কোহলির সেঞ্চুরিতে দাপুটে জয় ভারতের, Somoybulletin

[ad_1]

যা হওয়ার কথা ছিল তা-ই তো হলো। ভারত জিতলো, বাংলাদেশ হারলো।

মাঝে কেবল রোমাঞ্চ ছড়ালো তানজিদ হাসান তামিম আর লিটন দাসের ব্যাট। চুপচাপ ফিরে এসে নিজের কাজটুকু ঠিকঠাক কীভাবে করতে হয়, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ তা দেখালেন। এর বাইরে প্রায় সবই হলো ভারতের দিকে হেলে গিয়ে। আসলে কি তাই হওয়ার কথা ছিল না? 

পুনের গ্যালারিতে উৎসব হলো নীলের; যে রঙের জার্সিতে আড়াল হলো প্রায় সব চেয়ার। ‘ইন্ডিয়া’ ‘ইন্ডিয়া’ কিংবা ‘রোহিত…রোহিত’, ‘কোহলি…কোহলি’ এমন অনেক স্লোগানে ফেটে পড়লেন হাজার ত্রিশেক মানুষ। পুনের দর্শকরা সাড়া দিলেন মাইক্রোফোনে ভেসে আসা সব অনুরোধে। হাততালি, ফ্লাশলাইট জ্বালানো কিংবা ‘পার্টি কেবল শুরু হলো…’ এমন অনেক কিছুতে।  

গ্যালারির ফাঁকে যে দুয়েকজন বাংলাদেশি সমর্থক জায়গা করে নিয়েছিলেন; তাদের কষ্টটা হয়তো টিভিতে দেখা দর্শকদের চেয়ে একটু বেশি। কিন্তু সবারই আফসোসের ‍সুর হয়তো একই, ‘এ কেমন ক্রিকেট ভাই!’ আগে ব্যাট করে ৮ উইকেট হারিয়ে করা ২৫৬ রান নিয়ে এমনিতেও লড়াই করাটা সহজ ছিল না; সেটি করতেও পারেনি। ভারত জিতেছে ৫১ বল আর ৭ উইকেট হাতে রেখে।

অথচ শুরুটা কী দারুণই না হয়েছিল বাংলাদেশের! এমন আফসোস করার কারণ নিশ্চয়ই আপনি এতক্ষণে জেনে গেছেন খেলাটা দেখে থাকলে। যদি না দেখে থাকেন- তাহলে জানুন বাংলাদেশ প্রথম উইকেটটা যখন হারিয়েছিল তখন দলের রান ৯৩। বিশ্বকাপের আগের তিন ম্যাচে টপ-অর্ডারদের নিয়ে হতাশার কথা শোনা যাচ্ছিল প্রায়ই। এ ম্যাচে ওই আক্ষেপ আর থাকবে না, এমন আশাই হয়তো সমর্থকদের মনে জাগতে শুরু করেছিল।

আগের দিন কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে বলে গিয়েছিলেন প্রথম ১০-২০ বল দেখতে। সেটি ভালোভাবে করেনও দুই ওপেনার লিটন দাস ও তানজিদ হাসান তামিম। প্রথম পাঁচ ওভারে এসেছিল স্রেফ ১০ রান, কিন্তু উইকেট যায়নি। কোচের পরের কথাটাও দুই ওপেনার শুনছিলেন ভালোভাবেই।  

১৯৯৯ সালে বাংলাদেশের হয়ে প্রথম বিশ্বকাপে ৬৯ রানের উদ্বোধনী জুটি গড়েছিলেন শাহরিয়ার হোসেন বিদ্যুৎ ও মেহরাব হোসেন অপি। তাদের ওই রানই এতদিন ধরে ছিল বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রানের উদ্বোধনী জুটি। সেটি ছাড়িয়ে যান তানজিদ হাসান তামিম ও লিটন দাস।  

কিন্তু আরও বড় করার আফসোসটা হয়তো থেকে যাবে তবুও। এর আগে বিশ্বকাপে সব উইকেটেই শতরান ছাড়ানো জুটি ছিল কেবল সাতটি। সাত রানের জন্য ওই তালিকায় অষ্টম নাম হওয়া হয়নি তানজিদ-লিটনের মাঝে; তাদের জুটি থামে ৯৩ রানে।  

মাঝে অবশ্য একবার এলবিডব্লিউ আউট হয়েছিলেন তানজিদ; কিন্তু তখন আবেদনই করেনি ভারত। পরে তিনি ক্যারিয়ারের প্রথম হাফ সেঞ্চুরি করে এলবিডব্লিউ হয়েছেন কুলদ্বীপ যাদবের বলে। ইনজুরিতে ছিটকে যাওয়া সাকিব আল হাসানের বদলে নেতৃত্বটা এসেছিল নাজমুল হোসেন শান্তর কাঁধে। তিনি সেটি স্মরণীয় করে রাখতে পারেননি অন্তত ব্যাট হাতে। ১৭ বলে ৮ রান করে এলবিডব্লিউ হন রবীন্দ্র জাদেজার বলে।  

ব্যাটিং অর্ডার নিয়ে এতদিন ধরে কথা হচ্ছিল অনেক। মেহেদী হাসান মিরাজকে উপরে খেলাতে গিয়ে সব ওলটপালট; বলা হচ্ছিল এমন। এদিনও অবশ্য চারেই আসেন মিরাজ। এদিন তার ইনিংসে সম্ভবত এটিও বোঝা গেছে, প্রতিদিন ‘মেক শিফট’ করে কাজ হয় না। ১৩ বলে ৩ রান করে মোহাম্মদ সিরাজের বলে লোকেশ রাহুলের হাতে ক্যাচ দেন মিরাজ। বাঁ দিকে ঝাঁপিয়ে দারুণ ক্যাচ ধরেন ভারতীয় উইকেটরক্ষক।

লিটন এ ম্যাচে শুরু করেছিলেন দারুণ। যেমন উইকেট ছিল সেটি তার জন্য আদর্শ। বড় রানের আশাটাও তাই চলে আসে স্বাভাবিকভাবে। অথচ এই ব্যাটার আউট হলেন ‘কী করলেন এটা’ এমন আফসোস নিয়ে। জাদেজার লোপ্পা বলে লং অফে ক্যাচ দেন এই ওপেনার। ৭ চারে ৮২ বলে ৬৬ রান করেন লিটন।
 
তার বিদায়ের পর ক্রিজে আসা তাওহীদ হৃদয়ের ব্যাটিংজুড়ে ছিল কেবলই আফসোস। সিঙ্গেলস বের করতে পারছিলেন না, আসছিল না বাউন্ডারিও; রেগেমেগে যেভাবে ব্যাট চালাচ্ছিলেন, সেটিতেও ছিল কেবলই হতাশা। ৩৫ বল খেলে কোনো বাউন্ডারি না হাঁকিয়ে ১৬ রান করেন হৃদয়।  

চার, পাঁচ ও ছয় নম্বরের মতো গুরুত্বপূর্ণ পজিশনে খেলতে নামা তিন ব্যাটার খেলেন ৬৫ বল, করেন কেবল ২৭ রান। সম্ভবত ম্যাচের প্রেক্ষাপটও বদলে যায় এতে। শুরুতে মনে হওয়া সাড়ে তিনশ রান পরে এসে ঠেকে আড়াইশর আশায়।  

কিন্তু তার জন্য ক্রিজে থাকতে হতো মুশফিকুর রহিমকে। তিনি আউট হন জাদেজার দুর্দান্ত এক ক্যাচে। বুমরাহর স্লোয়ার ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্ট অঞ্চল দিয়ে খেলেন মুশফিক, টাইমিংও হয় ভালো। কিন্তু ডানদিকে ঝাঁপিয়ে দুর্দান্ত এক ক্যাচ নেন জাদেজা।  

পরের রানের কৃতিত্বটা মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের। কতশত আলোচনা তাকে ঘিরে। দূর দূর করে তাড়িয়ে দেওয়া; সম্ভবত যৌক্তিক কারণেই। বয়সটা ৩৭ ছাড়িয়েছে, রিফ্লেক্স কমে গেছে, ফিল্ডিংটা ভালো করতে পারেন না; এমন আরও কত সমস্যা তার। সেসব হয়তো এখনও এমনই আছে, তবুও ওই বাস্তবতা মেনে তাকেই দলে নেওয়া হয়েছে।
 
মাহমুদউল্লাহার তো আর সামর্থ্যের বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই। সেটুকুর সেরা ভার্সনটাই তিনি দেখালেন ভারতের বিপক্ষে। এটুকু না বললেই অকৃতজ্ঞতাই হয়। তা তিনি কী করেছেন? একসময় তিনশ পেরোনোর সম্ভাবনা থাকা ইনিংসটার অপমৃত্যু হতে দেননি। অন্তত আড়াইশ ছাড়িয়ে নিয়ে গেছেন।
 
নিন্দুকরা হয়তো বলবেন- তাতে দলের কী লাভটা হলো? তেমন হয়তো হয়নি। কিন্তু রিয়াদই বা কী করবেন? তার এটুকু সামর্থ্য, এই বাস্তবতা মেনেই তো দলে নেওয়া। তিনি যখন সেরাটা করছেন, তখন তাকে কৃতিত্ব না দিয়ে উপায় কী!

কিন্তু এমন পাটা ব্যাটিং উইকেটে ভারতের জয় নিয়ে সংশয়ের কোনো কারণ নেই। কত তাড়াতাড়ি তারা করে ফেলেন, প্রশ্নটা ছিল কেবল এখানেই। রোহিত শর্মা আর শুভমান গিল যেভাবে ব্যাট করলেন; মনে হলো তাদের তাড়াই ছিল বেশ।  

পাওয়ার প্লের ১০ ওভারে দুজন মিলে তুললেন ৬৩ রান, একটি উইকেটও গেলো না। যখন উইকেট গেছে, তখনই অবশ্য ম্যাচ অনেক বেশি হেলে আছে ভারতের দিকে। ৭ চার ও ২ ছক্কায় ৪০ বলে ৪৮ রান করে রোহিত সাজঘরে ফেরত গেছেন শট বল খেলতে গিয়ে। ব্যাটের মাথায় লাগা বল ডিপ স্কয়ার লেগে দাঁড়িয়ে নেন তাওহীদ হৃদয়।  

এরপরও বাংলাদেশ উইকেট নিয়েছে। শ্রেয়াস আইয়ার যেমন ২৫ বলে ১৯ রান করে বাউন্ডারি লাইনের কাছে দাঁড়ানো মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের হাতে ক্যাচ দিয়েছেন। ফেরানো গিয়েছিল ৫ চার ২ ছক্কায় ৫৫ বলে ৫৩ রান করা শুভমান গিলকেও।  

কিন্তু তাতে কী আর কাজ হয়! ভারতের ব্যাটিং লাইন-আপটা যে ভীষণ লম্বা। তার ওপর তাদের একজন বিরাট কোহলিও আছেন। দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে জাহাজ কিনারায় নেওয়ার কৌশলটা তার ভালোই রপ্ত করা।   ৯৭ বলে ৬ চার ও ৪ ছক্কায় ১০৩ রানে অপরাজিত থেকে তিনি ওই কাজটি আজও করলেন। শেষ দিকে গিয়ে জয়ের থেকেও যেন বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিল তার সেঞ্চুরি।  নাসুমকে ছক্কা হাঁকিয়ে ঠিকই তুলে নিলেন ক্যারিয়ারের ৪৮তম সেঞ্চুরি। সেই সঙ্গে নিশ্চিত করেন দলের টানা চতুর্থ জয়।   

নীলের উৎসবে বাড়তি রং দিলেন কোহলি, রোহিত, বুমরাহরা। কিন্তু লাল-সবুজের কী হবে? অনেকগুলো দিন ধরে যে তারা বড় বড় স্বপ্নের কথা শুনলো। সেটি কি ভারতের বিপক্ষে হেরে প্রায় শেষই হয়ে গেল? প্রশ্নের উত্তরটা ‘কে জানে!’

বাংলাদেশ সময় : ২১৫৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৯, ২০২৩
এমএইচবি/এএইচএস
 



[ad_2]
Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *