গরু মোটাতাজাকরণ প্রক্রিয়া ও করণীয়

গরু মোটাতাজাকরণ প্রক্রিয়া :

বাস্তবতা ও করণীয় মাংস উৎপাদনের লক্ষ্যে অল্প দিনের ব্যবধানে কৃষক গরুকে খামার ব্যবস্থাপনায় সুষম খাবার সরবরাহ করে হৃষ্টপুষ্ট গরুতে রূপান্তরিত করাকে বিফ ফ্যাটেনিং বা গরু মোটাতাজাকরণ বলা হয়। এই প্রকল্পটি নিঃসন্দেহে লাভজনক প্রকল্প অভিজ্ঞ খামারিরা জুন-জুলাই মাসে এই প্রকল্পে অর্থ বিনিয়োগ করে ব্যাপকভাবে লাভবান হন। দেশি জাতের গরু উন্নত সংকর জাতের গরু অপেক্ষা আকারে ছোট। তাই দেশি জাত অপেক্ষা সংকর জাতের গরু থেকে বেশি মাংস পাওয়া যায়। এছাড়া অল্প দিনের মধ্যে গরু কে পুষ্টি সমৃদ্ধ করে মোটাতাজাকরন করা যায়।

এই প্রকল্পে গাভী গরু থেকে ষাঁড় গরু ক্রয় করা বেশি লাভজনক । গরু ক্রয় করার পরে কোনো রোগে আক্রান্ত আছে কি না তা ভালোভাবে পরীক্ষা নীরিক্ষা করতে হবে। গবাদি প্রাণীর জন্য কৃমি অত্যন্ত ক্ষতিকর । তাই খামারির সর্বপ্রথম কাজ হলো গরুকে কৃমিমুক্ত করা। হজম প্রক্রিয়া ঠিক রাখার জন্য কৃমিমুক্ত করার পরের দিন থেকে লিভার টনিক এবং প্রোবায়োটিক খাওয়াতে হবে। এই প্রকল্প গুলো জেনে রাখা একজন খামারীর জন্য অনেক গুরুত্বপুর্ণ ।

গরুকে প্রতিদিন একবার করে গোসল করিয়ে দিতে হবে যাতে গরুর শরীরে কোনো ধরনের ময়লা না থাকে। বিপাকীয় দুর্বলতা রোধ ও মাংস উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য বিউটাফসফেন ও সায়ানোকোবালামিন সংযুক্ত ওষুধ ব্যবহার করতে হবে। গরু মোটাতাজাকরণের জন্য সরিষার খৈল বেশি উপকারী ভূমিকা পালন করে। এছাড়াও এই প্রকল্পে সাইলেজের জন্য আমরা ভুট্টা কে বেশি প্রাধান্য দিয়ে থাকি। অন্যান্য ঘাস দিয়েও সাইলেজ করা যায়, তবে ভুট্টা সাইলেজের জন্য সবচেয়ে বেশি উপযোগী। সাইলেজের পুষ্টিমান বাড়ানোর জন্য সাইলেজ এডিটিভস ব্যবহার করতে হবে এবং এটি দানাদার খাবারের সঙ্গে মিশিয়ে খাওয়ালে দ্রুত কার্যকর ফল পাওয়া যায়।

আরো পড়ুন… জমি ক্রয়ের পূর্বে কোন বিষয়গুলো যাচাই করতে হবে

তাছাড়া ঘাসের নির্যাস সম্বলিত টিআরপি (এসিআই) ব্যবহার করা যেতে পারে। প্রাণীর বদহজম, পেট-ফাঁপা ও পাতলা পায়খানা হলে দানাদার খাবার না দেওয়াই উত্তম । বর্তমানে অনেক খামারি অজ্ঞতার কারণে এ প্রকল্পে পোল্ট্রি ফিড ব্যবহার করে থাকেন। যা এই প্রকল্পে বিরূপ প্রভাব ফেলে । তাছাড়া এ সময় প্রচুর বিশুদ্ধ ও ঠান্ডা পানি সরবরাহ করতে হবে। সর্বোপরি এই প্রকল্পে লাভবান হতে চাইলে একজন অভিজ্ঞ ভেটেরিনারিয়ানের সার্বিক তত্ত্বাবধানে থাকা এক জন খামারীর অতীব জরুরি।

১০০ কেজি দৈহিক ওজনের গবাদিপশুর খাদ্য তালিকা:

ধানের খড়২ কেজি
সবুজ ঘাস২ কেজি (ঘাস না থাকলে খড় ব্যবহার করতে হবে
দানদার খাদ্যের মিশ্রণ১.২-২.৫ কেজি
ইউরিয়া৩৫ গ্রাম (নিয়মানুযায়ী)
চিটাগুড়া২০০-৪০০ গ্রাম
লবণ২৫ গ্রাম
গবাদিপশুর খাদ্য তালিকা

দানাদার খাদ্যের সাথে লবণ, ইউরিয়া, চিটাগুড় একসাথে মিশিয়ে দিনে ২ বার দিতে হবে। ধানের খড় এবং কাঁচা ঘাস ছোট ছোট করে কেটে এক সঙ্গে মিশিয়ে খাওয়ালে ভালো ফল পাওয়া যায়।

১৫০ কেজি ওজনের গবাদিপশুর খাদ্য তালিকা:

খড়৩ কেজি
কাঁচা ঘাস৫-৬ কেজি
দানাদার খাদ্যের মিশ্রণ১.৫-২ কেজি
চিটাগুড়৫০০ গ্রাম
ইউরিয়া৪৫ গ্রাম (নিয়মানুয়ায়ী)
লবণ৩৫ গ্রাম
গবাদিপশুর খাদ্য তালিকা

গবাদিপশুকে ইউরিয়া প্রক্রিয়াজাত খাবার দেওয়ার ক্ষেত্রে কিছু সর্তকতা:
১. এক বছরের নিচে গরুকে ইউরিয়া খাওয়ানো যাবে না।
২. কখনও মাত্রাতিরিক্ত ইউরিয়া খাওয়ানো যাবে না
৩. গর্ভাবস্থায় ইউরিয়া খাওয়ানো যাবে না।
৪. অসুস্থ গরুকে ইউরিয়া খাওয়ানো যাবে না, তবে দূর্বল গরুকে পরিমাণের চেয়ে কম খাওয়ানো যেতে পারে।
৫. ইউরিয়া খাওয়ানোর প্রাথমিক অবস্থা (৭ দিন পর্যন্ত পশুকে ঠান্ডা ছায়াযুক্ত স্থানে বেঁধে রাখতে হবে এবং ঠান্ডা পানি দিয়ে নিয়মিত গোসল করাতে হবে। প্রকল্প মেয়াদ তিন মাস, শুরু হবে ইউরিয়া মিশ্রিত খাবার প্রদানের দিন থেকে।
৬. এই খবার খাওয়ানো শুরুর ১০-১৫ দিন পর হেমাটোপিন বিএস (১০এমএল) ইনজেকশন মাংসপেশীতে প্রয়োগ করলে মোটাতাজাকরণ প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হয়। গরু মোটাতাজাকরণ

গরুর দৈহিক ওজন নির্ণয়:


মোটাতাজাকরণ প্রক্রিয়ায় নিয়মিত গরুর দৈহিক ওজন নির্ণয় খুব গুরুত্বপূর্ণ কাজ। কেননা গরুর খাদ্য সরবরাহ,ঔষধ সরবরাহ ইত্যাদি কাজগুলো করতে হয় দৈহিক ওজনের ভিত্তিতে। তাছাড়া সরবরাহ করা খাবারে কাঙ্ক্ষিত ওজন মিলছে কি না সেটিও নিয়মিত যাচাই করা দরকার।

মো. আনসারুজ্জামান সিয়াম,

শিক্ষার্থী, ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিমেল সায়েন্স অনুষদ, গণ বিশ্ববিদ্যালয়, সাভার, ঢাকা

যুক্ত থাকুন সময় বুলেটিনের ফেইসবুক পেইজে…..somoybulletin

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *