জ্ঞানভিত্তিক সমাজ নির্মাণে পাঠাগার

Library

জ্ঞানভিত্তিক সমাজ নির্মাণে পাঠাগার, পড়িলে বই আলােকিক হয়’ বহু পুরানাে এই স্লোগান নিয়ে মানুষ এগিয়ে যাচ্ছে বইয়ের জগতে। বই দরকার আমাদের মনের খােরাক জোগাতে। মনের তৃষ্ণা মিটানাের জন্য বই পড়ার যে কত দরকার যারা নিয়মিত বই পড়ে তারা জানেন। শতাব্দী থেকে শতাব্দী ধরে মানব সভ্যতার সকল জ্ঞান জমা হয়ে আছে গ্রন্থের ভেতর।

অন্তহীন জ্ঞানের আঁধার হলো গ্রন্থ, আর গ্রন্থের আবাসস্থল গ্রন্থাগার। মানুষের হাজার বছরের লিখিত-অলিখিত সব ইতিহাস ঘুমিয়ে আছে একেকটি গ্রন্থাগারের ছোট ছোট তাঁকে। গ্রন্থাগার হলো কালের খেয়াঘাট, যেখান থেকে মানুষ সময়ের পাতায় ভ্রমণ করে। প্রাচীন শিলালিপি থেকে আধুনিক লিপির গ্রন্থিক স্থান হলো গ্রন্থাগার। একটি গ্রন্থাগার মানব জীবনকে পাল্টে দেয়।

গ্রন্থ কিবা গ্রন্থাগার আত্মার খোরাক যোগায়। গ্রন্থাগার হলো শ্রেষ্ঠ আত্মীয় যার সাথে সবসময় ভালো সম্পর্ক থাকে। আর জ্ঞানচর্চা ও বিকাশের ক্ষেত্রে গ্রন্থাগারের ভূমিকা অনন্য। মানুষ আলোক পথচারী। আলোর পথে এগিয়ে মানুষ হতে চায় আলোকিত মানুষ। সুন্দরের তৃষ্ণা তার বুকে।

জ্ঞান, প্রজ্ঞা, অহিংসা এবং ভালোবাসার মন্ত্রে সে নবযুগের ঋত্বিক। সে আজ নিজেকে বিশ্বপথিকরূপে চিহ্নিত করতে চায়। মানুষের এই আলোকিত জীবন-সংস্কৃতির প্রথম ও প্রধান অগ্নিফুলিঙ্গ সে পাঠাগার থেকে আহরণ করেছে। সভ্য মানুষের জ্ঞানপিপাসার চিরন্তন আধার পাঠাগার। তাই আলোকিত মানুষ তৈরিতে চাই পাঠাগার। যুগের পরিক্রমায় যেমনটা বাড়ছে ই-বুকে বই পড়ার সুযােগ তেমনি জেলা উপজেলায় পাঠাগার গড়ে ওঠায় বই পড়া আরাে সহজ হয়ে ওঠছে ।

তবে বেশিরভাগ গ্রামগঞ্জে পাঠাগার গড়ে ওঠেনি ফলে ঐ এলাকার মানুষ গুলাে বঞ্চিত হচ্ছে জ্ঞানের আলাে থেকে। জ্ঞানতৃষ্ণা বিহীন একটা মানুষকে যে কেউ চাইলে সহজেই খারাপ কাজে পরিচালিত করতে পারে। আর তরুণ প্রজন্মের পাঠাগারে বই পড়ার মাধ্যমে মাদকাসক্ত ও বিভিন্ন খারাপ নেশার চোবল থেকে রক্ষা পাবে। সমাজের কেউ যেন জ্ঞানের আলাে হতে বঞ্চিত না হয় সেদিকে ভূমিকা রাখে আলােকিত পাঠাগার। প্রয়ােজনের তুলনায় মানসম্মত পাঠাগারের সংখ্যা বাড়েনি।

প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলােতে পাঠাগার নেই বললেই চলে। এ অবস্থায়। সরকারি উদ্যোগে প্রতিটি গ্রাম মহল্লায় পাঠাগার স্থাপন করা খুব জরুরমানুষের বুুই পড়ার আগ্রহ থেকেই গ্রন্থাগারের উৎপত্তি। গ্রন্থাগার একটি জাতির বিকাশ ও উন্নতির মানদণ্ড। পাঠাগার মানুষের বয়স, রুচি ও চাহিদা অনুযায়ী বই সরবরাহ করে থাকে। গ্রন্থাগারের মাধ্যমে মানুষের মধ্যে গড়ে ওঠে সংহতি, যা দেশ গড়া কিংবা রক্ষার কাজে অমূল্য অবদান।

চিন্তাশীল মানুষের কাছে গ্রন্থাগারের উপযোগিতা অনেক বেশি। গ্রন্থাগার জ্ঞান আহরণের সহজ মাধ্যম। আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশে গ্রন্থাগারের উপযোগিতা উন্নত দেশগুলোর চেয়ে অনেক বেশি। কারণ মৌলিক চাহিদা মেটাতেই আমরা হিমশিম খাই। তাই আমাদের পক্ষে বই কিনে পড়া অনেক সময় সম্ভব হয় না। পাঠাগার আলোকিত করে তোলে মানুষকে।

পাঠাগার মানুষকে তার আত্মিক অন্বেষনের পথ নির্দেশ করে যা ক্ষুধা-তৃষ্ণা; শ্বাস-প্রশ্বাসের মতোই একান্ত জরুরি। আমাদের সমাজকে শিক্ষিত করে তুলতে হলে, শিক্ষিত রাষ্ট্র পেতে হলে আমাদের চাই আলোকিত মানুষ। আর আলোকিত মানুষ পেতে চাই পাঠাগার। পাঠাগার মানুষের জ্ঞানের সব দুয়ার উন্মোচন করে মানবাত্মা করে তোলে প্রজ্জ্বলিত। পাঠাগার আমাদের চারপাশের রহস্যময় বিশ্বের দুয়ার খুলে দেয়। সমাজের মস্তিষ্ক ও জ্ঞানধার হলো পাঠাগার। তাই দীপ্ত, মেধা ও নৈতিকতার সমন্বয়ে সুশীল সমাজ পাবার লক্ষ্যে সমাজের প্রতিটি স্তরে পৌঁছে দিতে হবে এই শ্লোগান- “আলোকিত মানুষ চাই আলোকিত মানুষ তৈরির জন্য পাঠাগার চাই”।

ইমরান হোসাইন

শিক্ষার্থী : গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়।

সদস্য, বাংলাদেশ তরুণ কলাম লেখক ফোরাম কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা।

https://somoybulletin.com/#

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *