সোনালী ব্যাংক ডিপিএস হলো সোনালী ব্যাংক এর আওতায় মাসিক/বছর ভিত্তিক সঞ্চয় স্কিম একাউন্ট করা। মনে করুন আপনি যদি ১০ বছর মেয়াদী ডিপিএস অ্যাকাউন্ট খোলেন এবং প্রতি মাসে দুই হাজার টাকা জমা করেন।
তাহলে ১০ বছর পরে আপনার যে পরিমাণ টাকা জমা হবে, সেখান থেকে আপনাকে ৮ শতাংশ পর্যন্ত লাভ প্রদান করবে। যা আপনার জমাকৃত টাকা থেকে অনেক বেশি টাকা। মূলত এ পদ্ধতিকে বলা হয় ডিপিএস। আর এই একাউন্টটি একজন প্রাপ্ত বয়স্ক ব্যাক্তি ৩ বছর থেকে ২০ বছরের জন্য করতে পারবেন।
সোনালী ব্যাংক ডিপিএস অ্যাকাউন্ট করার ডকুমেন্টসমূহ:
আপনি যদি Sonali Bank DPS একাউন্ট করতে চান সেক্ষেত্রে ব্যাংকের কিছু রিকোয়ারমেন্ট পূরণ করতে হবে। সোনালী ব্যাংক ডিপিএস করতে গেলে যে রিকোয়ারমেন্ট বা ডকুমেন্টস দেওয়া আছে তা পূরণ করলে আপনি একাউন্ট করতে পারবেন। কি কি পূরণ করতে হবে সেগুলো নিচে তুলে ধরা হলো।
১। একজন আমানতকারীকে অবশ্যই ১৮ বছর বা এর উর্দ্ধে হতে হবে। ১৮ বছরের নিচে হলে সে ব্যাক্তিগত ভাবে একাউন্ট করতে পারবে না, তবে পিতামাতা চাইলে তাদের নাবালক বা নাবালিকার নামে সোনালী ব্যাংক ডিপিএস হিসাব একাউন্ট খুলতে পারবেন।
২। একাউন্টকারির সত্যায়িত ২ কপি রঙিন ছবি সাথে নমিনির সত্যায়িত ২ কপি রঙিন ছবি লাগবে।
৩। আমানতকারী ও নমিনীর উভয়ের জাতীয় পরিচয়পত্র/জন্ম সনদ এর সত্যায়িত ১ কপি জমা দিতে হবে।
উপরের উল্লেখিত বিষয় গুলো বাধ্যতামুলক থাকতে হবে। উল্লেখিত বিষয়গুলো মেনে এবং প্রদান করার মাধ্যমে ডিপিএস হিসাব খুলতে হবে। এসব ডকুমেন্টস নিয়ে আপনার নিকটস্থ ব্যাংক শাখায় গেলে আপনাকে একটি ডিপিএস হিসাব খোলার ফরম প্রদান করা হবে। ফরম টি পূরণ করার পর অতঃপর ব্যাংক কর্মকর্তার কাছে জমা দিলে ব্যাংক কর্মকর্তা হিসাব খুলে দিবে।
আরো পড়ুন: কিভাবে সন্তানের ভবিষ্যৎ গড়ে তুলবেন
সোনালী ব্যাংক ডিপিএস কত দিন মেয়াদে খোলা যাবে?
আপনি যদি সোনালী ব্যাংক ডিপিএস একাউন্ট খুলতে চান, তাহলে ভিন্ন ভিন্ন সময়ের জন্য খুলতে পারবেন। এক জন গ্রাহক ৩ বছর থেকে শুরু করে ২০ বছর মেয়াদের জন্য একাউন্ট করতে পারবেন।
সোনালী ব্যাংক ডিপিএস কিসের উপর করা যায়?
সোনালী ব্যাংক ডিপিএস একাউন্ট অনেক গুলো ক্যাটাগরীর উপর একাউন্ট তৈরি করতে পারবেন। নিম্নে তা দেওয়া হলো।
১। সোনালী সঞ্চয় স্কিম
২। শিক্ষা সঞ্চয় স্কিম
৩। চিকিৎসা সঞ্চয় স্কিম
৪। পল্লী সঞ্চয় স্কিম
৫। বিবাহ সঞ্চয় স্কিম
৬। অনিবাসী আমানত সঞ্চয় স্কিম
৭। সোনালী ব্যাংক অবসর সঞ্চয় স্কিম
৮। সোনালী ব্যাংক মিলিওনিয়ার সঞ্চয় স্কিম
৯। স্বাধীন সঞ্চয় স্কিম
৩ বছর মেয়াদী ডিপিএস
সোনালী ব্যাংকে আপনি ৩ বছর মেয়াদে ডিপিএস করেন তবে প্রতি মাসে কিস্তি বাবদে আপনার দিতে হবে ২৩,৪০০ টাকা। সে অনুযায়ী ৩ বছর হিসাব শেষে আপনার সর্বমোট সঞ্চয়ের পরিমান হবে ৮,৪২,৪০০ টাকা। এক্ষেত্রে ব্যাংক কতৃক আপনাকে লাভ দেওয়া হবে ১,৫৯,৩২৯ টাকা। একজন সোনালী ব্যাংক ডিপিএস গ্রাহক ৩ বছর পর লভ্যাংশ সহকারে ১০,০১,৭২৯ টাকা পাবে।
৫ বছর মেয়াদী ডিপিএস
যদি ৫ বছর মেয়াদ অনুয়ায়ী ডিপিএস হিসাব খুলতে চান সেক্ষেত্রে আপনার মাসিক কিস্তি দিতে হবে ১২,৪৭৫ টাকা। সে অনুযায়ী ৫ বছর মেয়াদ শেষে আপনার মোট সঞ্চয়ের পরিমান হবে ৭,৪৮,৫০০ টাকা। হিসাব শেষে ব্যাংক কতৃক মুনাফা দেওয়া হবে ২,৫১,৭৭২ টাকা। ৫ বছর হিসাবকাল শেষে আপনি সর্বমোট পাবেন ১০,০০,২৭২ টাকা।
১০ বছর মেয়াদী ডিপিএস
১০ বছর মেয়াদে ডিপিএস করলে আপনাকে প্রতি মাসে কিস্তি বাবদ দিতে হবে ৪,৫৮০ টাকা। সে অনুযায়ী ১০ বছর হিসাব কালের শেষে মোট সঞ্চয়ের পরিমান দাড়াবে ৫,৪৯,৬০০ টাকা। এক্ষেত্রে ১০ বছর পর আপনার মোট মুনাফা প্রাপ্তির পরিমান ৪,৫০,৫০৮ টাকা। ১০ বছর মেয়াদ শেষে ব্যাংক কতৃক মোট প্রাপ্তির পরিমান হবে ১০,০০,১০৮ টাকা।
১৫ বছর মেয়াদী ডিপিএস
১৫ বছর মেয়াদী ডিপিএস করলে মাসিক কিস্তি দিতে হবে ২১৯৫ টাকা। মেয়াদ শেষে আপনার মোট সঞ্চয় করা টাকার পরিমাণ হবে ৩,৯৫,১০০ টাকা। ব্যাংক কতৃক আপনাকে মুনাফা দেওয়া হবে ৬,০৬,৯১৯ টাকা। ১৫ বছর পর একজন সোনালী ব্যাংক ডিপিএস কারি মুনাফা সহকারে ১০,০২,০১৯ টাকা পাবে।
২০ বছর মেয়াদী ডিপিএস
একজন সোনালী ব্যাংক ডিপিএস একাউন্ট দারি ২০ বছর মেয়াদী ডিপিএস করতে চান তাহলে তার মাসিক কিস্তি দিতে হবে ১১১৫ টাকা। যা ২০ বছর পর মোট সঞ্চয়কৃত টাকার পরিমাণ দারাবে ২,৭৭,২০০ টাকা। । ঐ সোনালী ব্যাংক ডিপিএস কারি কে দেওয়া হবে ৭,২৪,০৬৩ টাকা। ২০ বছর মেয়াদ শেষে সে সর্বমোট পাবেন ১০,০১,২৬৩ টাকা।
সোনালী ব্যাংক ডিপিএস সুবিধা সমূহ:
সোনালী ব্যাংক ডিপিএস এর সুবিধা সম্পর্কে যারা জানেন না তারা আশা করি জেনে যাবেন।
হয়তো আপনার মনে প্রশ্ন জাগতে পারে যে, কেন আপনি সোনালী ব্যাংক কতৃক DPS অ্যাকাউন্ট খুলবেন, এর বিপরীতে আপনি কি সুবিধা পেতে পারেন। তো চলুন জেনে নেওয়া যাক, সোনালী ব্যাংক দ্বারা সোনালী ব্যাংক ডিপিএস অ্যাকাউন্ট খোলার পর কি কি সুবিধা পাবে নিচে দেওয়া হল।
১। আপনার যদি সোনালী ব্যাংক ডিপিএস একাউন্ট থাকে আপনি চক্রবৃদ্ধি হারে আমানতের উপরে মুনাফা পাবেন। এতে করে যে কোনো ব্যাংক ডিপিএস গ্রাহক তার আমানতের উপরে ভালো মাপের লাভ পেয়ে থাকে।
২। আপনার যদি ব্যাংক ডিপিএস একাউন্ট থাকে তাহলে ব্যাংকে আপনার হিসাবের বিপরীতে ঋণ এর সুবিধা পাবেন।
একজন সোনালী ব্যাংক ডিপিএস গ্রাহক ডিপিএস হিসাব করার পর অনেক গুলো সুবিধা পাবে।
ডিপিএস অসুবিধা সূমহ:
১। Sonali Bank DPS প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রে একটি বড় অসুবিধা রয়েছে। যদি আপনি লক্ষ করেন কম মেয়াদের হিসাব গুলোতে মাসিক কিস্তির পরিমান অনেক বেশি। যার ফলে কিছুদিন পরপর কিস্তি দিতে হবে।
২। একইভাবে বেশি মেয়াদের হিসাব এর মাসিক কিস্তি গুলোর দিকে লক্ষ করেন তবে দেখতে পারবেন সেগুলোতে লাভের পরিমাণ বেশি হলেও কিস্তির পরিমান তুলনামূলক কম।
অতএব, কম মেয়াদী হিসাবে কিস্তির পরিমান বেশি হওয়াতে সাধারণ মানুষের ক্ষেত্রে এই ধরনের হিসাব খুলে কিস্তি পরিশোধ করাটা অনেকটা কঠিন। এছাড়া এই সোনালী ব্যাংক ডিপিএস প্রক্রিয়ার আর কোনো অসুবিধা নেই।