শিশুর মৌলিক অধিকার কয়টি ও কি কি

শিশুর মৌলিক অধিকারকয়টি ও কি কি সেটা কয়েকটি বিষয়ের উপর নির্ভর করে। ১৯৯০ সালে জাতিসংঘ শিশুর মৌলিক অধিকার সনদে অনুস্বাক্ষর করে বাংলাদেশ। স্বাক্ষরকারী রাষ্ট্র হিসেবে কাগজে-কলমে অনেক ধরনের উদ্যোগ নিতে চেষ্টা করলেও সামাজিক চর্চায় শিশুর মৌলিক  অধিকার নিশ্চিত সম্ভব হয়নি। শিশু অধিকার কর্মীরা বলছেন, ”এই যে উল্লেখ না করা, সেই পরিস্থিতি বদলে ফেলাটা অধিকারের অংশ।”

শিশুর মৌলিক অধিকার কয়টি ও কি কি
শিশুর মৌলিক অধিকার কয়টি ও কি কি

শিশুর মৌলিক অধিকার কয়টি ও কি কি তা নিচে দেওয়া হলঃ

১। একটি নামের অধিকার, বেঁচে থাকার অধিকার,

শিশুর মৌলিক অধিকার কয়টি ও কি কি সেটা জানার প্রথম মাধ্যম হচ্ছে পরিবার। মা-বাবার ভালবাসা শিশুর জন্মগত অধিকার। একটি শিশু জন্মের পরে তার একটি অর্থ বিষিষ্ট নাম তার ন্যজ্য অধিকার। ভালভাবে বেচে থাকার অধিকার তার ‍আছে। মা বাবার ভালবাসা পাবার অধিকার একটি শিশুর আছে। বিভিন্ন কারণে মা-বাবার মাঝে বিচ্ছেদের ঘটনা ঘটে, এতে শিশুর জন্য এ ভালবাসা হয়ে ওঠে অনিশ্চিত। বিচ্ছেদের পর বেড়ে উঠতে হয় মা কিংবা বাবার একক ভালবাসায়। অনেকক্ষেত্রে উভয়ের ভালবাসা থেকেই বঞ্চিত হতে হয় শিশুকে। এ ক্ষেত্রে পরিবারের সদস্য বা তৃতীয় পক্ষের দায়িত্বে বেড়েউঠে শিশু,স্বজনহীনতায় শিকার হয় লাঞ্ছনার, নির্দয় এক পরিবেশই হয়ে উঠে শিশুটির একমাত্র ঠিকানা। 

২।  চিন্তার স্বাধীনতার অধিকার,

প্রতিটা মা বাবার উচিৎ তার সন্তানকে তার মত করে চিন্তা করতে ও মত প্রকাশ করতে সাহায্য করা। শিশুর মৌলিক অধিকার কয়টি ও কি কি সর্ম্পকে আগে ভালোভাবে জানতে ও বুঝতে হবে। একটি শিশু যতই ছোট হোক তার পরেও সে কিন্তু তার নিযের মত করে ভাবতে ভালবাসে। শিশু সুলভ আচরনকে অবশ্যই গুরুত্ত দিতে হবে। যখন ছোট থেকেই একটি শিশুর মতামত কে গুরুত্ত দেওয়া হবে তখন থেকেই সেই শিশুর মধ্যে গডে উঠবে এক নতুন লিডারশিপ। জাতি পাবে এক সুন্দর সমাজ ব্যবস্থা।

৩। শিশু সংক্রান্ত বিষয়ে তার মত প্রকাশের অধিকার।

শিশু সংক্রান্ত বিষয়ে তার মত প্রকাশের অধিকার একটি শিশুর মৌলিক অধিকারের মধ্যে পরে।

জাতিসংঘের মানবাধিকারের সর্বজনীন ঘোষণাপত্রে (১৯৪৮) বলা হয়েছে যে ”মাতৃত্ব এবং শৈশবকে “বিশেষ সুরক্ষা ও সহায়তা” এবং সকল শিশুর “সামাজিক সুরক্ষার” অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ।”

বাংলাদেশের শিশুর মৌলিক অধিকার
বাংলাদেশের শিশুর মৌলিক অধিকার

৪। বিবেক এবং ধর্মের অধিকার

আমরা শিশুকে যে নামেই চিহ্নিত করি না কেন, একটি শিশুর জন্মের মাধ্যমেই পৃথিবীতে তার অধিকার সৃষ্টি হয়, এর মাধ্যমেই একসময়ের শিশু থেকে পরিপূর্ণ মানুষ হয়ে ওঠে এবং পরিচালন করে সমাজ ও রাষ্ট্র ব্যবস্থার। কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য লিখেছেন-‘এসেছে নতুন শিশু, তাকে ছেড়ে দিতে হবে নব স্থান।শিশুর মৌলিক অধিকার কয়টি ও কি কি এর মধ্যে বিবেক ও ধর্ম অতপ্রত ভাবে জড়িত। সমাজ ও রাষ্ট্রব্যবস্থায় একজন শিশু যদি পরিপূর্ণ অধিকার ভোগ করতে পারে, তবেই আগামী দিনে সমাজ ও রাষ্ট্রব্যবস্থা সকল ক্ষেত্রেই পরিপূর্ণতা পাবে।ধর্মের ক্ষেত্রেও কিছু মৌলিক অধিকার রয়েছে।

৫। শিক্ষার অধিকার

প্রতিটি শিশুর ই রয়েছে শিক্ষার অধিকার। শিক্ষা প্রতিটি মানুষের ন্যায্য অধিকার। জাতিসংঘ ১৯৮৯ সালের শিশু অধিকার কনভেনশন, বা সিআরসি, মানবাধিকারের সম্পূর্ণ পরিসর – নাগরিক, সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক এবং সামাজিক অধিকারগুলি অন্তর্ভুক্ত করার জন্য প্রথম আইনত বাধ্যতামূলক করেছে। এর বাস্তবায়ন শিশু অধিকার কমিটি দ্বারা পর্যবেক্ষণ করা হয়।শিশু (শ্রমের অঙ্গীকার) আইন, ১৯৩৩ অনুসারে পিতা বা অভিভাবক শিশুর শ্রম প্রদানের চুক্তিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হলে শিশুকে শ্রমে নিযুক্ত করলে তারা দন্ডিত হবে।

৬। স্বাস্থ্যসেবার অধিকার

এটা মনে রাখতে হবে প্রত্যেক শিশুকে শিক্ষা,খেলাধুলা, উপযুক্ত জীবনযাত্রার মান, যাতে তাদের মেধার যথাযথ বিকাশ ঘটে, তারা শারীরিক, মানসিক দিক দিয়ে পরিপূর্ণ ভাবে বেড়ে উঠতে পারে। তার বিকাশের অন্তরায় যা কিছু টা বর্জনীয় ।অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অধিকার, মৌলিক মানুষের চাহিদা যেমন খাদ্য, বাসস্থান, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা এবং লাভজনক কর্মসংস্থান পূরণের জন্য প্রয়োজনীয় শর্তগুলির সাথে সম্পর্কিত অধিকার। এভাবে বলতে পারি যে শিশুর মৌলিক অধিকার কয়টি ও কি কি !! শিক্ষার অধিকার, পর্যাপ্ত বাসস্তান, খাদ্য, পানি, স্বাস্থ্যের, কাজের অধিকার, কর্মক্ষেত্রে অধিকার এই সব কিছুতে শিশুরাও অন্তর্ভুক্ত।

৭। অর্থনৈতিক ও যৌন শোষণ থেকে সুরক্ষার অধিকার।

শিশুর মৌলিক অধিকার কয়টি ও কি কি তা সঠিক ভাবে বিশ্লেষন করার জন্য চাইল্ড সেনসিটিভ সোস্যাল প্রটেকশন ইন বাংলাদেশ প্রকল্পের দীর্ঘমেয়াদী উদ্দেশ্য হচ্ছে নারী, শিশু ও যুবসম্প্রদায় কার্যকর সামাজিক সুরক্ষা নীতিসমূহের দাবি। উপযুক্ত সেবাপ্রাপ্তির মাধ্যমে নির্যাতন, অবহেলা, শোষণ ও পাচার বিলোপ সাধনে সক্ষম করা। সামাজিক সুরক্ষামূলক কার্যক্রমে দরিদ্র এবং নির্যাতিত পরিবারের নারী, শিশু ও যুবসম্প্রদায়ের অভিজ্ঞতার মাধ্যমে জাতির উন্নতি সাধনের মাধ্যমে নির্যাতন, সহিংসতা এবং শোষণের প্রকোপ কমিয়ে আনা।

শিশু অধিকার সনদ ও আন্তর্জাতিক চুক্তির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ আইনী কাঠামো এবং বিশেষ শিশুনীতি গ্রহণ ও দেশের সকল শিশু, বিশেষ করে দুস্থ শিশুদের কল্যাণ সাধন করা। পাশাপাশি প্রকল্প এলাকায় নারী ও শিশুদের প্রতি সহিংসতা, নির্যাতন এবং শোষণ প্রতিরোধকল্পে সহায়তা করা ও ইতিবাচক কাজে সামাজিক আদর্শের অনুশীলন, উন্নয়ন ও সুদৃঢ় করা অন্যতম প্রধান কাজ।তালাক আইন, ১৮৬৯ যা বাংলাদেশের খ্রিস্টানদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, তাতে অপ্রাপ্তবয়স্ক শিশুদের পিতা-মাতা বিচ্ছেদ, তালাক মামলায় জড়িয়ে পড়লে ঐ সকল  শিশুদের অভিভাবক হিসেবে রক্ষণাবেক্ষণ ও শিক্ষার বিধান উল্লেখ রয়েছে।

শিশুর মৌলিক অধিকার
শিশুর মৌলিক অধিকার

৮। সুরক্ষা বা নিরাপত্তা বিষয়ক অধিকার

শিশুদেরকে বিভিন্ন কাযে যেমন মানসিক নিপীড়ন,শারীরিকভাবে মারধর,শিশু শ্রম, কাজ করানোর পরে বেতন না দেওয়া বা ঝুঁকিপূর্ণ/বাণিজ্যিক কাজে নিয়োগ, বিক্রি করা, যৌন হয়রানি করা, ধর্ষণ করা, অপহরণ করা,পাচার করা, বৈষম্যের শিকার হওয়া, হত্যা করার মত জঘন্য অবস্থা থেকে শিশুদের রক্ষা পাওয়ার অধিকার রয়েছে এই ধারাগুলতে। শিশু অধিকার সনদের ৫৪ টি ধারার মধ্যে ২৪ টি ধারা সরাসরি শিশুর সুরক্ষা বিষয়ক ।

বাংলাদেশে শিশুর মৌলিক অধিকার কয়টি ও কি কি তার ধারাবাহিকতায় জাতিসংঘের মাধ্যমে কতগুলো ধারা তৈরি হচ্ছে -২, ৩, ৬-৮, ১০, ১১, ১৬, ১৯-২৩, ২৫, ৩০, ৩২-৩৯, ৪০ নম্বর ধারাসমূহের মধ্যে এ সর্ম্পকিত অধিকারের কথা বলা হয়েছে ।শিশুকে সর্বপ্রকার অপব্যবহার, অবহেলা ও শোষণ থেকে রক্ষা করতে হবে ।প্রতিবন্ধী শিশুদের বিশেষ পরিচর্যা, নিপীড়ন, বিশেষত শরণার্থী শিশুদের, সশস্ত্র সংঘাতে জড়িয়ে যাওয়া,মাদকাশক্তি,যৌন শোষণ, শিশুশ্রম,এ সকল সব কিছু অর্ন্তভূক্ত রয়েছে।

বাংলাদেশের শিশু বিষয়ক আরও আইন কানুন জানতে ভিজিট করুনঃ Laws of Bangladesh

বাংলাদেশে শিশুর মৌলিক অধিকার কয়টি ও কি কি এই সকল বিষয়ে নিচে বিস্তারিত বর্ণনা করা হলো।

বাংলাদেশের শিশু আইন ২০১৩ সনের ২৪ নং আইনে বলা হয়েছে

সংক্ষিপ্ত শিরোনাম এবং প্রবর্তনঃ

  • এই আইন শিশু আইন, ২০১৩ নামে অভিহিত করা হবে।
  • সরকার, সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা যে তারিখ নির্ধারণ করবে, সেই তারিখে এই আইন কার্যকর হবে।
  • এস-আর-ও নং ২৭৫-আইন/২০১৩ দ্বারা ৬ ভাদ্র, ১৪২০ বঙ্গাব্দ মোতাবেক ২১ আগস্ট ২০১৩ তারিখে উক্ত আইন কার্যকর করা হবে।

আইনের প্রাধান্যঃ

  • বিদ্যমান অন্য কোন আইনে ভিন্নতর যাহা কিছুই থাকুক না কেন এই আইনের উদ্দেশ্য পূরণের পরিকল্পে অনুর্ধ্ব ১৮ (আঠারো) বছর বয়স পযর্ন্ত সকল ব্যাক্তি শিশু হিসেবে গণ্য হবে।
  • আপাতত বলবৎ অন্য কোন আইনে ভিন্নতা যাই থাকুক না কেন, এই আইনের বিধানাবলী প্রাধান্য পাবে।

আরও পড়ুনঃ শিশুর মানসিক বিকাশ এ প্রয়ােজন খেলাধুলা ও সংস্কৃতিচর্চা

আরও পড়ুনঃ শিশু উন্নয়ন এ শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশে উপদেশ সমূহ

বিভিন্ন ধরনের খবর জানতে চোখ রাখুন আমাদের ফেসবুক পেজেঃ সময় বুলেটিন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *