ভর্তি পরিক্ষার প্রস্তুতি নিয়ে সবাই কম বেশি চিন্তিত থাকে। ছাত্রজীবনের সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রতিযোগিতামুলক পরীক্ষার কথা যদি বলি তাহলে সবার আগে আসে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরিক্ষার প্রস্তুতি কথা। আর সেটি যদি হয় স্বপ্নের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য, তাহলে তো কথাই নেই। কিছুদিন পরেই ভর্তি পরীক্ষা শুরু হতে যাচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরিক্ষার প্রস্তুতি ঠিক আগ মূহুর্তে এসে অনেকেই অনেক রকম প্রশ্নের সামনে এসে দাঁড়ায়। তাই আমার ভর্তি পরিক্ষার অভিজ্ঞতা থেকে তোমাদের জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দেওয়া চেষ্টা করেছি।
১। জঠিল বিষয়গুলো সহজ করে পড়া:
কোনো নির্দিষ্ট বিষয় যদি খুব জটিল মনে হয়, তবে তা ঘণ্টার পর ঘণ্টা একটানা না পড়াই ভালো। কারণ, এতে ক্লান্তি আর হতাশা আপনাকে পেয়ে বসতে পারে। কঠিন বিষয়টির জন্য রুটিনের ছোট ছোট অংশ বরাদ্দ রাখতে পারেন। যেমন: সকালে ২০ মিনিট, বিকেলে ২০ মিনিট, আবার রাতে ঘুমানোর আগে ২০ মিনিট। তাহলে আপনার ভর্তি পরিক্ষার প্রস্তুতি টা অনেক সহজ হয়ে যাবে।
২। আত্মবিশ্বাসী হওয়া:
বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরিক্ষার প্রস্তুতির সময় দুইটি বিশেষ অস্ত্রের নাম ‘আত্মবিশ্বাস’ ও ‘দৃঢ় মনোবল’। ভর্তি পরীক্ষার আগের চার মাস তুমি পদে পদে হোঁচট খাবে। বারবার মনে হবে যে তোমাকে দিয়ে হবে না। ভর্তি কোচিং-এর পরীক্ষা কোনোটা ভালো হবে আবার কোনোটা খুব খারাপ হবে। এই স্রোতের ওঠানামার সাথে টিকে থাকাটা কঠিন। মানসিক অবস্থা স্বাভাবিক রাখাটা খুব কঠিন। কিন্তু মনে রাখবে “হোঁচট খাওয়ার মানেই হেরে যাওয়া নয়, জয়ের অনীহা থেকেই পরাজয়ের শুরু হয়।”
৩। ভর্তি পরিক্ষার প্রস্তুতি নিয়ে সময় নষ্ট করা যাবেনা:
ভর্তি পরিক্ষার প্রস্তুতি সময় প্রতিটি মুহূর্ত খুব গুরুত্বপূর্ণ। তাই পড়াশোনা করার বাইরে এই গুরুত্বপূর্ণ সময় টা কে নষ্ট না করে, সেদিকে খেয়াল রেখো। পরিক্ষার হলে বসে তোমার চেয়ার বা টেবিলটা ভাঙা কি না, সব ঠিকঠাক আছে কি না, আগেই দেখে নাও। একবার পরীক্ষা শুরু হয়ে গেলে এসব নিয়ে ভাবার সময় আর থাকবে না। যেসব প্রশ্নের উত্তরের ব্যাপারে তুমি নিশ্চিত, সেগুলো আগে উত্তর করে ফেলা ভালো। ভর্তি পরিক্ষার সময় যদি এক ঘণ্টা হয় তাহলে সহজ প্রশ্নগুলোর উত্তর আগে করে ফেলতে হবে। বাকি সময়ের মধ্যে একটু দ্বিধা থাকলেও ঝুঁকি নিয়ে কয়েকটি প্রশ্নের উত্তর দিয়ে ফেলো।
৩। ইংরেজিতে আলাদা গুরুত্ব দিতে হবে:
বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরিক্ষার প্রস্তুতি সময় সাধারণ জ্ঞান ও ইংরেজিতে আলাদা গুরুত্ব দিতে হবে। সাধারণ জ্ঞানের জন্য পরীক্ষার আগের তিন মাসের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা, কোনো অর্জন, কোনো বিখ্যাত মানুষের মৃত্যু, খেলাধুলায় কোনো বড় রেকর্ড, কোনো কিছুই বাদ দেওয়া যাবে না। সাধারণ জ্ঞান বা ইংরেজির জন্য যেহেতু সেভাবে কোনো সিলেবাস ধরাবাঁধা নেই, তাই এ দুটি বিষয়ে একটু জোর দিতে হবে। খুব ভালোভাবে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরিক্ষার প্রস্তুতি নিয়ে বিগত বছরের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি ও বিসিএস প্রশ্নের দিকে নজর দিলে প্রশ্ন কমন পাওয়া যাবে।
৪। সবার পরামর্শ শুনতে হবে না
বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরিক্ষার প্রস্তুতি নেওয়ার সময় অনেকে তোমাকে অনেক রকম পরামর্শ দেবে। সবার পরামর্শ আমলে নিতে হবে তা নয়। বিশেষ করে যারা তোমাকে নিরুৎসাহিত করবে, বলবে তোমাকে দিয়ে হবে না, এসব কথা কানে না নিয়ে তুমি তোমার কাজ করে যাও। তবে যেসব বড় ভাই-আপুরা নার্সিংয়ে পড়ছেন, বা যারা পড়াশোনা করে ভালো একটি যায়গায় আছেন, অথবা যাদের এই পরীক্ষার অভিজ্ঞতা আছে, তাদের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ নিতে পারো।
আরো পড়ুন… ৫৫ বছর বয়সী বেলায়েত ঢাবি ভর্তি পরিক্ষায় অংশ নিবেন
৫। প্রস্তুতি চলাকালিন শেষ মূহুর্তে কি করা?
ভর্তি পরিক্ষার প্রস্তুতি শেষ সময়ে এসে নতুন করে নিজেকে তৈরি করার মতো তেমন কিছু নেই। এতদিন যেভাবে প্রস্তুতি নিয়ে এসেছো, এখন সেগুলো রিভিশন দেয়ার সময়। যে যেভাবেই পড়াশোনা করেছো, কোচিং করে কিংবা বাসায় বসে, এখন সবগুলো বিষয় ভালোভাবে রিভিশন দেয়ার সময়। পরীক্ষা নিয়ে মোটেও হতাশ হওয়া যাবে না। তোমার প্রস্তুতি কম/বেশী যাই থাকুক না কেন, নিজের প্রতি বিশ্বাস রেখে পরীক্ষা দেওয়া দিতে হবে। বন্ধু-বান্ধব বা অন্যরা কে কি করছে তা না দেখে নিজের পরীক্ষার দিকে সম্পূর্ণ খেয়াল রাখতে হবে। মনে রাখবা, ভর্তি পরীক্ষা একটা যুদ্ধের মত আর তোমাকে অবশ্যই যুদ্ধে জয়লাভ করার জন্য লড়তে হবে। তোমার আত্নবিশ্বাসই তোমাকে যুদ্ধ জয়ে সহায়তা করবে। সবার জন্য শুভকামনা।