কোথায় আমাদের পাখিদের প্রতি ভালোবাসা ?
মানুষের বসবাসের জন্য আমরা অনেক কিছু করে থাকি। কিন্তু পাখিরা আমাদের পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার জন্য ওদের সাধ্যমতো সহায়তা করছে। এতে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা হচ্ছে, পাশাপাশি পৃথিবীর বৈচিত্র ফুটে উঠছে। পাখি বাঁচলে প্রকৃতি বাঁচবে, বাঁচবে মানুষ। কিন্তু বাংলাদেশের পাখিরা দৈন্যদিন বিপন্ন হচ্ছে। তাই পাখিদের প্রতি ভালোবাসা প্রবহমান হতে হবে।বাংলাদেশে নানা জাতের পাখি ক্রমেই হারিয়ে যাচ্ছে। এর প্রধান কিছু অন্যতম কারণ মানুষের পাখি শিকার করা আর দুর্যোগ। পাখির জন্য তাই দরকার নির্ভয় পরিবেশ, যেখানে পাখিদের জীবন বিপন্ন হওয়ার কোনো সযোগ থাকবে না।
পাখি শিকার আমাদের দেশে অবৈধ হলেও পাখি স্বীকার কিন্ত কমে নি।শহরে পাখির কোলাহল নেই বললেই চলে।গ্রামে সেই তুলনায় বেশি থাকলেও পাখি স্বীকারের হার টাও তুলনামুলক বেশি।গ্রামে মানুষ বিভিন্ন কায়দায় পাখি স্বীকার করে থাকে।এ বিষয়ে গ্রাম অঞ্চলে আইনী জটিলতার প্রভাব টাও খুব একটা দেখা যায় না।থাকলেও আইনের চোখ ফাঁকি দিয়ে প্রতিনিয়ত পাখি স্বীকার করছে মানুষ।পাখিদের প্রতি ভালোবাসা বিন্দু মাত্র থাকলে মানুষ পাখি স্বীকার করতো না। আমাদের দেশে অতিথি পাখি এখন আর তেমন দেখা যায় না।এর কারণ আমাদের দেশে পাখি নিরাপদ না।আমাদের দেশে বর্তমান সে প্রজাতির পাখিই বেশি যেগুলো মানুষ স্বীকার করে খায় না।
কতো জাতের পাখি এখন আমাদের দেশ থেক বিলুপ্ত প্রায়।আমাদের জাতীয় পাখি “দোয়েল” এর কথায় ভাবুন না।এখন কি আর হর হামেশায় চখে পরে আমাদের জাতীয় পাখি? আমাদের পরের প্রজন্ম এসে যখন জানবে আমাদের জাতীয় পাখি দোয়েল তখন তো তারা অবাক হয়ে যাবে।ভাববে যে পাখিটা আমাদের জাতীয় পাখির খেতাবে, সে পাখি টা এখন আমাদের দেশ থেকে বিলুপ্ত।একটা সময় মানুষের ঘুম ভাঙতো পাখির কিচিরমিচির ডাকে,আর এখন ঘুম ভাঙে মানুষ আর যান্ত্রিক কোলাহলে।যে পাখি গুলো আমাদের পরিবেশের ভারসাম্য ঠিক রতাখতে সাহায্য করে আমরা তাদের বিলুপ্ত করে দিচ্ছি।
পাখিদের ভালোবেসে ব্যতিক্রমী উদ্যোগ গ্রহণ
পাখির নিরাপদ আবাসনের জন্য এক ব্যতিক্রমি উদ্যোগ গ্রহণ করেছে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) একমাত্র পরিবেশ বিষয়ক সংগঠন অভয়ারণ্য।পাখিদের ভালোবেসে নিরাপদ আবাসনের জন্য কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের আশে-পাশে গাছে গাছে বেঁধে দিয়েছেন মাটির কলসি। ক্যাম্পাসের পাখিদের নিরাপদ বাসস্থান নিশ্চিত করতে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন জায়গায় নীড় বাঁধার জন্য ৬০ টি কলস গাছে-গাছে ঝুলিয়ে দিয়েছে প্রকৃতি প্রেমিক শিক্ষার্থীরা।
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈশাখী চত্বর , মুক্ত-মঞ্চ ও রাস্তার পাশের জায়গায়ার গাছগুলোতে শিক্ষার্থীরা বেশ সংখ্যক মাটির কলস বেঁধে দিয়েছেন, যাতে সেখানে পাখির অভয়ারণ্যে পরিণত হয়।
পাখিরা যাতে নিরাপদে থাকতে পারে সেজন্য ওই সব মাটির কলসিতে তারা বাসা বেঁধে থাকবে। এছাড়া গাছগুলোকে পাখিদের বসবাসের উপযোগী করে তুলতে গাছের চারপাশে ঝোপ সৃষ্টি করে।
গাছের পরিচিতের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন গাছে পরিচিতি ফলক লাগিয়েছে। গত মঙ্গলবার (১৫ ই ফেব্রুয়ারি) বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈশাখী চত্বরে সংগঠনের অন্যান্য সদস্য ও বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষকদের উপস্থিতিতে বিকাল চারটায় এ কার্যক্রম সম্পন্ন হয়।
এ কার্যক্রমের ব্যাপারে অভয়ারণ্য কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি সাজ্জাদ বাশার বলেন, এই আইডিয়াটি আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেক্ষাপটে নতুন। দীর্ঘদিন ধরেই প্লান ছিলো এরকম উদ্দোগ নেওয়ার। কিন্তু করোনার কারনে সম্ভব হচ্ছিল না। অবশেষে আমরা সকলে মিলে ক্যাম্পাসের পাখিদের জন্য কিছু করতে পারলাম। সামনের দিনেও আমাদের কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।
কতটুকু পাখিদের জন্য় সদয় থাকা উচিত:
আল্লাহর সৃষ্টিকুলতার এক অপূর্ব নিদর্শন পাখি। পাখিদের প্রতি সদয় হয়ে পরিবেশের ভারসাম্য ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য রক্ষার ক্ষেত্রে পাখি বিলুপ্ত হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করা সকলের দ্বায়িত্ব। অতিথি পাখিদের পূর্ণ নিরাপত্তা প্রদানসহ আল্লাহর সব সৃষ্টির প্রতি সদয় ব্যবহার এবং দয়া প্রদর্শন করা মুসলমানদের ইমানি দায়িত্ব ও কর্তব্য। তাই সকল পশু পাখিদের প্রতি ভালোবাসা অবহমান।আমরা হয়তো ভুলে যাই এ পৃথীবীতে শুধু মানুষের বসবাসেরই হক নেই, আল্লাহর সৃষ্টি সকল জীবের হক রয়েছে।মানুষরা যদি নিজের ভালো থাকার পাশাপাশি অন্যান্য জীবের ভালো থাকা নিয়ে চিন্তা করে তবেই পরিবেশের ভারসাম্য ঠিক থাকবে।একা ভা্লো থাকা অন্য কারো ধ্বংসের কারণ হতে পারে, আর এক সাথে ভালো থাকা নতুন সৃষ্টির ইঙ্গিত দেয়।
অভয়ারণ্য কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় ২০১৫ সাল প্রতিষ্ঠিত। ৩ সেপ্টেম্বর সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা ও পাখির জন্য অভয়ারণ্য গড়ে তুলতে নীরবে কাজ করে চলেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিষয়ক এই সংগঠনটি।পাখিদের প্রতি ভালোবাসা দেখানো হতে পারে আপনের একটি মহৎ গুণ।শুধু পাখি নয় সৃষ্টির সকল জীবের প্রতি আমাদের ভালোবাসা থাকা উচিৎ।এ দায়িত্ব শুধু আমাদের একার নয়,এ দায়িত্ব আপনার আমার সকলের।আসুন আমরা সকলে পাখিদের ভালোবেসে বিলুপ্ত হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করি।
আরো পড়ুনঃ রোনালদোর দেশে ময়মনসিংহের ৩ ফুটবলকন্যা কন্যা
আমাদের ফেসবুক পেজঃ সময় বুলেটিন