গৃহকর্মী নিজের পরিবারেই একজন

The housemaid is one in her own family
Housemaid with facemak drying the dishes with towel

কেনো গৃহকর্মী নিজের পরিবারেই একজন সদস্য ?

বিশাল জনবহুল দেশ বাংলাদেশ। এই দেশে বিভিন্ন শ্রেণী পেশার লোকজন বসবাস করে। কারও আয় কম, কারও আয় বেশি কারও বা আয় অত্যাধিক। নিরীক্ষে বলতে গেলে, কেউ স্বচ্ছল, কেউ অস্বচ্ছল। স্বচ্ছল মানুষরা অস্বচ্ছল মানুষদের কাজ দেবে তাদের পাশে দাঁড়াবে এইটা মানবিক। এই মানবিক কাজটি করতে গিয়ে যখন স্বচ্ছল মানুষগুলো তাদের মানবিকতা হারিয়ে অমানবিক হয়ে উঠে তখন আমাদের সবারই টনক নড়ে। বলছিলাম গোটা দেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা অসংখ্য গৃহকর্মীর কথা। যারা আমাদের সবার বাসা বা বাড়িতে কাজ করেন। নিত্যদিন, নিত্যক্ষণ আমাদের সবদিকে সহযোগিতা করে যাচ্ছেন।

পারিবারিক জীবনে আমরা কম-বেশি সবাই গৃহকর্মীর ওপর নির্ভরশীল। দিন দিন বাড়ছে এই নির্ভরতা। আমাদের ছোট ছোট পরিবারের কর্তা এবং কর্ত্রী দু’জনই চাকরিজীবী। তাই তাদের বাসার বাইরে থাকতে হয়। ঘরের এবং শিশুদের দেখাশোনার পুরো কাজটি গৃহকর্মীদেরই করতে হয়। বর্তমান সমাজবাস্তবতায় গৃহকর্মীরা পরিবারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তাদের সহযোগিতায় আমাদের পরিবার সচল এবং ছন্দবদ্ধভাবে চলতে থাকে। কিন্তু তাদের পরিশ্রমের তুলনায় পারিশ্রমিক খুবই কম। অনেকে গৃহকর্মীদের মানুষ মনে করে না। প্রায়ই আমাদের চোখে পড়ে, বাচ্চাসহ গোটা পরিবারের সবাই বাইরে কোথাও খেতে গেছে, গৃহকর্মীটি আলাদা বসে আছে। এমন না যে, সেই পরিবারের আরেকটি খাবার কেনার সামর্থ্য নেই।

সামর্থ্য থাকলেও সেই পরিবারের সদস্যদের বিবেক নেই। একজন মানুষের মধ্যে যদি নূ্যনতম বিবেক না থাকে, তবে তার শিক্ষার আর মূল্য থাকল কোথায়? পরিবারের সেই নারী বা পুরুষটি কীভাবে পারেন, একজন বাচ্চাকে অভুক্ত রেখে নিজের বাচ্চাকে খাওয়াতে? অভুক্ত রাখার এই কাজটি কোথাও হয়, কোথাও হয় না। কিছু পরিবার গৃহকর্মীকে আলাদাভাবে দেখেন না। আমরা গৃহকর্মীর ভালো-মন্দের ব্যাপারে উদাসীন। অথচ তারা পরিবারেরই অংশ। তাদের প্রয়োজনীয় খাবার দেওয়া হয় না। বাসার যে জায়গাটা সবচেয়ে বেশি বিদঘুটে অন্ধকার, আলো বাতাসের সুবিধা নেই, এমন জায়গায় তাদের থাকতে দেয়া হয়।

সেখানে একজন মানুষ কষ্ট করে হয়তো থাকতে পারে, কিন্তু হাত-পা ছড়িয়ে একটু আরাম করে ঘুমানোর সুযোগ নেই। আমরা যে সময় গভীর ঘুমে বিভোর থাকি ঠিক সে সময় ভোরবেলা তাদের উঠে আমাদের অফিসের জন্য খাবার তৈরি করতে হয়। ছেলে ময়েদের স্কুলে যাওয়ার জন্য তৈরি করতে হয়। অথচ আমরা তাদের সাথে একটু সুন্দর ব্যবহার করতে পারি না। বরঞ্চ সামান্য একটু এদিক-সেদিক হলেই অকথ্য গালিগালাজ ও শারীরিক নির্যাতনের খড়গ নেমে আসে।

যদি নিজের সন্তান ভয়ানক দুষ্টুমি করার পরও তাকে আমরা শতবার বোঝাতে পারি, তাহলে পরের সন্তানকে কেন আমরা বোঝাবো না? কেন আমরা মাথায় রাখিনা, যে শিশুটির মাঠে দৌঁড়ে খেলার কথা সে শুধুমাত্র অর্থের কারণে গৃহকর্মীর কাজ করতে এসেছে। অর্থাভাবে পড়ে একটি পরিবার কঠোর হয়ে বুকে পাথর বেঁধে তার সন্তানকে পরের হাতে তুলে দিচ্ছে গৃহকর্মীর কাজ করতে। তাই আসুন গৃহকর্মীদের প্রতি মানবিক হই, উত্তম ব্যবহার করি। কোথাও সাথে করে নিয়ে গেলে পরিচয় করিয়ে দিতে কাজের মেয়ে/ কাজের বুয়া না বলে বলুন-গৃহকর্মী বা গৃহ-সহকারী। ধর্মীয় উৎসবে, সামাজিক পার্বণে, পারিবারিক অনুষ্ঠানে নিজেরা কিছু কিনলে তাকেও সাধ্যমতো উপহার দিন। অসুস্থ হলে সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করুন। তাকে প্রয়োজনীয় বিশ্রাম নিতে দিন।

আপনি যা খান তাদেরকেও তা খেতে দিন। ঘুমানোর জন্যে পরিষ্কার মশারি, লেপ/ কম্বল/ কাঁথা, চাদর, স্বাস্থ্যসম্মত ফ্লোর ম্যাট্রেস দিন। রাতে অন্তত ছয় ঘণ্টা ঘুমানোর সুযোগ দিন। অক্ষরজ্ঞান না থাকলে তাকে অক্ষরজ্ঞান দান করুন। সম্বোধনে ‘তুই’ ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন। আপনার চেয়ে বয়সে বড় মনে হলে নামের সাথে চাচা/ খালা/ ভাই/ আপা সম্বোধন করুন। গৃহকর্মী নয় তাদেরকেও নিজেদের সন্তান, বাবা-মার মতো নিজের পরিবারের একজন সদস্য ভাবুন।

আরো পড়ুনঃ পাসপোর্ট করত কি লাগে?

আমাদের ফেসবুক পেজঃ সময় বুলেটিন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *