যশোর সদর উপজেলার নরেন্দ্রপুর ইউনিয়নের চাউলিয়া দাসপাড়া গ্রামে পাখির বাসা তৈরি করে তা বহির্বিশ্বে রপ্তানির সুযোগ করে নিয়েছে গ্রামের মানুষরা। পাখি প্রিয় মানুষ পাখি পোষার জন্য তৈরি করে এসব। পাখি পুষতে দেশের বিভিন্ন জেলাগুলোতে বাড়ছে বাসার ব্যবহার।
ওই গ্রামে প্রায় ৩০ রকম বাসা তৈরি হচ্ছে। এসব পাখির বাসা তৈরি করে বিদেশে রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের পাশাপাশি কর্মসংস্থান হচ্ছে এলাকাবাসীর। শনিবার যশোর সদর উপজেলার চাউলিয়া গ্রামের দাসপাড়ায় গিয়ে দেখা যায়, বাড়িতে বৌদিসহ নানা বয়সের নারী পুরুষরা বুনছে পাখির বাসা। বাবুই পাখির বাসা সহ প্রায় বিভিন্ন ধরনের পাখির বাসা হাতে তৈরি করা হচ্ছে এই কাজে নিয়োজিত আছে প্রায় ২শত শ্রমিকের মাধ্যমে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে অর্ডার পাওয়া পণ্যগুলো রপ্তানি উপযোগী করে ঢাকায় পাঠান তারা।
এগুলো পরে ঢাকার ব্যবসায়ীরা ইউরোপের বিভিন্ন দেশে বিমান ও নৌপথে পাঠিয়ে দেন। উদ্যোক্তাদের দাবি সারাদেশে এ পাখির বাসা তৈরিতে চাহিদা বাড়ছে। ইউরোপের জার্মানি, ফ্রান্স, বেলজিয়াম, নেদারল্যান্ডস, স্পেন ও পর্তুগালের বিভিন্ন শহরে শৌখিন পাখি উৎপাদনের খামারে যাচ্ছে তার উৎপাদিত প্রায় ২৫ ধরনের পাখির বাসা। যশোরে দাসপাড়া, ধলিগাতী, এড়াদা, আবাদ কচুয়া গ্রামে তৈরি শৌখিন বাসা ইউরোপের বাজারে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।
আরো পড়ুন… ৫৫ বছর বয়সী বেলায়েত ঢাবি ভর্তি পরিক্ষায় অংশ নিবেন
বাসা তৈরির কারিগর দেবাশিস বলেন, ‘যশোরে দাসপাড়া, ধলিগাতী, এড়ান্দা, আবাদ কচুয়া গ্রামে তৈরি শৌখিন পাখির বাসা চাহিদা বেড়েছে ইউরোপের বাজারে।’ ঘরের বারান্দা ও আঙিনায় বসে বুননের কাজ করছেন শ্রমিকরা। পুরুষরা তৈরি করছেন বাসা বুননের মূল উপকরণ। নারীরা বাসা তৈরির বুনন তুলছেন। শ্রমিকরা একসঙ্গে বসে পাখিরবাসা তৈরির কাজ শেষ করছেন। উদ্যোক্তারা জানাব, বিদেশ ব্রিডিং বার্ড বা পোষা পাখির চাষ হয়।
পাখির বাসা তৈরির কারন ও চাহিদা
আমাদের দেশের তৈরি বাসায় ওই পাখি ডিম পাড়ে, বাচ্চা ফুটায়। যে কারণে বিদেশে এ বাসার অনেক চাহিদা। আগে চীনের দখলে ছিল ইউরোপের বাজার। সেখানে শ্রমের দাম বৃদ্ধি ও বাসা তৈরির উপকরণের সহজলভ্যতা না থাকায় বাজারটি আমরা পেয়েছি। পুঁজির অভাবে আমরা ঠিকমতো প্রসার ঘটাতে পারছি না। সরকার এ খাতে সহজ শর্তে ঋণ দিলে ইউরোপ-আমেরিকার পোষ্য পাখির উপকরণ রপ্তানির বাজার আমাদের দখলে আসবে।
ইউরোপের ৬ টি দেশে রপ্তানি
যশোরের তৈরি শৌখিন পাখির বাসা রপ্তানি হচ্ছে ইউরোপের বিভিন্ন দেশগুলোতে। অল্প খরচে বেশি লাভের আশায় ঘরে বসে অনেক মানুষ হাতে তৈরি পাখির বাসাকে পেশা হিসেবেই নিচ্ছে। ফলে এই সকল পাখির বাসা শৌখিনতার মাধ্যমে প্রচুর রপ্তানিও হচ্ছে বাড়ছে বৈদেশিক মুদ্রা। যশোর জেলার সদর উপজেলা চাউলিয়া দাসপাড়া গ্রামের উদ্যোক্তা গৌরাঙ্গ চন্দ্র দাস দীর্ঘদিন ধরে পাখির বাসা তৈরি করে তার জীবিকা নির্ব াহ করে আসছেন।
পাখির বাসা তৈরির কারিগর দেবাশিস বলেন যে , ‘যশোরে দাসপাড়া, আবাদ কচুয়া, ধলিগাতী গ্রামে তৈরি শৌখিন পাখির বাসার চাহিদা বেড়েছে ইউরোপের দেশ গুলোর বাজারে। ধীরে ধীরে বহির বিশ্বের দেশগুলোতে চাহিদা বাড়ছে যশোরের তৈরিকৃত হাতের তৈরি বাবুই পাখির বাসা । ইউরোপের জার্মানি, নেদারল্যান্ডস, স্পেন,বেলজিয়াম, ফ্রান্স ও পর্তুগালের বিভিন্ন শহরে শৌখিন পাখি উৎপাদন খামারে যাচ্ছে যশোরের উৎপাদিত প্রায় ২৫ ধরনের পাখির বাসা।
গৌরাঙ্গ চন্দ্র বলেন যে, নারকেলের ছোবড়া, লতা, বেত, বাঁশ, পাট, শুকনা খড়, বিচালি, বাঁশ পাতা, নেটের জাল, প্লাস্টিকের পাইপ, খেজুরের ছাল, ব্যবহার করে বিভিন্ন ধরনের পাখির বাসা তারা তৈরি করে থাকেন। শৌখিনতার এ এক অভিনব সুন্দর শিল্প।
তিনি আরও বলেন, ‘৩৫ বছর ধরে পাখির বাসা তৈরির কাজ করে লাভবান হচ্ছেন তিনি সহ আসে পাশের অনেক গ্রামের মানুষ। তার মাধ্যমে কাজ করছেন ২ শতাধিক শ্রমিক। ২৫ ধরনের পাখির বাসা তারা বানাতে পারেন। তার মধ্যে বাবুই পাখির বাসা অন্যতম। ঢাকা থেকে বিভিন্ন ব্যবসায়ী তাদের কাজে এখন যুক্ত হচ্ছেন। পাইকারি দামে এ সকল পাখির বাসা তারা কিনে নিয়ে বিদেশে রপ্তানি করেন।
পাখির বাসা তৈরির কাজে নিয়োজিত কাত্তিক দাস বলেন যে, ” বাশঁ দিয়ে নিপূন হাতে এই পাখির বাসা তৈরি করতে হয়। একজন শ্রমিক প্রতিদিন কমপক্ষে ৫০ টি বাসা তৈরি করতে পারেন। প্রতিদিন একজন শ্রমিক মজুরি পেয়ে থাকেন ৫০০ টাকা।”
গৌরঙ্গ চন্দ্র আরও বলেন- “এখন বিদেশি ক্রেতা বেড়েছে। অনেকেই এই শিল্পকর্ম শিখছেন। তবে পুজিঁ সংকটের জন্য এ পণ্যের রপ্তানি বাণিজ্য যতটা প্রসার ঘটার কথা ছিল, ততটা ঘটেনি।” সরকারি সহযোগিতা পেলে ও নিজেরা সরাসরি রপ্তানি করতে পারলে এ শিল্পের মাধ্যমে আরও বেশি পরিমাণে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব বলে মন্তব্য করেন তিনি।”
বিভিন্ন ধরনের সকল খবর জানতে চোখ রাখুন আমাদের সময় বুলেটিন ফেসবুক পেইজে।