্য। পোডিয়ামে যখন তেরঙ্গা উঠছে, জাতীয় সঙ্গীত বাজছে, প্রত্যেক ভারতীয়র মতো ঋতুরাজদের গায়েও নিশ্চয় কাঁটা দিয়ে উঠেছে।
ভারতীয় খেলাধুলার দুনিয়ায় এটা উল্লেখযোগ্য দিন। এর ঠিক দশ দিন আগে ভারতের মহিলা ক্রিকেট দলও এশিয়ান গেমসে সোনা জেতে।
ভারতে অন্যান্য খেলার তুলনায় ক্রিকেটারদের নিয়ে মাতামাতি বেশি হয়। সেলেব্রিটির মর্যাদা পান তাঁরা। ক্রিকেটের প্রতি ভারতীয়দের তুমুল আগ্রহের কারণেই এমনটা হয়, সন্দেহ নেই। ক্রিকেটাররাও নিজেদের জগতে থাকেন। এশিয়ান গেমসের মতো মাল্টি ডিসিপ্লিন ইভেন্টগুলোতেই অন্যান্য খেলার সুপারস্টারদের সঙ্গে মিশে যাওয়ার সুযোগ পান ক্রিকেটাররা। মত বিনিময় করেন। বোঝা যায়, ক্রিকেটে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনের চেয়ে জীবনে আরও অনেক কিছু করার আছে।
একটা সময় পর্যন্ত ক্রিকেট ছিল আভিজাত্যের খেলা। ক্রিকেটাররাও বোধহয়-এর থেকে বেরিয়ে আসতে পারেননি। ক্রিকেটের দুনিয়ায় নির্বাচিত কয়েকজনই ছড়ি ঘোরাতেন। তাঁদেরই ছিল একচেটিয়া আধিপত্য। ১৯৯১ সালে আন্তর্জাতিক দুনিয়ায় পা রাখে দক্ষিণ আফ্রিকা। ৯২-তে টেস্ট স্ট্যাটাস পায় জিম্বাবোয়ে। সেই থেকে মাত্র ৮টি দেশই ক্রিকেট খেলে। কিন্তু এই কটা দেশের খেলাকে ‘বিশ্ব ক্রীড়া’ হিসেবে পরিচিত দেওয়া যায় কী করে!
৫০ ওভারের ক্রিকেট কয়েকজনের আধিপত্যবাদকে ভেঙে দেয়। বলা যায়, ক্রিকেটের বিস্তারের সেটাই প্রথম পদক্ষেপ। এরপর টি ২০। ভিনি ভিডি ভিসি। এল দেখল জয় করল। হাজার হাজার মানুষ সাদা বলের সঙ্গে একাত্মতা অনুভব করলেন।
আজ পুরুষদের টি ২০ ইন্টারন্যাশনাল আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিলের র্যাঙ্কিংয়ে ৮৭টি দেশ রয়েছে। মহিলাদের সংশ্লিষ্ট তালিকায় রয়েছে ৬৬টি দেশ। অন্যদিকে ফিফা বিশ্ব র্যাঙ্কিংয়ে পুরুষদের ২০৭টি এবং মহিলাদের ১৮৬টি দেশ রয়েছে। অর্থাৎ ক্রিকেট এখনও পিছিয়ে। তবে তাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কাজ শুরু হয়েছে। ক্রিকেটও ডানা মেলে একদিন বিশ্ব আকাশে উড়বে নিঃসন্দেহে।
২০২৮ অলিম্পিকে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে ক্রিকেট। গ্রহের সবচেয়ে বড় ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় দেখা যাবে ব্যাট বলের লড়াই। এটা ক্রিকেটকে বিশ্বব্যাপী প্রতিষ্ঠার প্রথম ধাপ হিসেবে দেখা যায়। এর আগে অলিম্পিকে একবারই ক্রিকেট খেলা হয়। সেটা ১৯০০ সালের প্যারিস অলিম্পিক। দুটি দল যোগ দিয়েছিল। গ্রেট ব্রিটেন এবং ফ্রান্স। সোনা জিতেছিল গ্রেট ব্রিটেন।
বিশ্বের প্রায় অর্ধেক মানুষ ক্রিকেট খেলেন। কিন্তু তবুও এতদিন অলিম্পিকে ব্যাট বলের লড়াইয়ের সুযোগ ছিল না। লস অ্যাঞ্জেলসের এর অন্তর্ভুক্তি ক্রিকেটের মুকুটে নতুন পালক। আইসিসি নিশ্চয় বাড়তি উদ্যোগ নেবে।
তবে অলিম্পিকে ক্রিকেট খেলা হলেই তা অ্যাথলেটিক্স, ফুটবল বা সাঁতারের মতো সর্বজনীন হয়ে উঠবে না। যে সব দেশ ক্রিকেটের প্রতি আগ্রহ দেখাচ্ছে, তাদের খেলার মান এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে। কিন্তু আগ্রহ এবং ইচ্ছে আছে ষোল আনা। আর এটা সম্ভব হয়েছে টি২০-র দৌলতেই। পাপুয়া নিউ গিনি থেকে কম্বোডিয়া, বতসোয়ানা, এসওয়াতিনির মতো দেশ মেতে উঠেছে ব্যাট বলের লড়াইয়ে।
গোটা বিশ্বের কাছে পৌঁছনোর সুযোগ ছিল ক্রিকেটের কাছে। কিন্তু তার প্রকৃতিই বাধা হয়ে দাঁড়ায়। টেস্টের কথাই ধরা যাক। পাঁচ দিন ধরে খেলা হবে। কিন্তু তারপরেও কেউ যে জিতবেই সে কথা হলফ করে বলা যায় না। ফলে বরফ গলেনি। বিশ্ব দরবারে পৌঁছতে পারেনি ক্রিকেট। ৫০ ওভারের ক্রিকেট সেই প্রথা ভাঙতে চেয়েছিল। কিছুটা সক্ষমও হয়েছিল। কিন্তু পুরোটা নয়। ২০ ওভারের ক্রিকেট সব কিছুকে বন্যার মতো ভাসিয়ে নিয়ে গেল। জয় করল ক্রীড়াপ্রেমী সাধারণ মানুষের মন। অবশ্য ক্রিকেটের কুলীনরা নাখুশ, তাঁদের কাছে এটা টেস্ট এবং ওয়ান ডে-র অস্তিতের হুমকি।
টি২০ চটকদার। ক্রিকেটিয় দৃষ্টিকোণ থেকে সবচেয়ে সংক্ষিপ্ততম। তবে ফুটবলের ৯০ মিনিটের তুলনায় এখনও অনেক পিছিয়ে। বিশ্বের যে কোনও প্রান্তে পৌঁছনোর জন্য এতে অ্যাথলেটিজম এবং রাফ অ্যান্ড টাফ হয়ে ওঠার সমস্ত উপাদান রয়েছে। ক্রিকেটের প্রতি সচেতনতা এবং আগ্রহ বৃদ্ধির জন্য আইসিসি-ও নিরলস কাজ করছে। আরও বেশি সংখ্যক দেশকে আকৃষ্ট করতে পারলে ক্রিকেট এমনিই বাড়বে।
অ্যাথলেটিক্স বা ফুটবলের মতো ক্রীড়াপ্রেমীদের চেতনায় ঝড় তুলতে ক্রিকেটকে এখনও দীর্ঘ পথ পেরতে হবে। আসলে ক্রিকেট খেলা সহজ নয়। এর জন্য পরিকাঠামো দরকার। যা অনেক বেশি জটিল এবং খরচসাপেক্ষ। তাই বর্তমানে অনেক দেশ চাইলেও সামর্থ্যে কুলোচ্ছে না। আর্থিক সীমাবদ্ধতা, জায়গার অপ্রতুলতা এবং গণহারে অংশগ্রহণ বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
আরও পড়ুনঃ ক্রীড়া বিশ্বে নতুন শক্তিরূপে উত্থান হচ্ছে ভারতের, দেশের মাটিতে আইওসি অধিবেশনের এটাই সেরা সময়
অলিম্পিকে অন্তর্ভুক্তি হলেই যে মানসিকতার বদল ঘটে যাবে, তা নয়। তবে ক্রিকেট নিয়ে সাধারণ দর্শকের মধ্যে একটা উন্মাদনা তৈরি হবে। সচেতনতা বাড়বে। খেলার নিয়ম, সূক্ষ বিষয়গুলো বুঝতে পারবে। ধীরে ধীরে ক্রিকেটে আসক্তি জন্মাবে।
একটা খেলার সাফল্য, সে যে খেলাই হোক, জীবন ও জনসাধারণকে কতটা স্পর্শ করতে পারে, কতটা একত্রিত এবং ঐক্যবদ্ধ করতে পারে, তা থেকে বোঝা যায়। ক্রিকেটের সেই ক্ষমতা আছে। অলিম্পকের ট্যাগ তার অবস্থার উন্নতি ঘটাতে পারে। পাশাপাশি এটাই ঔপনিবেশিক হ্যাংওভার থেকে বেরিয়ে আসার সুযোগ। গণআকর্ষণে পরিণত হওয়ার পথে এটাই ছিল বড় বাধা।
বেঙ্গালুরুর ক্রিকেট বিষয়ক লেখক আর কৌশিক। ৩২ বছর ধরে ক্রিকেট নিয়ে লেখালিখি করছেন তিনি। ভিভিএস লেম্যানের আত্মজীবনী ‘২৮১ অ্যান্ড বিয়ন্ড, গুন্ডপ্পা বিশ্বনাথের আত্মজীবনী ‘রিস্ট অ্যাসুরড’, আর শ্রীধরের স্মৃতিকথা ‘কোচিং বিয়ন্ড-এর সহ-লেখক এবং ‘দ্য লর্ডস অফ ওয়াংখেড়ে’-এর ডব্লিউভি রমনের সঙ্গে যৌথভাবে লিখেছেন। উপরের প্রতিবেদনের মতামত একান্তভাবেই তাঁর। এর সঙ্গে নিউজ ১৮-এর কোনও যোগসূত্র নেই।
নিউজ১৮ বাংলায় সবার আগে পড়ুন ব্রেকিং নিউজ। থাকছে দৈনিক টাটকা খবর, খবরের লাইভ আপডেট। সবচেয়ে ভরসাযোগ্য বাংলা খবর পড়ুন নিউজ১৮ বাংলার ওয়েবসাইটে।
Tags: Cricket, IOC, Mukesh Ambani, Nita Ambani, Reliance Foundation, Sports
Source link