বাংলাদেশের হারের দিনে রিয়াদের সেঞ্চুরি উৎসব Somoybulletin

[ad_1]

মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের মুখভর্তি দাড়ি, হেলমেট। তবুও ফাঁক গলে স্পষ্ট তার হাসি।
ম্যাচ জয়ের গাণিতিক সম্ভাবনা তখনও শেষ হয়নি, ছয় বলের পাঁচটিকে ছক্কা হাঁকাতে হবে; সুস্থ মস্তিস্ক সম্পূর্ণ মানুষ মানেই জানেন ৩৪ বলের সবগুলোতে ছক্কা মারা সম্ভব নয়। কিন্তু রিয়াদের হাসিটা যে ম্যাচ জেতানোর জন্য নয়, অজানা থাকার কথা নয় কারও।  

ওয়াংখেড়েতে মাহমুদউল্লাহ সেঞ্চুরি ছুলেন যখন, করতালি এলো প্রায় সবখান থেকেই। রিয়াদের জন্য? সম্ভবত একই সঙ্গে তার লড়াইকে। সেঞ্চুরি উদযাপনে ‍রিয়াদ সেজদায় অবনত হলেন, এর আগে এক আঙুল উঁচিয়ে হয়তো বোঝালেন ‘উপরে কেউ একজন আছে। ’

বছরজুড়ে তার লড়াইটা যে তিনিই জানেন, সাহায্য করেছেন; সম্ভবত বুঝিয়েছেন সেটিও। অষ্টম ব্যাটার হিসেবে হাসান মাহমুদ আউট হয়ে যখন পথ ধরছেন ড্রেসিংরুমের। তখন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ নন স্ট্রাইক প্রান্ত থেকে দৌড়াচ্ছিলেন বলটা হাওয়ায় ভাসার সময়। কোয়েজার হাতে বন্দি হতেই অসহায় রিয়াদ ঘুরলেন সঙ্গে সঙ্গে। অপলক দৃষ্টিতে তাকালেন ড্রেসিংরুমের দিকে।  

ওই পথে আসা-যাওয়ার ভিড়ে তিনিই তখনও কেবল রয়ে গেছেন। লড়াই করেছেন। হার থেকে দল থেকে বাঁচাতে পারেননি। সেটি বোধ হয় সম্ভবও নয়। কিন্তু অনেক লজ্জার রেকর্ডে সবার উপরে নামটি বাংলাদেশের হতে দেননি। হতাশার দিন আর বিশ্বকাপে তার সেঞ্চুরির সঙ্গে এই প্রাপ্তি এই বা কম কী!

ওয়াংখেড়েতে বাংলাদেশ দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ম্যাচ হেরেছে ১৪৯ রানে। প্রথম ইনিংসে প্রোটিয়াদের ৮ উইকেট হারিয়ে ৩৮২ রানের সংগ্রহের পরই ম্যাচের ফলটা নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল প্রায়। পরে বাংলাদেশ সবমিলিয়ে করতে পেরেছে কেবল ২৩৩ রান; ৪৬ ওভার ৪ বল খেলে।

বিশ্বকাপে সবচেয়ে বড় হার অস্ট্রেলিয়ার কাছে আফগানিস্তানের ২৭৫ রানের, একসময় ওই ব্যবধানও ছাড়িয়ে যাওয়ার শঙ্কায় ছিল বাংলাদেশ। ৮ উইকেট চলে যাওয়ার পর বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ব্যবধানে হারটা মনে হচ্ছিল খুবই সম্ভব। কিন্তু সেটি হতে দেননি রিয়াদ।  

২০১১ বিশ্বকাপে ঘরের মাঠে এই দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষেই ২০৬ রানে হারতে হয়েছিল, ওই ম্যাচে অলআউট হয় ৭৮ রানে। সেটিই বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় হার। এমনিতে সবমিলিয়ে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় হার পাকিস্তানের বিপক্ষে ২০০০ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে, ২৩৩ রানে।

দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ম্যাচে টসটি গুরুত্বপূর্ণ ছিল ম্যাচের ভাগ্য নির্ধারণে। আগের দিন সেটি উপলব্ধি করে সবার কাছে দোয়াও চান সাকিব। কিন্তু জিততে পারেননি শেষ অবধি। টস হেরে ফিল্ডিংয়ে নামতে হয় বাংলাদেশকে।  

এরপর এই ম্যাচে খেলতে নামে তাওহীদ হৃদয়কে ছাড়া। দলের কম্বিনেশন অথবা খারাপ পারফরম্যান্স; যে কারণেই হোক সাকিব আল হাসানকে জায়গা করে দেন তিনি। মুশফিকুর রহিম ও নাজমুল হোসেন শান্তর পর চলতি বছর তৃতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক ছিলেন হৃদয়।  

বাংলাদেশকে প্রথম উইকেটের জন্য অবশ্য লম্বা অপেক্ষা করতে হয়নি। শরিফুল ইসলাম সপ্তম ওভারের প্রথম বলে বোল্ড করেন ১৯ বলে ১২ রান করা রেজা হেনড্রিকসকে। পরের উইকেটের জন্যও অপেক্ষা করতে হয়নি বেশিক্ষণ। ইনিংসের শুরু থেকে বল করা মেহেদী হাসান মিরাজ এবার ৭ বলে ১ রান করা রাসি ফন ডার ডুসেনকে এলবিডব্লিউ করেন।  
 
মিরাজকে সাকিব চালিয়ে নেন পরেও। তাকে দিয়ে করানো টানা ছয় ওভারে কিছুটা অস্বস্তিতেও ছিলেন কুইন্টন ডি কক। কিন্তু সেটি যে একদমই সাময়িক, পরে যত সময় গেছে ভালোমতোই বুঝিয়ে দিয়েছেন তিনি। ১৩৭ বলে ১৩১ রানের জুটি গড়েন এইডেন মারক্রামের সঙ্গে। ৭ চারে ৬৯ বলে ৬০ রান করা মারক্রামকে ফেরান সাকিব।  

কিন্তু ডি কক সেঞ্চুরি ছুঁয়েছেন, এরপর আরো বিধ্বংসী রূপই ধারণ করেছেন তিনি। এর মধ্যে সাবেক অধিনায়ক গ্রায়েম স্মিথকে ছাড়িয়ে বাংলাদেশের বিপক্ষে ওয়ানডেতে প্রোটিয়াদের হয়ে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক হয়ে গেছেন তিনি। ৬০১ রান করেছেন তিনি ১০ ইনিংসে, ১২ ইনিংসে স্মিথের রান ছিল ৫৭২।

এবারের বিশ্বকাপে ১০১ বলে নিজের তৃতীয় শতক ছোঁয়া এই ব্যাটার পরের পঞ্চাশ রান করেছেন স্রেফ ২৮ বলে। সাকিবের করা ৪৩তম ওভারে ২২ ও শরিফুলের পরের ওভারে নেন ১৭ রান।  

ইনিংস শেষের আগেই অবশ্য তাকে ফেরানো গেছে। হাসান মাহমুদের ফুল লেংথের বল খেলতে গিয়ে ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে দাঁড়ানো নাসুম আহমেদকে ক্যাচ দেন ডি কক। ভাঙে ক্লাসেনের সঙ্গে ১৪২ রানের জুটি। ৭ ছক্কা ও ১৫ চারে ১৪০ বলে ১৭৪ রান করা এই ব্যাটার ড্রেসিংরুমে ফেরেন দর্শকদের কাছ থেকে অভিবাদন পেতে পেতে।
 
দারুণ এক ইনিংস খেলে ভেঙেছেন রেকর্ড। উইকেটরক্ষক ব্যাটার হিসেবে এটাই বিশ্বকাপে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ রানের ইনিংস। এর আগে ২০০৭ বিশ্বকাপ ফাইনালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ১৪৯ রান করেছিলেন অজি কিংবদন্তি অ্যাডাম গিলক্রিস্ট।

ডি কককে ফিরিয়েও অবশ্য কাজ হয়নি তেমন। এরপর তাণ্ডব চালান হাইনরিখ ক্লাসেন ও ডেভিড মিলার মিলে। টানা দ্বিতীয় সেঞ্চুরির কাছে থাকা ক্লাসেন শেষ ওভারে আউট হওয়ার আগে ৪৯ বলে ২ চার ও ৮ ছক্কায় করেন ৯০ রান। এছাড়া মিলার অপরাজিত থাকেন ১৫ বলে ৩৪ রানের ক্যামিও ইনিংস খেলে। বাংলাদেশের হয়ে হাসান দুটি উইকেট শিকার করেছেন। সাকিব, মিরাজ ও শরিফুলের ঝুলিতে যায় একটি করে উইকেট।

বাংলাদেশের ইনিংসজুড়েই ছিল হতাশার গল্প, পুরো বিশ্বকাপেই আসলে একই দশা। আগের ম্যাচে ভালো শুরু এনে দেওয়া উদ্বোধনী জুটি এদিন থেমেছে কেবল ৩০ রানে। কিন্তু জুটি হয়েছে ওই একটিই। ১৭ বলে ১২ রান করে মার্কো জেনসেনের বলে আউট হন তানজিদ। এরপর এক রানের ভেতর আরও দুই উইকেট হারায় বাংলাদেশ।  

লেগ স্টাম্পের বাইরের বল ফ্লিক করতে গিয়ে উইকেটরক্ষকের হাতে ক্যাচ দেন নাজমুল হোসেন শান্ত। এরপর ৪ বলে ১ রান করা সাকিবও উইকেটরক্ষক ক্লাসেনের হাতেই ক্যাচ দেন। হতাশা কাটিয়ে বাংলাদেশের সুযোগ ছিল না এমনিতেও, সেটি পারেওনি।  

লিটন দাসের ব্যাটিংয়ে ভালো কিছুর প্রত্যাশা ছিল যাদের, তাদের আশাহতই হতে হয়েছে। ৩ চার ও ১ ছক্কায় ১৮ রান করে ফেলে এই ব্যাটার বাকি ৪০ বলে নিতে পেরেছেন স্রেফ চারটি সিঙ্গেল। ৪৪ বলে ২২ রান করে রাবাদার ওভারে এলবিডব্লিউ হয়েছেন তিনি।
 
এর আগেই ফিরে যান অভিজ্ঞ মুশফিকুর রহিম। তার সাজঘরে ফেরার পরে একাই লড়াই করে যান মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। তাকে সঙ্গ দিতে এসে ফেরেন নাসুম আহমেদ (১৯) ও হাসান মাহমুদ (১৫)। এরপর তিনি লড়ে যান মোস্তাফিজুর রহমানের সঙ্গে। গড়েন ইনিংসের সর্বোচ্চ জুটি, দলের সংগ্রহ দুইশ পার করার পাশাপাশি হাঁকান সেঞ্চুরিও। ১০৪ বলের এই শতকটি সাজিয়েছেন ১০ চার ও ৩ ছক্কায়।

এটি ওয়ানডেতে রিয়াদের চতুর্থ শতক, সবগুলোই আইসিসি ইভেন্টে। আগের তিনটির মধ্যে একটি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে, দুটি ২০১৫ সালের বিশ্বকাপে। দারুণ এই ইনিংস খেলে রিয়াদ বিদায় নেন ৪৫তম ওভারে। কোয়েটজের বল উড়িয়ে মারতে গিয়ে ধরা পড়ে ইয়ানসেনের হাতে। ১১১ বলে ১১ রান করে সাজঘরে ফেরেন তিনি। করতালি দিয়ে তাকে অভিবাদন জানাতে ভুল করেননি কেউই। পরের ওভারেই মোস্তাফিজ বিদায় নিলে গুটিয়ে যায় বাংলাদেশের ইনিংস।  

দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে ৩ উইকেট পান কোয়েটজে। জোড়া উইকেট শিকার করেন ইয়ানসেন, উইলিয়ামস ও রাবাদা। একটি উইকেট নেন মহারাজ।

বাংলাদেশ সময়: ২২৩৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৪, ২০২৩
এমএইচবি/আরইউ



[ad_2]
Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *