একনজরে বরিশালের দর্শনীয় স্থান ও স্থাপনাসমূহ…
দুর্গাসাগর দিঘী :
বিভাগীয় জেলা বরিশাল দেশের দক্ষিনাঞ্চলের সর্বাধিক ঐতিহাসিক নিদর্শনে সমৃদ্ধ । অগণিত নদী-নালা, খাল-বিল ও সবুজ বেষ্টনী ঘেরা বরিশালে জন্মেছেন ও বেড়ে উঠেছেন অনেক গুনীজন। চন্দ্রদ্বীপ রাজারা এখানে প্রায় ২০০ বছর রাজ্য শাসন করে ছিলেন। বরিশালের মাধবপাশা উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে এখনও অনেক রাজ-রাজাদের বাসভবনের ভগ্নাবশেষ রয়েছে। মাধবপাশার নয়নাভিরাম দুর্গাসাগর দীঘি(Durgasagar Dighi) সেই রাজাদেরই এক কীর্তি।
মহারাজার দিঘীঃ রাজপ্রাসাদের সন্নিকটে ছিল একটি বড় পুকুর বর্তমানে যা ’মহারাজার দিঘী’ নামে পরিচিত। ’মহারাজার দিঘী’ একটি বিশালায়তনের জলাশয়। পাড়সহ এর আয়তন প্রায় ৮০০X৪০০ গজ। পাড়ের উচ্চতা প্রায় ২০ ফুট। জলভাগের আয়তন প্রায় ৪০০X২০০ গজ। পানির গভীরতা প্রায় ৪০ ফুট বলে স্থানীয় অধিবাসীদের বিশ্বাস। পানি অতি স্বচ্ছ। দিঘীতে রয়েছে মোট ১০টি ঘাট। ধারণা করা হয় পৃথূ রাজা এই দিঘীটি খনন করেন।
আরো পড়ুন… জেনে নিন সকল সিমের প্রয়োজনীয় সকল কোড নাম্বার
শাপলা গ্রাম, সাতলা:
শাপলা গ্রাম সাতলা (Shapla Gram Satla) যেন এক শাপলার রাজ্য। বিলের পানিতে ফুটে থাকা হাজারো লাল শাপলা যেন সূর্য্যের লাল আভাকেও হার মানায়। বরিশাল (Barishal) সদর থেকে সাতলা গ্রামের দূরত্ব ৬০ কিলোমিটার। বরিশালের উজিরপুর উপজেলার সাতলা গ্রামের বিলগুলো স্থানীয়দের কাছে শাপলার বিল নামে পরিচিত।
শেরে বাংলা স্মৃতি জাদুঘর:
বরিশাল জেলার বানারীপাড়ার চাখারে শের-ই-বাংলা এ কে ফজলুল হকের বসতভিটায় ২৭ শতক জমির উপর গড়ে উঠেছে শেরেবাংলা স্মৃতি জাদুঘর। চাররুম বিশিষ্ট জাদুঘরে রয়েছে দুটি ডিসপেস্ন রুম, একটি অফিস রুম ও একটি লাইব্রেরী রুম । ঢুকেই হাতের বাঁদিকে শেরে বাংলা একটি বিশাল প্রতিকৃতি তার জীবনকর্মের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস, সামাজিক রাজনৈতিক, পারিবারিক ছবি, পত্র পত্রিকায় প্রকাশিত শেরে বাংলার বিভিন্ন কর্মকান্ডের ছবি ।জাদুঘরে ফজলুল হকের ব্যবহৃত নিদর্শনগুলোর মধ্যে রয়েছে আরাম কেদারা, কাঠের খাট, তোষক, আলনা, ড্রেসিং টেবিল, টুল, চেয়ার-টেবিল, হাতের লাঠি, পানীয় জলের গস্নাস, কিছু মালপত্র।বঙ্গবন্ধু উদ্যান বেলস পার্ক
ইতিহাস আর ঐতিহ্য মিশে আছে বরিশাল নগরীর বর্তমান বঙ্গবন্ধু উদ্যান ও সাবেক বেলস্ পার্ককে ঘিরে। এই উদ্যানটি যেমন ব্রিটিশ উদ্যোগের স্মারক। তেমনি এর সঙ্গে মিশে আছে আমাদের জাতীয় জীবনের নানা ঘটনা প্রবাহের ধারাবাহিক অনুষঙ্গ।
জানা যায়, ১৮৯৬ সালে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এনডি বিটসেন বেল বরিশালে আসেন। ব্রিটিশ এই কর্মকর্তা নানা কারণেই বরিশালে স্মরণীয় হয়ে আছেন। বিটসেন বেল ও খান বাহাদুর হেমায়েত উদ্দিনের প্রচেষ্টায় বরিশালের মুসলিম ছাত্রদের শিক্ষার জন্য বেল ইসলামিয়া হোস্টেল নামে একটি ছাত্রাবাস নির্মাণ করা হয়। বেল সাহেবের আরও অনেক অবদান রয়েছে।
বরিশালে প্লেগের প্রাদুর্ভাব হলে তিনি এর নির্মূলে ঝাঁপিয়ে পড়েন। তবে তার নাম মিশে আছে বঙ্গবন্ধু উদ্যান ঘিরে। এই উদ্যান নির্মাণে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বিটসেন বেলের অনন্য প্রচেষ্টার নিদর্শনস্বরূপ। ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত এটি ‘বেলস্ পার্ক’ নামে পরিচিত ছিল। জনশ্রুতি রয়েছে, রাজা পঞ্চম জর্জের বরিশাল শুভাগমনকে স্মরণীয় করতে এই মাঠটি গড়ে তোলার উদ্যোগ নেন বেল সাহেব। কিন্তু কোন এক কারণে সে সময় এই কর্মসূচী বাতিল হয়ে যায়। তারপর থেকে সরকারী-বেসরকারী সকল বৃহৎ কর্মকা- এই মাঠকে ঘিরেই সম্পন্ন হয়।
শংকর মঠ:
নানা উত্থান পতনের মধ্য দিয়ে বরিশাল নগরীতে ব্রিটিশ আমল থেকে এক চিত্তে দাঁড়িয়ে আছে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের আকড়া ও রাজনৈতিক, ধর্মীয় উপাসনালয় হিসেবে পরিচিত শ্রী শ্রী শংকর মঠ। ব্রিটিশ সরকারের আমলে শংকর মঠ ও আশ্রমে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের আখড়ায় পরিণত হওয়ার খবর পেয়ে ওইসময় গোয়েন্দাদের তীক্ষè দৃষ্টি রাখার জন্য শংকর মঠের সামনেই একটি গোয়েন্দা অফিস স্থাপন করা হয়েছিল। এ প্রতিষ্ঠানটি বরিশালের ঐতিহাসিক, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় উপাসনালয় হিসেবে অসংখ্য স্মৃতিবহন করে চলছে বলেও জানিয়েছেন বিশিষ্টজনেরা।
বিবির পুকুর:
বরিশাল শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত এক ঐতিহ্যবাহী জলাশয়ের নাম বিবির পুকুর (Bibir Pukur)। ১৯০৮ খ্রিস্টাব্দে জিন্নাত বিবি জনমানুষের জলের কষ্ট নিরসনের উদ্দেশ্যে এই পুকুর খনন করেন। নগরীর সদর রোডের পূর্ব পাশে অবস্থিত বিবির পুকুরের দৈর্ঘ্য ১৮৫০ ফুট এবং প্রস্থ ৪০০ ফুট।
মিয়াবাড়ি জামে মসজিদ:
এটি বৃহত্তর বরিশাল অঞ্চলের ব্রিটিশ আমলের সূচনালগ্নে নির্মিত একটি মসজিদ। শহরের পশ্চিমদিকে বরিশাল- কড়াপুর সড়ক সংলগ্ন মিয়াবাড়িতে মসজিদটি অবস্থিত। এই মসজিদের প্রতিষ্ঠাতা হায়াত মাহমুদ ইংরেজ শাসনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করার কারণে প্রিন্স অফ ওয়েলস দ্বীপে নির্বাসিত হন এবং তার বুজুর্গ উমেদপুরের জমিদারিও কেড়ে নেয়া হয়। দীর্ঘ ষোল বছর পর দেশে ফিরে তিনি দু’টি দীঘি এবং দোতলা এই মসজিদটি নির্মাণ করেন। মসজিদটির স্থাপত্যরীতিতে পুরান ঢাকায় অবস্থিত শায়েস্তা খান নির্মিত কারতলব খান মসজিদের অনুকরণ দৃশ্যমান।
লাকুটিয়া জমিদার বাড়ি:
ইট, পাথর আর সুরকি দিয়ে গাঁথা ও এক সময়ের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের পীঠস্থান হিসেবে পরিচিত বরিশালের লাকুটিয়া জমিদার বাড়ি। জমিদার বাড়িটি আনুমানিক ১৬০০ কিংবা ১৭০০ সালে রুপচন্দ্র রায়ের পুত্র জমিদার রাজচন্দ্র রায়ের হাত ধরে ইট পাথর আর সূড়কি গাঁথুনিতে ইতিহাসে জায়গা করে নিয়েছে পুরনো লাকুটিয়া জমিদার বাড়ি। পুরোনো ভবনের চারিদিকে নানা শিল্পকর্ম ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। এখানে রয়েছে দৃষ্টিনন্দন একটি মঠ, সুবিশাল দীঘি, মাঠ এবং কারুকার্যমন্ডিত জমিদার বাড়ি।
অক্সফোর্ড মিশন:
এপিফ্যানি গির্জা বা অক্সফোর্ড মিশন চার্চ দক্ষিণ এশিয়ার দ্বতিীয় বৃহত্তম [২] এবং বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ এবং শৈল্পিক গির্জা। এর মুল নাম এপিফানী গির্জা হলেও স্থানীয় সাধারনের কাছে অক্সফোর্ড মিশন চার্চ নামেই বেশি পরিচিত। বরিশাল সদরের প্রানকেন্দ্রে বগুড়া রোডের ধারে এর অবস্থান। ১১৩ বছর পুরনো দৃষ্টিনন্দন এ গির্জাটি ‘লাল গির্জা’ নামেও পরিচিত।
ভাসমান পেয়ারা বাজার:
ঝালকাঠি, বরিশাল এবং পিরোজপুরের সিমান্তবর্তী এলাকায় গড়ে উঠেছে এশিয়া মহাদেশের বৃহত্তম পেয়ারা বাগান। ঝালকাঠী জেলা শহর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে ভিমরুলিতে রয়েছে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ভাসমান পেয়ারা বাজার (Floating Guava Market)। তিন দিক থেকে আসা খালের মোহনায় বসে ভিমরুলির এই ভাসমান পেয়ারা বাজার। জুলাই, আগস্ট পেয়ারার মৌসুম হলেও মাঝে মাঝে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাজার চলে।