[ad_1]
ছয় ফুট সাত ইঞ্চি উচ্চতার লম্বা একটা মানুষ। তাকে দেখে চিনতে না পারার কোনো কারণ নেই।
ধর্মশালার প্রেসবক্স লাগোয়া রেডিও কমেন্ট্রি বক্স। ওখানেই ধারাভাষ্য দিচ্ছেন স্টিভেন ফিন। কয়েক দফা তার জন্য অপেক্ষার পর সাক্ষাৎকার চাইতেই বললেন ‘আজ অনেক কাজ, ধারাভাষ্য দিয়ে ক্লান্ত। ’
পরে প্রতিশ্রুতি দেন ম্যাচের ইনিংস বিরতিতে কথা বলার। ওই কথা স্টিভেন ফিন রেখেছেনও। বাংলানিউজের সঙ্গে নিজের ক্যারিয়ার, বাংলাদেশি পেসার, মানসিক অবসাদ এমন অনেক কিছু নিয়েই কথা বলেছেন ইংল্যান্ডের সাবেক এই পেসার…
বাংলানিউজ: এই আগস্টেই অবসর নিয়েছেন। জীবন এখন কেমন চলেছে?
ফিন: সবকিছু ঠিকঠাক চলছে। কাজের সুবাদে পুরো দুনিয়ায় ঘুরে ঘুরে ইংল্যান্ড দলকে দেখছি। বিশ্বকাপে তাদের যাত্রাটা দেখা উপভোগ করছি।
বাংলানিউজ: এখানে তো ধারাভাষ্য দিতে এসেছেন। এই পেশাতেই নিজের ভবিষ্যৎ দেখছেন নাকি?
ফিন: এখনও জানি না আসলে। কেবলই শুরু করলাম। দেখা যাক সামনের পথচলাটা কেমন হয়। এমনিতে মিডিয়ায় কাজ করতে ভালোই লাগে। খেলোয়াড়ি জীবনে অনেক চ্যালেঞ্জের ভেতর দিয়ে গেছি, উত্থান-পতন ছিল; এজন্য এই কাজটা খুব মানানসইও। একজন স্পোর্টসম্যান কী কী জিনিসের মুখোমুখি হন, সেটা ভালোই জানা।
বাংলানিউজ: আপনার বয়স এখন কেবল ৩৪ বছর। অথচ আপনার দেশেই জেমস অ্যান্ডারসনের বয়স ৪০, স্টুয়ার্ট ব্রডও অবসর নিলেন এই সেদিন। তাদের দেখে কোনো আফসোস হয়?
ফিন: তারা খুব খুব ভালো অ্যাথলেট, বোলার। আমার হাঁটু আর কাজ করছিল না। এ কারণেই খেলাটা আর লম্বা করতে পারিনি। কিন্তু ওরা দুজন অনেক ভালো অ্যাথলেট।
বাংলানিউজ: দুজনের পেছনে থেকেই আপনার ক্যারিয়ারের প্রায় পুরোটা কেটেছে, এটা নিয়েও আক্ষেপ নেই?
ফিন: নাহ, একদমই না। তারা অবিশ্বাস্য বোলার, শুরু থেকেই এটা বুঝেছিলাম; আমাকে তাদের পরে থাকতে হবে। ওভাবেই নিজেকে তৈরি করেছি। তখন আমার দায়িত্ব ছিল উইকেট টেকিং বোলারের ভূমিকাটা নেওয়া। বেশিরভাগ সময়ই সেটা করতে পেরেছি বলে মনে হয়।
সবসময় উইকেট নেওয়ার জন্যই বল ছুড়েছি। কখনো কখনো হয়তো তাতে লাইন-লেন্থ হারিয়েছি। তাতে অনেকে অখুশি ছিলেন। কিন্তু কোনো কোনো কোচ এটাও বলেছেন, ‘উইকেটটা পেলেই হলো!’
বাংলানিউজ: ইনজুরি আপনার ক্যারিয়ার তাড়াতাড়ি শেষ করেছে। পুরো ক্যারিয়ারেও এটা নিয়ে ভুগেছেন। একজন পেসারের জন্য ইনজুরি কি একটু বেশিই কঠিন?
ফিন: এটা অনেক কঠিন হতে পারে। যখন আপনি দ্রুত বল করবেন, ইনজুরিতে সমস্যা তৈরি করতে পারে। যখন আপনি বড় হবেন, তখন এটা আরও বাড়বে। আপনাকে সবচেয়ে ভালোভাবে সামলে নিতে হবে, না হলে বিপদ কেবল বাড়বেই। ব্রড কিংবা অ্যান্ডারসন এই ক্ষেত্রে খুবই ভালো।
কোনো প্লেয়ারই চায় না ইনজুরি হোক, ফর্মে থাকা সময়টাতে তো এমন কিছু আরও বেশি কঠিন। আমি এটার জন্য অ্যাকশন বদলেছি। ছন্দটা ধরে রাখা জরুরি এরপরও। ইনজুরির পর যেটি বেশ কঠিন পেসারদের জন্য। কিন্তু যদি আপনি বড় কিছু করতে চান, এটুকু করতেই হবে!
বাংলানিউজ: আপনি একটা সাক্ষাৎকারে বলেছেন, মানসিক অবস্থা নিয়ে সৎ থাকেননি। একজন ক্রিকেটারের জন্য কি এটা খুব জরুরি?
ফিন: অবশ্যই জরুরি। আপনার পেশিতে টান লাগলে যেমন, তেমনই একটা ব্যাপার এটা। আপনার এটার সঙ্গে মানিয়ে নিতে হবে ও নিশ্চিত করতে হবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের চাপ যেন নিতে পারেন। এটা সত্যি আমি যতটা দরকার ছিল, ততটা ভালো ছিলাম না এই ব্যাপারে। তবুও আপনি একটা পরিস্থিতির ভেতর দিয়ে গেলে তবেই শিখতে পারবেন। আমার মনে হয় ছেলেরা এখন আগের চেয়ে অনেক ভালো সমর্থন পায়। এটা খুব ভালো ব্যাপার।
কখনো কখনো জিনিসটা কেবল পারফরম্যান্সে আটকে থাকে না। ক্যারিয়ারের শেষদিকে আমি নিয়মিতই মনোবিদ দেখিয়েছি। এটা আমাকে সাহায্য করেছে ভাবনাটাকে পরিষ্কার করতে, যেটা-সেটা আমার স্বাভাবিক জীবনে প্রভাব না ফেলে। এমনিতে স্পোর্টসম্যানের জন্য পারফরম্যান্স এনজাইটি তো থাকবেই, এটা মেনেও নিতে হবে। কিন্তু কখনো কখনো কিছু ব্যাপার এর বাইরেও থাকে, সেগুলো নিয়ে কথা বলা উচিত।
বাংলানিউজ: বাংলাদেশের বিপক্ষেই আপনার অভিষেক হয়েছিল, তখনকার সঙ্গে এখনকার পেসারদের তফাৎটা কেমন দেখেন?
ফিন: তাসকিনকে দেখে ভালো লেগেছে। বেশ জোরে বল করে। মোস্তাফিজুর রহমানও খুব ভালো। শরিফুলকে এই বিশ্বকাপেই দেখলাম, বাজে শুরুর পর দারুণভাবে ফিরে এসেছে। আমার মনে হয় তাসকিনের দিকে চোখ রাখা যায়। মনে হচ্ছে ওর সামনে লম্বা আর খুব ভালো একটা ক্যারিয়ার আছে।
বাংলানিউজ: এই বোলিংটা কি বিশ্বমানের?
ফিন: হ্যাঁ। আমার মনে হয় ছন্দটা খুঁজে পেতে আপনার তাদের সমর্থন দিতে হবে। তাদেরকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভ্যস্ত হতে দিতে হবে। বাংলাদেশে পেসার হওয়া অনেক কঠিন। এটা একদম থ্যাঙ্কসলেস কাজ হতে পারে যখন আপনি ওরকম স্পিন উইকেটে বল করবেন। আমার মনে হয় বিশেষ করে তাসকিন খুব ভালো।
আপনাকে অনুশীলন করে যেতে হবে। বিসিবি যেটা করতে পারে, যখন আপনি নতুন কাউকে পাবে, তাদের যতটা সম্ভব সাহস দিতে হবে। শারীরিকভাবে প্লেয়ারদের ভালো অবস্থায় নিয়ে যেতে হবে অল্প বয়সেই। প্রতিভাগুলোকে খুঁজে বের করে যত্নও নিতে হবে।
বাংলানিউজ: আপনি তিনটি অ্যাশেজ জিতেছেন, এই অনুভূতিটা কেমন?
ফিন: অসাধারণ ব্যাপার। ইংল্যান্ডের মানুষের কাছে অ্যাশেজ অনেক বড় ব্যাপার। টেস্ট ক্রিকেটার হিসেবে জিততে পারবেন এমন সবচেয়ে বড় সিরিজ। যেকোনো ম্যাচই জিততে পারলে খুব ভালো লাগে, অ্যাশেজ তাও একটু আলাদা। অস্ট্রেলিয়া এমনিতেও খুব ভালো দল। তাদের যেকোনো জায়গায় হারাতে পারাটাই আনন্দের।
বাংলানিউজ: ৩৬ টেস্টে আপনার ১২৫ উইকেট। ফরম্যাটটা পছন্দই করতেন মনে হয়। ভালো টেস্ট বোলার হতে কী করতে হয়?
ফিন: সবার আগে আপনাকে ধারাবাহিক হতে হবে। বল সুইং করাতে হবে। সবসময় ভালো পরিকল্পনার সঙ্গে স্কিলটাও লাগবে। যদি সেটা নিয়মিত অনুশীলন করেন, কষ্ট করতে পারেন; নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারেন। তাহলে অনেক দূরে যাবেন। গতির সঙ্গে লাইন-লেন্থটা খুব জরুরি।
বাংলাদেশ সময়: ১৮১৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ২০, ২০২৩
এমএইচবি/এমএইচএম
[ad_2]
Source link