মাঙ্কিপক্স কি এটি এখন সকলের কৌতুহলের বিষয়। এটি একটি নতুন আতংক। সারাবিশ্বে এখন বহুল পরিচিত নাম করোনাভাইরাস বা কোভিড-১৯। গত ২-৩ বছর পৃথিবীজুড়ে এর প্রকোপের কারণে বিশ্ব যেন থমকে ছিল। করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন কোটি কোটি মানুষ। মারাও গেছেন প্রচুর মানুষ। তারপর ধীরে ধীরে ভ্যাক্সিনের আওতায় আসলে করোনার প্রকোপ কমতে থাকে। বিশ্ব অর্থনীতি এই ভাইরাসের কবল থেকে পায়নি। এরই মধ্যে আরও একটি এখনও মুক্তি ভাইরাস বিশ্বজুড়ে জেঁকে বসবার উপক্রম হয়েছে।এই ভাইরাসের নাম মাঙ্কিপক্স।
মাঙ্কিপক্স কি ?
মাঙ্কিপক্স হল একটি ভাইরাল জুনোসিস (প্রাণী থেকে মানুষের মধ্যে সংক্রমিত একটি ভাইরাস) যার উপসর্গ অতীতে গুটিবসন্ত রোগীদের মধ্যে দেখা যায়, যদিও এটি চিকিৎসাগতভাবে কম গুরুতর। 1980 সালে গুটিবসন্ত নির্মূল এবং পরবর্তীতে গুটিবসন্তের টিকা বন্ধ করার সাথে সাথে, মাঙ্কিপক্স জনস্বাস্থ্যের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অর্থোপক্স ভাইরাস হিসাবে আবির্ভূত হয়েছে। মাঙ্কিপক্স প্রাথমিকভাবে মধ্য ও পশ্চিম আফ্রিকায় দেখা যায়, প্রায়শই গ্রীষ্মমন্ডলীয় রেইনফরেস্টের সান্নিধ্যে এবং শহরাঞ্চলে ক্রমবর্ধমানভাবে প্রদর্শিত হচ্ছে।
মাঙ্কিপক্স কিভাবে ছড়াচ্ছে ?
মাঙ্কিপক্স একটি ভাইরাল সংক্রমণ, যা পশু থেকে মানুষের মধ্যে সংক্রামিত হতে পারে। মাঙ্কিপক্সের উপসর্গ অনেকটাই স্মলপক্স বা গুটিবসন্ত এর মতো। তবে এ ক্ষেত্রে রোগের তীব্রতা গুটিবসন্ত এর চেয়ে কম।এরইমধ্যে পৃথিবীর ১২টি দেশে ৮০ জনের দেহে এই ভাইরাসের সংক্রমণ নিশ্চিত করা হয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে নয়টি ইউরোপিয়ান দেশ, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়া। বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, এটা পরিষ্কার যে মাঙ্কিপক্স কোভিডের মতো নয় এবং খুব শীঘ্রই এর কারণে লকডাউন ঘোষণা হতে পারে বিষয়টা এমন না হলেও বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন এর আচরণ কিছুটা অস্বাভাবিক।
যা এই অসুখে বিশেষজ্ঞ বিজ্ঞানীদের বিস্মিত করে তুলেছে। এতদিন পর্যন্ত মাঙ্কিপক্সের আচরণ অনুমান করা সহজ ছিল। নাম শুনে বানরের কথা মনে হলেও আসলে মাঙ্কিপক্স ভাইরাসটি পাওয়া যায় ইঁদুরের শরীরে। মাঙ্কিপক্স ভাইরাস আক্রমণের লক্ষ্ণণ — হাতের তালু আর পায়ের পাতাও ভরে যায় ফুসকুড়ি আর গোটা গোটা ফোসকাতে। সর্দির সমস্যা হয়, যৌনাঙ্গ, কনজোক্টিভা ও কর্নিয়াতে প্রভাব পড়ে এই ভাইরাস, এই ভাইরাস সাধারণত ৬-১৩ দিন থাকে, অনেক ক্ষেত্রে আক্রান্ত ব্যক্তি ২১ দিন পর্যন্ত অসুস্থ থাকে।
আরো পড়ুন… ৫৫ বছর বয়সী বেলায়েত ঢাবি ভর্তি পরিক্ষায় অংশ নিবেন
বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন , প্রাণহানির ঝুঁকি কমাতে করোনায় অসুস্থ ব্যক্তির থেকে ৮ ফিটের দূরত্ব বজায় রাখতে হবে । মুলত সুস্থ মানুষের চোখ, নাক ও মুখ দিয়ে করোনাভাইরাস শরীরে প্রবেশ করে তাই এই অঙ্গগুলি হাতের স্পর্শ থেকে দূরে রাখতে হবে । আধাসেদ্ধ মাংস খাবেন না । হাত প্রতিনিয়ত অ্যালকোহল স্যানিটাইসার দিয়ে পরিস্কার রাখতে হবে । যেহেতু এর কোনো প্রতিশোধক নেই তাই প্রতিনিয়ত সচেতনতায় বাজিয়ে থাকাই ভালো ।
সুসান হপকিন্স বলেন, মাঙ্কিপক্সের প্রাদুর্ভাব শহরেই দেখা যাচ্ছে। সমকামী অথবা উভকামী পুরুষেরা বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন। তিনি বলেন, ‘এই মুহূর্তে সাধারণ মানুষের মধ্যে মাঙ্কিপক্সের সংক্রমণ খবুই কম। কিন্তু আমি মনে করি, রোগটি নিয়ে মানুষের সতর্ক হওয়া উচিত।’
তবে এই বিশেষজ্ঞ উল্লেখ করেন প্রাপ্তবয়স্ক রোগীদের মধ্যে লক্ষণ তুলনামূলকভাবে মৃদু।২০১৮ সালে যুক্তরাজ্য, ইসরায়েল ও সিঙ্গাপুরে মাঙ্কিপক্সের রোগী শনাক্ত হয়েছিল।
ওই সময় ইউরোপে করা এ ভাইরাসের জিনোম সিকোয়েন্স (জীবন রহস্য উন্মোচন) করে যে ধরন পাওয়া গেছে, সেটির সঙ্গে বর্তমানে পাওয়া ধরনের মিল আছে।
মাঙ্কিপক্স এর চিকিৎসা
মাঙ্কিপক্সের জন্য বিশেষভাবে কোনো চিকিৎসা নেই। কিন্তু যেহেতু মাঙ্কিপক্স এবং গুটিবসন্ত সৃষ্টিকারী ভাইরাসগুলি একই রকম, তাই গুটিবসন্ত থেকে রক্ষা করার জন্য উদ্ভাবিত অ্যান্টিভাইরাল ওষুধগুলি কার্যকরভাবে মাঙ্কিপক্সের চিকিত্সার জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে।অ্যান্টিভাইরাল ড্রাগ টেকোভিরিম্যাট (টিপিওএক্সএক্স) প্রাপ্তবয়স্ক এবং শিশুদের মধ্যে গুটিবসন্তের চিকিত্সার জন্য ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফডিএ) দ্বারা অনুমোদিত হয়েছে। গুটিবসন্তের চিকিৎসার জন্য উদ্ভাবিত ওষুধগুলি মাঙ্কিপক্সের চিকিৎসার জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে। আপনার যদি মাঙ্কিপক্সের লক্ষণ থাকে, তাহলে একজন স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীর কাছে যান।
ভ্যাকসিন
JYNNEOS ভ্যাকসিন গুটিবসন্ত এবং মাঙ্কিপক্স প্রতিরোধের জন্য অনুমোদিত। এটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এই প্রাদুর্ভাবের সময় ব্যবহৃত প্রাথমিক ভ্যাকসিন।
ACAM2000 ভ্যাকসিন হল JYNNEOS-এর বিকল্প। এটি গুটিবসন্ত এবং মাঙ্কিপক্স থেকে রক্ষা করার জন্যও অনুমোদিত।
মাঙ্কিপক্সের বিস্তার রোধে টিকাদান একটি গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার। যেহেতু এই ভ্যাকসিনগুলির কার্যকারিতা সম্পর্কে আমাদের জ্ঞানের সীমাবদ্ধতা রয়েছে, তাই যাদের টিকা দেওয়া হয়েছে তাদের মাঙ্কিপক্সে আক্রান্ত ব্যক্তির সাথে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ সহ, ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ এড়ানোর মাধ্যমে সংক্রমণ থেকে নিজেদের রক্ষা করার জন্য উৎসাহিত করা হয়।
মাঙ্কিপক্স এর বিস্তার রোধ
ডাব্লুএইচও এই রোগের আরও বিস্তার রোধ করতে স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের সাথে সহযোগিতা করছে। দেশগুলিকে নজরদারি, পরীক্ষাগারের কাজ, ক্লিনিক্যাল কেয়ার, সংক্রমণ প্রতিরোধ এবং নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি ঝুঁকিতে থাকা সম্প্রদায়গুলি এবং বৃহত্তর জনসাধারণকে মাঙ্কিপক্স কি এবং কীভাবে নিরাপদ রাখতে হবে সে সম্পর্কে জানাতে ঝুঁকি যোগাযোগ এবং সম্প্রদায়ের অংশগ্রহণে সহায়তা করার জন্য নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে । ল্যাবরেটরি রোগ নির্ণয়, রোগের নজরদারি, প্রস্তুতি এবং আরও সংক্রমণ রোধে প্রক্রিয়াগুলিকে শক্তিশালী করার প্রচেষ্টাকে সমর্থন করার জন্য আফ্রিকার দেশগুলি, আঞ্চলিক প্রতিষ্ঠান এবং প্রযুক্তিগত এবং আর্থিক অংশীদারদের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছে।