ক্বারী আতাউর রহমান ৪৭ বছর ধরে নামাজের জন্য ডাকছেন একই মসজিদে

ক্বারী আতাউর রহমান
ক্বারী আতাউর রহমান

ক্বারী আতাউর রহমান কে ?

ক্বারী আতাউর রহমান এক কথায় একজন ভালো মনের মানুষ। জন্ম গ্রহণ করেছেন বিখ্যাত মনীষী বুজুর্গ খানজাহান আলি রহ.-এর স্মৃতি বিজড়িত জেলা বাগেরহাটে। আজ থেকে ৪৭ বছর পূর্বে ১৯৭৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে বসন্তের পূর্বে, শীতের বিদায়কালে একটি ভালো কাজের উদ্দেশ্যে যাত্রা করলেন সমৃদ্ধ শহর সুদূর যশোরের উদ্দেশ্যে। তখনকার সময় খুলনা থেকে যশোর বাস ভাড়া ছিল ৪ টাকা! ঝড়-বন্যা ও দারিদ্র্য কবলিত জন্মস্থান ত্যাগ করে ঐতিহ্যের শহর যশোরে পারি জমিয়েছিলেন ধর্মীয় খেদমত ও রুটি-রুজির আশায়।

ক্বারী আতাউর রহমান ৪৭ বছর ধরে নামাজের জন্য ডাকছেন

ক্বারী আতাউর রহমান ৪৭ বছর ধরে নামাজের জন্য ডাকছেন। ক্বারী আতাউর রহমান যশোরে এসে উঠেছিলেন একটি রেল স্টেশন মাদরাসার শিক্ষক তার মামা মাওলানা নুরুল ইসলাম সাহেবের কাছে। মাওলানা নুরুল ইসলাম সাহেবের যোগাযোগে নিয়োগ হয় যশোর শহরের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত ‘ঘোপ নওয়াপাড়া রোডের একটি জামে মসজিদে’। মুয়াজ্জিন-খাদেম হিসেবে! সেই থেকে শুরু, আজ ৪৭ বছর ধরে নামাজের জন্য ডাকছেন তিনি ।

আরো পড়ুন… ৫৫ বছর বয়সী বেলায়েত ঢাবি ভর্তি পরিক্ষায় অংশ নিবেন

নওয়াপাড়া জামে মসজিদে বর্তমান মুসল্লি :

শুরুতে মসজিদ টি ছিল ছোট্ট পরিসরে। একসাথে মাত্র ২০-২৫ জন মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারতেন। তিন তলা বিশিষ্ট বর্তমান মসজিদে এক সঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারেন ২০০০ মুসল্লির ও বেশি। প্রথম দিকে ঝড়-বৃষ্টি-গরমে প্রচণ্ড কষ্ট করতে হয়েছে মুসল্লীদের। বিদ্যুৎ বিভ্রাট ছিল অসহনীয়। কিছু অবুঝ মুসল্লির দুর্ব্যবহার সাময়িক কষ্ট দিলেও মনে রাখেননি তিনি। মসজিদের অন্য স্টাফদের অনুপস্থিতিতে প্রায় সময় একাই মসজিদ ধোঁয়া-পরিষ্কার, আজান দেয়া, নামাজ পড়ানোসহ সব দায়িত্ব পালন করতে হয়েছে তাকে। দীর্ঘদিন পর্যন্ত মাত্র ১০০ টাকা বেতনে এ চাকরি করেছেন আতাউর রহমান।

আতাউর রহমানের শেষ কথা:

এতো দীর্ঘ সময় ধরে এক স্থানে এত দায়িত্ব পালন কীভাবে সম্ভব? জানতে চাইলে মুচকি হাসি ছড়িয়ে , ‘আল্লাহ তাআলা দায়িত্ব পালন করিয়ে নিয়েছেন। পরিবার-সন্তান কেন্দ্রীক ভীষণ ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছে। তবে ইমাম সাহেব ও কয়েকজন মুসল্লির সহযোগিতায় বিষয়টি সহজ হয়ে গেছে।’ আনন্দ, সুখানুভূতি: সবচেয়ে বড় আনন্দের বিষয় মুসল্লিদের নিঃস্বার্থ ভালোবাসা।

তিনি বলেন, ‘মুসল্লিদের বুকভরা ভালোবাসা আমার প্রশান্তিময় জীবনযাবন করতে সাহায্য করেছে। ভবিষ্যত ইচ্ছা সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘এখন আমার বয়স ৬৮ বছর। জীবনের নতুন আর কোনো আশা-পরিকল্পনা নেই। আল্লাহর নিকট এখন একটিই চাওয়া, জীবনের শেষদিন পর্যন্ত যেন মসজিদের খেদমতে যুক্ত থাকতে পারি। মানুষকে নামাজের জন্য ডাকতে পারি। অসিয়ত করে রেখেছি, আমার জানাজা এই মসজিদেই হবে।

ফেসবুক পেইজ: somoybulletin

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *