উপহার প্রথা পরিহার করি, দাওয়াতে বৈষম্য না করি

উপহার প্রথা পরিহার করি, দাওয়াতে বৈষম্য না করি

উপহার প্রথা পরিহার করি, দাওয়াতে বৈষম্য না করি, আমাদের সমাজের অবস্থা এমন হয়েছে যে, আমদের ধনী আত্মীয়দেরকে আমরা দাওয়াত করি এবং তাদের সঙ্গে যােগাযােগ রাখি। কিন্তু আত্মীয় গরিব হলে আমরা তাদের কোনাে খোঁজখবর নেই না ।

এমনকি গরিব আত্মীয়ের দাওয়াত গ্রহণে আমাদের মন সায় দেয় না। নিঃসন্দেহে এটি একটি অমানবিক কাজ। অথচ আমাদের গরিবদের দাওয়াত করে খাওয়ানো কথা ছিলো কিন্তু আমরা তার ওল্টোটা করছি। যারা গরীব দু’বেলা দুমুঠো খাওয়া জন্য সংগ্রাম করতে হয় তাদের মুখে খাবার তুলে দিচ্ছি না। যারা সমাজে বিত্তবান বাহারি খাবারের সাজানো থাকে যাদের টেবিল আমরা তাদেরকে দাওয়াত করে খাওয়াই।

এর পিছনে অবশ্য একটা কারণও রয়েছে আমাদের সমাজে একটা রীতি প্রচলিত রয়েছে কারো দাওয়াত খাওয়ার পর গিফট হিসেবে কিছুনা কিছু দিতে হয়। যদিও আমরা জানি, মানুষ মানুষকে গিফট দেয় খুশি মনে, এটা জোর করে চেয়ে নেওয়ার বিষয় না। বর্তমানে বিয়েতে উপহার দেয়া বাধ্যতামূলক একটি প্রথায় পরিণত হয়ে গেছে। যার কারণে বিয়ে কিংবা সমাজিক যে কোন অনুষ্ঠানে বেছে বেছে বিত্তবানদের দাওয়াত করা হয়।

আসলে এটা যে বিত্তবানদের প্রতি ভালোবাসা তা কিন্ত নয় একান্তই নিজস্বার্থ। কারণ বিত্তবানদের দাওয়াত করলে দুটো টাকা বেশি পাওয়া যাবে। শুধু তাই নয়-কেউ বিয়েতে কমমূল্যের গিফট দিলে তার বদনাম করা হয়, তাকে ছোটলোক ভাবা হয় আর কি! এদিকে বড়লোকের বিয়েতে আজকাল নগদ হিসাবে এক হাজার টাকার নিচে গিফট দেয়া যায় না। ঘনিষ্ঠ বন্ধু-বান্ধবী হলে তো টাকার পরিমাণ আরো বাড়াতে হয়।

আবার এমনও কিছু পরিবারের কর্তা আছেন যারা এই গিফটের হিসাব লিপিবদ্ধ করা খাতাটি সযত্নে সংগ্রহ করে রাখেন। কেউ দাওয়াত দিলে তার সেই পুরোনো খাতা বের করে দেখেন, ওই ব্যক্তি তার দাওয়াতে কত দিয়েছিল। সেটা দেখে তাকে গিফট দেয়া হয়। কি অদ্ভূত কাণ্ড! এ কেমন সৌজন্যতা? এ কেমন সম্পর্ক! বিয়ের দাওয়াত যেন গরিবের জন্য মহা একটি বিপদ। বিয়ের দাওয়াত একটা আনন্দের খবর।

কিন্তু দাওয়াত পেয়ে এখন মানুষ খুশি হওয়ার চেয়ে গিফটের কথা চিন্তা করে হিসাব কষতে থাকে। যদি এমন হতো যে বিয়েতে গিফট দেয়ার কোনো চিন্তা না থাকতো তাহলে হয়তো কোনো চিন্তা না করে সম্পর্কের টানে বিয়ের আনন্দে শামিল হতেন।

আত্মীয়দের মধ্যে কে বড়লোক, কে গরিব এসব বাছ-বিচার না করে এবং কারো কাছ থেকে কিছু পাওয়ার আশা না করে সন্তুষ্টচিত্তে নিজের সামর্থ্য অনুযায়ী দাওয়াত খাওয়াতে হবে। কাজেই বিয়ে-শাদীসহ সকল ধর্মীয় অনুষ্ঠানে উপহারের প্রচলিত প্রথা পরিহার করা জরুরি।

ইমরান হোসাইন

শিক্ষার্থী : গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়।

somoybulletin

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *