চলচিত্র আমাদের সোনালী অতীত ফিরে আসুক

আমাদের সোনালী অতীত
আমাদের সোনালী অতীত

চলুন ফিরে যাওয়া যাক চলচিত্র শিল্পের আমাদের সোনালী অতীত এ

একটা সময় বিনোদনের একমাত্র মাধ্যম হিসেবে ধরা হতো চলচিত্রকে। নতুন চলচিত্র অপেক্ষায় থাকতো চলচ্চিত্র প্রেমীরা। সপ্তাহ শেষে প্রেক্ষাগৃহের পাশাপাশি সরকারি টেলিভিশন ভিটিবি তে নির্ধারিত দিনের ছবি দেখার অপেক্ষায় থাকতো দর্শক। বাংলা সিনেমার সোনালী যুগ বলাতে আমরা বুঝি ৬০ থেকে ৮০’র দশক সময়কে।

তখনকার সময়ে ছবি মুক্তি মানেই সিনেমা হল ভর্তি দর্শক। বর্তমান সময়ের মতো প্রযুক্তির দিক থেকে উন্নত না হলেও তখনকার ছবিগুলো ছিল মানসম্পন্ন। এওছাড়া সিনেমার গল্পও ছিলো অনন্য। যার উদাহরণ হিসেবে বলা যায় ‌‘জীবন থেকে নেয়া’, ‘তিতাস একটি নদীর নাম’, ‘ছুটির ঘণ্টা’, ‘সারেং বউ’, ‘বেদের মেয়ে জ্যোৎস্না’সহ আরো অনেক ছবি। হলগুলো সব ছবি দিয়েই বেশ ব্যবসা করতো। আমাদের সোনালী অতীত কোথায় হারিয়ে গেল!!!

কিন্তু বর্তমানে চলচিত্র শিল্প এক বিরাট হুমকির সম্মুখীন। সাদা চোখে মনে হয় তথ্যপ্রযুক্তির উৎকর্ষই চলচিত্র শিল্প বিকাশের অন্তরায়। দুই ঈদের আগে কয়েকটি নতুন সিনেমার প্রচার দেখা গেলেও সারা বছর বলতে গেলে নতুন কোনো সিনেমার দেখা মেলে না। নতুন চলচ্চিত্র দর্শক মহলে আলোচনাও সৃষ্টি করতে পারছে না। অনেক আগে থেকেই কিছু পরিচালক-প্রযোজক এবং কিছু চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বুঝতে পারছিলেন চলচ্চিত্রাঙ্গনে দ্রুতই প্রয়োজন হবে নতুন কিছুর। আর যারা একথা বোঝেননি তারা একবিংশ শতাব্দীতে এসেও নির্মাণ করছেন ধার করা গল্পে মানহীন ছবি।

আর এই দুয়ের কারণে সিনেমা ব্যবসায় নেমেছে ধ্বস। বন্ধ হয়ে গেছে সিনেমা হল। তবে সবচেয়ে ক্ষতি হয়েছে বিশ্বাসের। দিনে দিনে হলে গিয়ে সিনেমা দেখার বিশ্বাস হারিয়ে ফেলছেন দর্শকরা। চলচিত্র সম্পর্কে সাধারণ মানুষের যে ভালোবাসা ছিল তা এখন তলানিতে । স্বাধীনতার পর এ দেশের সিনেমা হলের সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে পেতে প্রায় হাজারের কাছাকাছি পৌঁছায়।আমাদের সোনালী অতীত ছিল খুব সুন্দর ও মার্জত।

কিন্তু বর্তমানে সমগ্র দেশে সিনেমা হলের সংখ্যা বিলুপ্ত হতে হতে শ’খানেকের ঘরে নেমে এসেছে । মানসম্মত সিনেমার অভাব হলের লোকসান হওয়ার সবচেয়ে বড় কারণ দর্শক খরা। দর্শক যা দেখতে আসবে সেই সিনেমায় রয়েছে সৃজনশীলতার অভাব। দেশে তেমন সৃজনশীল সিনেমা বানানো হয় না বললেই চলে। যে কারণে এ ইন্ডাস্ট্রির বয়স ৫০ বছর হলেও বিশ্ব মানচিত্রে তেমনভাবে জায়গা করে নিতে পারেনি। এমনকি জায়গা করতে পারছে না নিজ দেশের দর্শকের মনেও।

আমাদের সোনালী অতীত এ ছিলনা কোন অশ্লীলতার ছড়াছড়ি। কিন্তু এখন নকল কাহিনীতে তৈরি সিনেমায় রুচি হারিয়েছে দেশের মধ্যবিত্ত সমাজ। তাই চলচিত্রের সোনালী অতীত ফিরিয়ে আনার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। আবার নতুন করে চলচিত্র ইন্ডাস্ট্রি কে ঢেলে সাজাতে হবে। নকলকে কেউ পছন্দ করে না, আর নকলের কোনও গ্যারান্টিও নেই। সুতরাং তামিল ছায়াছবি ও হিন্দি ছায়াছবির হুবহু নকল বন্ধ করতে হবে।

আমাদের সোনালী অতীত নিয়ে উক্তি

বিদেশিদের দেখাদেখি অর্ধনগ্ন বা কাটপিস বন্ধ করতে হবে। বর্তমানে চিত্রজগতে নায়ক-নায়িকার খুবই অভাব। নতুন নতুন নায়ক-নায়িকা খুঁজে বের করতে হবে। প্রয়োজনে নাটক, মডেল বা মিউজিক ভিডিও থেকে তারকাদের বেছে নিতে হবে। তবে তারা অভিনয়ে ঠিক উপযোগী কি না, সেটা অবশ্যই ইন্টার্ভিউর মাধ্যমে সুযোগ দেওয়া যেতে পারে। প্রয়োজনে একেবারে নতুনদের জন্য প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার ব্যবস্থা রাখতে হবে। শুধু নায়ক-নায়িকার অভাবই নয়, অভাব পড়েছে কৌতুকাভিনেতারও। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বহু কৌতুকাভিনেতা আছে, যারা সরাসরিভাবে চিত্রপরিচালকদের স্মরনাপন্ন হতে পারছে না।

আগ্রহীদের বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে চলচ্চিত্রে আসার আহ্বান জানানো যেতে পারে। বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে আমাদের সোনালী অতীত এর খলনায়কেরও খুবই অভাব রয়েছে। বর্তমানে ‘মিশা সওদাগর’ ছাড়া খলচরিত্রের কথা ভাবাই মুশকিল। ‘মিশা সওদাগর’ একদিন না-ও থাকতে পারে, তখন কী হবে? তখন হয়ত চলচ্চিত্র নির্মাণ একপর্যায়ে বন্ধ হয়ে যাবে। আগে যাদের দেখেছি, তাদের মধ্যে অনেকেই পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে করেছেন। পুরানো যারা আছেন, তারা আজ বয়সের ভারে দমে গেছে। একসময় এশিয়ার সেরা খলচরিত্রভিনেতা চিলেন, খলনায়ক ‘জসিম’।

তিনি এখন প্রয়াত, চিত্রজগত থেকে দূর জগতে। কাজেই, নতুন নতুন খলনায়কও খুঁজে বের করতে হবে। তা-ও টেলিভিশনে, রেডিওতে, পত্রপত্রিকায় বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে। সম্প্রতি বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচন হয়ে গেল। একসময়ের রুপালি পর্দার আলোচিত নায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন সমিতির সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন। তার সঙ্গে রয়েছেন একঝাঁক গুণী শিল্পী। নবীন-প্রবীণের সমন্বয়ে নির্বাচিত এ কমিটির কাছে আমাদের প্রত্যাশা আপনারা হারানো অতীত ফিরিয়ে আনুন।

আমাদের সোনালী অতীত এর চলচিত্র নির্বাচন

শিল্পীদের মধ্যে বর্তমানে বিদ্যমান দলাদলি, দ্বন্দ্ব, সংঘাত, কাদা ছুড়াছুড়ি এগুলো অবসান ঘটিয়ে সবাইকে একসাথে কাজ করারর মানসিকতা তৈরি করুন এবং শিল্পীরা নিজেদের স্বার্থেই পারস্পরিক সৌহার্দ্যতা, আন্তরিকতা ও শ্রদ্ধাবোধ ফিরিয়ে আনতে সচেষ্ট হোন। পরিচালক, প্রযোজক, শিল্পী, কলা-কুশলী সবাইকে নিয়ে কাঁধে কাঁধ রেখে শিল্পের উন্নয়নে কাজ করুন। নানা মানুষ নানা মত থাকবে। এটাই গণতন্ত্রের অলংকার। সবাইকে নিয়ে কাজ করতে পারাটাই হলো আসল নেতৃত্বের পরিচয়। আমরা চাই চলচ্চিত্রের জীবন্ত কিংবদন্তিদের অনুসরণে শিল্পী ও কলাকুশলী তৈরি হোক, যাদের হাত ধরে আমাদের হারানো অতীত ফিরে আসবে।

আরো পড়ুনঃ- জনপ্রিয় নায়ক মান্নার জন্মদিন ১৯৬৪ সালের ১৪ এপ্রিল

আমাদের ফেসবুক পেজঃ সময় বুলেটিন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *