জুমার দিনের ১১ টি আমল যা জুমার বা জুমাবারের গুরুত্ব ইসলামে অপরিসীম। জুমার দিনের সওয়াব ও মর্যাদা ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার মতোই। জুমার দিনকে সাপ্তাহিক ঈদের দিন বলা হয়েছে। তাই জুমার দিনের ১১ টি আমল জেনে রাখা ও পালন করা প্রতিটি মুসুলমানদের অত্যাবশক।
জুমার দিন ইসলামী ইতিহাসে বড় বড় ও মহৎ কিছু ঘটনা ঘটেছে। আল্লাহ তাআলা আদম (আ.)-কে জুমার দিন সৃষ্টি করেন। এ দিনেই তাঁকে জান্নাতে প্রবশে করান এবং জান্নাত থেকে পৃথিবীতে পাঠান। আবার জুমার দিনেই কেয়ামত সংঘটিত হবে। এছাড়াও এই দিন ইতিহাসে আরো বড় বড় ও মহৎ ঘটনা ঘটেছে।
পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে মুমিনগণ! জুমার দিন যখন নামাজের আহ্বান জানানো হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণে (মসজিদে) এগিয়ে যাও এবং বেচা-কেনা (দুনিয়াবি যাবতীয় কাজকর্ম) ছেড়ে দাও।
এটা তোমাদের জন্য কল্যাণকর। (সুরা জুমা, আয়াত : ০৯)
জুমার দিনের আমল ও ফজিলত :
নিচে জুমার দিনের ১১ টি আমল আলোচনা করা হলো……
১. উওমভাবে গোসল করা :
জুমার দিনের ১১ টি আমল এর মধ্যে একটি হলো উওমভাবে গোসল করা। ইসলাম ধর্মে পবিত্র জুমার দিনকে ঈদুল আযহা ও ঈদুল ফিতরের চেয়েও বেশি মর্যাদাপূর্ণ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। আর এই জন্য জুমার দিনে গোসল করার গুরুত্বও অপরিসীম। তাই জুমার দিনে উওমভাবে গোসল করে তাড়াতাড়ি মসজিদে গেলে অনেক সওয়াবের ভাগীদারও হওয়া যায়।
২. তারাতারি মসজিদে হাজির হওয়া:
জুমার দিনের ১১ টি আমল এর মধ্যে অন্যতম একটি আমল হলো দ্রুত মসজিদে যাওয়া। হাদিসে রাসুল (সা.) বলেছেন, জুমার দিন মসজিদের দরজায় ফেরেশতারা অবস্থান করেন এবং ক্রমানুসারে আগে আগমনকারীদের নাম লিখতে থাকেন। যে সবার আগে আসে সে ওই ব্যক্তির মতো যে একটি মোটাতাজা উট কোরবানি করে।
এরপর যে আসে সে ওই ব্যক্তি যে একটি গাভি কোরবানি করে। এরপর আগমনকারী ব্যক্তি মুরগি দানকারীর মতো।
তারপর ইমাম যখন বের হন তখন ফেরেশতাগণ তাদের লেখা বন্ধ করে দেন এবং মনোযোগ সহকারে খুতবা শুনতে থাকেন। (বুখারি, হাদিস : ৯২৯)
৩. বেশি বেশি দরূদ পাঠ করা :
জুমার দিন বেশি দরূদ পাঠ করা উত্তম। যদি কোনো ব্যক্তি একবার দরূদ পড়ে তবে তার প্রতি ১০টি রহমত নাজিল হয়। আর যে ব্যক্তি জুমার দিন আসরের নামাজের পর ৮০ বার এ দরূদ পড়ে, তার ৮০ বছরের গোনাহ্ মাফ হয়ে যায় এবং ৮০ বছর ইবাদতের সওয়াব তার আমলনামায় লেখা হবে। সুবহানাল্লাহ্
৪. ইমাম বা খতিবের কাছাকাছি বসা:
যে ব্যক্তি তারাতারি মসজিদে এসে ইমাম সাহেবের কাছাকাছি বসবে, এরপর দুটি খুতবা মনোযোগ দিয়ে শুনবে এবং খুতবার সময় অনর্থক কাজকর্ম করবে না, সে মসজিদে আসার প্রতিটি পদক্ষেপে একবছর নফল রোজা ও একবছর নফল নামাজের সওয়াব পাবে।
৫. খতবার সময় চুপ থাকা:
জুম্মার খুতবার সময় চুপ থাকা ওয়াজিব। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন নবী করিম (সা.) বলেছেন, জুমার দিন ইমাম খুতবা দেওয়ার সময় আপনি যদি পাশের কাউকে বলেন চুপ থাকুন, তাহলে আপনি জুমার সওয়াব নষ্ট করে দিলেন।
৬. বেচাকেনা বন্ধ রাখা :
জুমার দিন আজানের পর বেচাকেনা বন্ধ রাখা গুরুত্বপূর্ণ আমল। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, হে মুমিনগণ!
জুমার দিনে যখন নামাজের আজান দেওয়া হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণে দ্রুত ছুটে যাও এবং বেচাকেনা বন্ধ করো। এটা তোমাদের জন্য উত্তম যদি তোমরা বোঝো। (সুরা : জুমআ, আয়াত : ৯)
৭. সুরা কাহাফ তিলাওয়াত করা:
রাসুল (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি জুমার দিন সুরা কাহাফ পাঠ করবে, তার জন্য এক জুমা থেকে অপর জুমা পর্যন্ত নূর বর্ষিত হবে।
৮. পায়ে হেঁটে মসজিদে আসা:
জুমার দিনের ১১ টি আমল এর মধ্যে অন্যতম একটি আমল হচ্ছে পায়ে হেটে মসজিদে আসা। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, আমি কি তোমাদের বলব না, আল্লাহ তা-আলা কি দিয়ে গুনাহ মুছে দেন এবং মর্যাদা বাড়িয়ে দেন? সাহাবারা বলেন, হে আল্লাহর রাসুল, হ্যাঁ (বলে দিন)। তিনি বললেন, কষ্ট থাকার পরও ভালোভাবে অজু করা, মসজিদের দিকে বেশি কদম ফেলে যাওয়া এবং এক নামাজ শেষ করে পরবর্তী নামাজের জন্য অপেক্ষা করা।
৯. তাহিয়াতুল মসজিদস :
তাহিয়াতুল মসজিদ বলতে মসজিদ প্রবেশ করলেই মসজিদের আদব স্বরূপ ২ রাকআত সালাত আদায় করতে হবে। এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
১০. সুগন্দি ব্যবহার করা :
সুগন্ধি পবিত্রতার নিদর্শন। মহানবী (সা.) নিয়মিত আতর ব্যবহার করতেন তিনি রাস্তা দিয়ে হেঁটে গেলে সুগন্ধির ঝরনা বয়ে যেত। লোকেরা বুঝতে পারত, নবী করিম (সা.) এই রাস্তা দিয়ে হেঁটে গেছেন। পাশাপাশি সুগন্ধি ও আতর রাসুল (সা.)- এর অত্যন্ত প্রিয় ছিল।
১১. জুমার দিন দোয়া করা:
জুমার দিন এমন একটি সময় আছে বান্দা ওই সময় যা-ই দোয়া করে আল্লাহ তা কবুল করে নেন। জাবের ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) আমাদের প্রিয় নবী রাসুলুল্লাহ (সা.) থেকে বর্ণনা করেন, জুমার দিন বারো ঘণ্টার মধ্যে একটি বিশেষ মুহূর্ত আছে, তখন কোনো মুসলমান আল্লাহর কাছে যা-ই দোয়া করে আল্লাহ তাই কবুল করে নেন।
তোমরা ওই মুহূর্তটিকে আসরের শেষে অনুসন্ধান করো। জুমার দিনের ১১ টি আমল সবার জানা উচিত ।
আরো পড়ুন: সন্তানকে সময় দিন, কিভাবে সন্তানের ভবিষ্যৎ গড়ে তুলবেন
মুসলিম উম্মাহর জন্য উপহারঃ
হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আমরা সর্বশেষ উম্মাত কিন্তু কেয়ামতের দিন আমরা হব অগ্রগামী। যদিও সব উম্মাতকে (আসমানি) কিতাব দেওয়া হয়েছে আমাদের আগে, আর আমাদের কিতাব দেওয়া হয়েছে সব উম্মাতের শেষে।
এরপর যে দিনটি আল্লাহ আমাদের জন্য নির্ধারণ করেছেন, সেদিন সম্পর্কে তিনি আমাদের হেদায়াতও দান করেছেন। সেদিনের ব্যাপারে অন্যান্যরা আমাদের পেছনে রয়েছে (যেমন)- ইয়াহুদিরা (আমাদের) পরের দিন (শনিবার) এবং খৃষ্টানরা তাদেরও পরের দিন (রোববার)।
আমাদের ফেসবুক পেইজ: সময় বুলেটিন