শিশুর মানসিক বিকাশে প্রয়ােজন শিক্ষা, সংস্কৃতিচর্চা, খেলাধুলা, আজকের শিশু আগামীর ভবিষ্যৎ। আজ যারা মাতৃগর্ভ থেকে জন্ম নিয়ে বেড়ে উঠছে, অদূরে তারাই নেতৃত্ব দেবে। সমাজ, রাষ্ট্র এমনকি দেশের গণ্ডি পেরিয়ে তারা বিশ্বকে শাসন করবে। আর তাই আজকের শিশুদের আগামী বিশ্বের নেতা হিসেবে গড়ে তােলার জন্য প্রয়ােজন তাদের জন্য সঠিক মঞ্চ তৈরি করে দেওয়া, যেখানে তারা নিজেদেরকে বিকশিত করার সুযােগ পাবে।
যে সমাজ তাদের এই মঞ্চ যত সুচিন্তিতভাবে প্রস্তুত করবে, সে সমাজের শিশু সমাজকে তত সুশৃঙ্খলভাবে নেতৃত্ব দেবে। সমাজের নাগরিক হিসেবে আপনি তখনই একটি ভালাে নেতৃত্ব বা সমাজ পরিচালনা আশা করতে পারবেন, যখন আপনি আপনার সমাজের শিশুদের সুষ্ঠুভাবে শারীরিক, মানসিক ও ভাষিক বিকাশের সুযােগ করে দিবেন। শারীরিকভাবে বেড়ে ওঠার জন্য একটি শিশুর যেমন খাদ্য প্রয়ােজন, একইভাবে প্রয়ােজন সঠিক শরীরচর্চা। শিশুদের এই শরীরচর্চার সবচেয়ে অভিনব পন্থা হল খেলাধুলা।
অপরপক্ষে আত্মিক বা মানসিক বিকাশের জন্য প্রয়ােজন শিক্ষা, সংস্কৃতিচর্চা, খেলা বিনােদন। কিন্তু বর্তমানে সময়ে হারিয়ে গেছে আনন্দময় শৈশব, সাথে হারিয়ে গেছে খেলাধুলাও। প্রযুক্তি নির্ভর যুগে এসেছে ডিজিটাল খেলাধুলা। তবে তা আর আগের মত শারীরিক সুস্থতার জন্য কার্যকরী নয়।
বাসায় বসে মোবাইল, ট্যাব, কম্পিউটারে গেমস খেলায় কোনো শারীরিক উন্নতি হয়না, বরং মানসিকসহ শরীরের নানান নেতিবাচক সমস্যা দেখা দেয়। পড়ালেখা কিংবা কাজের চাপে খেলার সুযোগ পায়না এখনকার শিশুরা। যতটুকু অবসর সময় পাওয়া হয়, তা সবাই আলস্যে মোবাইল ব্যবহারের মধ্যে কাটাতে পছন্দ করে। খুব কম সংখ্যকই খেলাধুলার পাশাপাশি বই পড়তে বা সৃজনশীল কাজ করতে পছন্দ করে।
বর্তমান শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলােতে প্রাণ খুলে দৌড়ানাের, খেলাধুলা করার জায়গার বড় অভাব। সে সঙ্গে সভ্যতার ক্রমবিকাশ আর আধুনিকতার ছোঁয়ায় ধীরে ধীরে হারিয়ে গেছে এক সময়কার গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্যবাহী খেলাগুলাে। নাগরিক জীবনের প্রতি ঝুঁকে পড়ার পাশাপাশি আমরা আমাদের অনেক নির্মল আনন্দ বিসর্জন দিয়ে এখন একেবারেই যান্ত্রিক হয়ে উঠেছি।
উন্নত বিশ্বের তথা ইউরােপ বা আমেরিকার দিকে তাকালে দেখা যাবে তাদের পরিকল্পনার একটা বড় অংশ থাকে শিশুদের শিক্ষা, বিনােদন, খেলাধুলা ও সংস্কৃতিচর্চা নিয়ে। সে তুলনায় শিশুদের নিয়ে আমরা অনেক উদাসীন। আমাদের উচিৎ শিশুদের খেলাধুলা ও সুস্থ বিনােদনের সুযােগ দেওয়া। পরিবার, সমাজ এবং রাষ্ট্রের প্রতিটি জায়গা থেকে শিশুর জন্য সুন্দর শৈশবের উপযােগী পরিবেশ দিতে হবে। আমরা যদি তা করতে ব্যর্থ হই তাহলে শিশুর শৈশব অনলাইনের বিমূর্ত জগতে বন্দী হয়ে থাকবে। শিশুরা হারিয়ে ফেলবে নিজেদের আবিষ্কার করার যােগ্যতা।
ইমরান হোসাইন
শিক্ষার্থী : গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়।
সদস্য, বাংলাদেশ তরুণ কলাম লেখক ফোরাম, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা।