বৃক্ষ নিধন বন্ধ করা জরুরি সুস্থ জীবন ও সুস্থ পরিবেশের জন্য।

বৃক্ষ নিধন যে কারণে বন্ধ করা উচিৎ

সুস্থ জীবন ও সুস্থ পরিবেশের জন্য বৃক্ষ নিধন বন্ধ করা জরুরি, সৃষ্টিলোকের সেই আদিপ্রাণ বৃক্ষ পৃথিবীকে যুগ যুগ ধরে রক্ষা করেছে ধ্বংসের হাত থেকে। মানুষের ক্ষুধায় জুগিয়েছে ফলমূল, আশ্রয়ে দিয়েছে ছায়া— বিশ্বব্যাপী সুবিস্তৃত বনানী জুড়ে এই আদিপ্রাণ বিকশিত হয়েছে। বায়ু থেকে প্রাণ হরণকারী বিষ আহরণ করে সে বায়ুকে নির্মল করেছে। ঝরা পাতা দিয়ে ভূমিকে করেছে উর্বর, সবুজপত্র পল্লবের আহবানে বর্ষণ ঘটিয়ে পরিবেশকে করেছে আর্দ্র। বৃক্ষ আমাদের প্রাণ, আমাদের প্রাণের পরম বন্ধু। সে আমাদের দিয়েছে বসবাসের আচ্ছাদন, রোগের ওষধি, অনুশীলনের উপকরণ, আমোদ-প্রমোদে বাদ্যযন্ত্র, রৌদ্রতাপে শ্রান্ত পথিককে দিয়েছে শীতল ছায়া। সে বন্যার রক্ষক, ভূমিক্ষয় নিবারক—তার অজস্র অকৃপণ দানে প্রাণী মাত্রই কৃতার্থ কৃতজ্ঞ।

গাছ আমাদের কোনো ক্ষতি না করে সর্বক্ষেত্রে উপকার করে গেলেও আমরাই গাছের সঙ্গে সবচেয়ে নিষ্ঠুর আচরণ করেছি, নগরায়নের নামে আধুনিকতার ছোঁয়া লাগাতে সবার আগে হত্যা করেছি গাছকে। যেন পরিকল্পনা করে নগর থেকে গাছকে আলাদা করেছি। কারণে অকারণে হত্যা করেছি গাছ। পূর্বের চেয়ে বর্তমানে যেন গাছ কাটার প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে গেছে। কয়েক দশক ধরে নির্বিচারে বনাঞ্চল কেটে উজাড় করা হচ্ছে। আজ আমাদের সামনে পরিবেশের গভীর সংকট এই মহা সংকট থেকে আমাদের বাঁচাতে পারে কেবল সবুজ বন্ধুরা, অর্থাৎ, গাছপালা। এটা আমাদের অজানা নয়। কিন্তু তার পরেও বৃক্ষরোপনের তুলনায় বৃক্ষনিধনই আমরা চারপাশে বেশি দেখছি। কিছু টাকার লোভ আর কেবল অপরিণামদর্শী সিদ্ধান্তের কারণে পার্কে, উদ্যানে, রাস্তার পাশের ছায়াদাতা সবুজ গাছগুলোকে নির্দ্বিধায় হত্যা করছি আমরা।

একবারো ভাবছি না গাছ আমাদের জন্য কতটা উপকারী। গাছ ছাড়া পৃথিবীতে আমরা টিকে থাকতে পারবো কিনা? যানবাহন, কলকারখানা, মানুষের শ্বাস-প্রশ্বাস থেকে নির্গত কার্বন ডাই-অক্সাইড প্রতিনিয়ত পরিবেশ দূষিত করছে। গাছ বাতাস থেকে কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্রহণ করে আর অক্সিজেন ত্যাগ করে বাতাসে অক্সিজেনের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। এতে পরিবেশ সুস্থ ও নির্মল রাখে। আর এ অক্সিজেন মানুষের বেঁচে থাকার জন্য খুবই জরুরি। কার্বন ডাই-অক্সাইডের কারণে পরিবেশ উষ্ণ হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনে বিরূপ প্রভাব পড়ছে। এর ফলে অসময়ে অনাবৃষ্টি, খরা, অতিবৃষ্টি, প্রচণ্ড দাবদাহ, ঘূর্ণিঝড়, বন্যা, জলোচ্ছ্বাসসহ নানা দুর্যোগ ঘটে চলেছে। জলবায়ু পরিবর্তনে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। একমাত্র বৃক্ষই প্রকৃতিক পরিবেশ সুস্থ ও নির্মল রাখতে পারে। বাতাসে শ্বাস নিতে না পারলে আমাদের মৃত্যু অনিবার্য। বাতাস থেকে অক্সিজেন নিয়ে আমরা বাঁচি।

নিঃশ্বাসের সঙ্গে আমরা কার্বন ডাই-অক্সাইড নামের বিষাক্ত গ্যাস বাতাসে ছাড়ি। অন্যদিকে গাছপালা বাতাস থেকে কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্রহণ করে ও বাতাসে অক্সিজেন ছাড়ে। গাছপালা না থাকলে একসময় বাতাসের অক্সিজেন একেবারে শেষ হয়ে যেত, আর আমরা মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়তাম। কাজেই গাছপালা আমাদের জীবনের জন্য অত্যাবশ্যক। বাংলাদেশে প্রয়ােজনের তুলনায় বনভূমি অত্যন্ত কম। তদুপরি জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে বনভূমি কর্তনের মাত্রাও ক্রমে বেড়ে যাচ্ছে। প্রকৃতির ভারসাম্য ঠিক রাখার জন্য কোনাে দেশের মােট ভূমির ২৫ ভাগ বনভূমি থাকা উচিত। প্রাপ্ত তথ্য মতে ১৯৪৭ সালে দেশের আয়তনের ২৪ ভাগ বনভূমি ছিল।

১৯৮০-৮১ সালে তা কমে হয় ১৭.২২ ভাগ এবং বর্তমানে মাত্র ১৭.০৮ ভাগ বনভূমি রয়েছে। । আশঙ্কাজনক ঘাটতির কারণে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার বিবিধ প্রয়ােজন মেটানাে। এর মধ্যে কৃষি জমির সম্প্রসারণ, বসতবাড়ি স্থাপন, শিল্পে কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার, গৃহনির্মাণ সামগ্রী ও আসবাবপত্রের ও ব্যবহার, রাস্তা, বাঁধসহ বিভিন্ন অবকাঠামাে নির্মাণ, জ্বালানি হিসেবে ব্যাপক ব্যবহার, নগায়ন ইত্যাদি উল্লেখযােগ্য। উল্লিখিত কারণগুলাের মধ্যে জ্বালানি হিসেবে বনসম্পদের ব্যবহার ৯৫ শতাংশ দায় ভার বহন করে। এ ছাড়া নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেমন বন্যা, খরা, ঘূর্ণিঝড় ও সামুদ্রিক জলােচ্ছ্বাস বৃক্ষের ব্যাপক ক্ষতি করে। অদূর ভবিষ্যতে সাধারণ প্রয়ােজনে বৃক্ষ সংকট এক প্রকট সমস্যা হয়ে দাড়াবে। তাই সুস্থ জীবন ও সুস্থ পরিবেশের জন্য বৃক্ষ নিধন বন্ধ করার পাশাপাশি বৃক্ষ রোপন করার প্রতি মনোনিবেশ করতে হবে।

বৃক্ষ রোধনের বর্তমান প্রভাব

বর্তমান আমাদের দেশে বৃক্ষ রোধনের ব্যাপক প্রভাব দেখা দিচ্ছে।আবহাওয়া ও জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে মানুষের সুস্বাস্থ্য তে ব্যাপক প্রভাব ফেলছে বৃক্ষ রোধন।প্রয়োজনের সময় হচ্ছে না বৃষ্টি,এতে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে কৃষক ভাইয়েরা।দেশ হারাচ্ছে অধিক ফসল উৎপাদন এর ক্ষমতা।ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে দেশের অর্থনীতির।বৃক্ষ রোধনের কারণে দেশের মানুষের সুস্বাস্থ্য হুমকির মুখে।বন বিভাগ কর্মকর্তাদের এ বিষয়ে সচেতন থাকা দরকার,বৃক্ষ রোধনে তাদের হতে হবে কঠিন।রুখতে হবে বৃক্ষ রোধন।

আমাদের ফেসবুক পেজেঃ সময় বুলেটিন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *