শিক্ষাই জাতির মেরুদন্ড কেন?
শিক্ষাই জাতির মেরুদন্ড। শিক্ষা ছাড়া কোনাে জাতি উন্নতি লাভ করতে পারে না। শিক্ষার আলােয় আলােকিত ব্যক্তি এবং জাতি সবসময় উন্নতি ও অগ্রগতির শীর্ষে অবস্থান করে। এরূপ শিক্ষিত শ্রেণিই সবসময় নেতৃত্বের আসনে থাকে। কিন্তু শিক্ষা তখনই এরূপ যােগ্যতাসম্পন্ন নাগরিক তৈরি করতে সমর্থ হবে যখন তা হবে উপযুক্ত মান সম্পন্ন। কেবল মানসম্পন্ন আধুনিক যুগােপযােগী শিক্ষাই পারে যােগ্য ও দক্ষতা সম্পন্ন জনবল তৈরি করতে।
শিক্ষার মান উন্নয়নের গুরুত্ব:
শিক্ষার মানােন্নয়ন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। শিক্ষার মানােন্নয়ন মান বা গুণ বলতে সাধারণভাবে কোনাে ব্যক্তি, বস্তু, পণ্য, ঘটনা, ফলাফল ইত্যাদির কাঙ্ক্ষিত অবস্থাকে বুঝানাে হয়। গুণগত বা মানসম্পন্ন শিক্ষা বলতে শিক্ষার আদর্শ মানকে বােঝানাে হয়, যা সেই শিক্ষা থেকে প্রত্যাশা করা হয়।
কিন্তু আমাদের দেশে শিক্ষার পরিমাণগত দিকটাই মুখ্য হিসেবে বিবেচনা করা হয়। শিক্ষার পরিমাণগত দিকে কেবল সংখ্যাকেই দেখা হয় এর মান বা গুণাবলীর দিকে লক্ষ্য রাখা হয় না। যেমন- প্রতি বছর বাংলাদেশের পাবলিক পরীক্ষা গুলােতে A+ এবং পাশের হার বৃদ্ধি পাচ্ছে।
এটি শিক্ষার পরিমাণগত দিকের উন্নতি নির্দেশ করছে কিন্তু শিক্ষার গুণগত মানে কোন পরিবর্তন আনতে পারছেনা। শিক্ষার গুণগত মানের ক্ষেত্রে দেখা হয় শিক্ষা গ্রহণ করে শিক্ষার্থীরা কতটুকু উপকৃত হচ্ছে। গনহারে A+ এবং পাশের হার বৃদ্ধি পেলেও তারা কতটুকু মান সম্পন্ন শিক্ষা অর্জন করতে পারল তাই মূখ্য বিষয়। শিক্ষার্থীদের যে স্তর শেষে যে যােগ্যতা অর্জন করার কথা, তা কতটুকু অর্জন করতে সমর্থ হয়েছে, এখানে তা দেখা হয়।
শিক্ষার মান উন্নয়নের জন্য যা প্রয়োজন:
শিক্ষার মান উন্নয়নের জন্য উপযুক্ত শিক্ষক, যথাযথ ব্যস্থাপনা, শিক্ষক প্রশিক্ষণ, সঠিকভাবে শিক্ষার্থীদেরকে মূল্যায়ন করার ব্যবস্থা করতে হবে। বাংলাদেশের আর্থিক অবস্থা অনেকটা ভালাে হলেও দেশে এখনাে মানসম্মত শিক্ষা প্রদান সম্ভব হয় নি। দেশে বর্তমানে ৫০টি সরকারি ও ১০৮টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। তবে সবগুলাে বিশ্ববিদ্যালয় খুব ভালাে ভাবে চলছেনা। এর অন্যতম কারন হতে পারে উপযুক্ত শিক্ষক বা পুরো শিক্ষা টা কেই অবহেলা করা। শেখানোর মান টা যদি ভালো না হয় তাহলে তরূন প্রজন্ম শিখবে কিভাবে। আমাদের দেশে অধিকাংশ বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় তো এখন শিক্ষা টাকে ব্যবসায় রুপান্তর করেছে। আমরা যদি শিক্ষার মধ্যে ব্যবসা খুজি তাহলে জাতি হিসেবে কতোটা উন্নতি করতে পারবো? কি দিয়ে যাবো আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম কে?
তাই জাতি হিসেবে বিশ্বে নিজেদের শিক্ষার মান উন্নয়ন করতে হলে সব চেয়ে বেশি যেটা প্রয়োজন সেটা হলো শেখানোর মান উন্নয়ন করা। শিক্ষা টা কে তরুন প্রজন্মের কাছে বোঝা বানিয়ে দিলে শিক্ষার মান উন্নয়ন করা যাবে না। আমাদের একটি সহজ পদ্ধতিতে অগ্রসর হতে হবে যাতে শিক্ষার্থীর নিজে থেকে শেখার আগ্রহ জন্মে। বই পড়ার পাশাপাশি ব্যাস্তব জ্ঞান অর্জন করতে হবে। দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভালো মানের শিক্ষক নিয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। সঠিক শিক্ষার আলো পৌঁছে দিতে হবে প্রতি ঘরে ঘরে। আমাদের মনে রাখতে হবে যে জাতির শিক্ষার মান যত উন্নত বর্তমান বিশ্বে তারাই সবথেকে শক্তিশালী। একটি শিক্ষিত জাতি আমাদের কে উন্ননয়নের শেখরে নিয়ে যাবে।
বর্তমান বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর অবস্থা:
বর্তমান বেসরকারি ডজন খানেক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা ক্ষেত্রে অবদান রাখলেও অন্যগুলাের অবস্থা খুবই নাজুক। তাদের বিরুদ্ধে সনদ বিক্রির অভিযােগও রয়েছে। আর যে দেশে টাকা দিয়ে ডিগ্রি পাওয়া যায় সে দেশে শিক্ষার গুরুত্ব কতটুকু? শিক্ষা টা কে যদি এভাবে কয়েক টা টাকার কাছে বিক্রি করে দেই আমরা তাহলে জাতি হিসেবে কোথায় মাথা তুলে দ্বাড়াবো?
নাকি আমাদের মাথা নিচু করে, টাকার কাছে হেরে যেতেই ভালো লাগে? নাহ! ভালো লাগে না। প্রত্যেক টা জাতি চায় বর্তমান বিশ্বে নিজেদের কে সবার উপরে দেখতে। সেখানে জাতি হিসেবে আমরা হেরে যাচ্ছি টাকার কাছে, দুর্নীতির কাছে, কালো শক্তির কাছে। এভাবে আর যাই হোক এ জাতির কাছে সঠিক শিক্ষার আলো টা পোঁছাবে না। তাই শিক্ষার ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তনের জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে তৎপর হতে হবে। উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রে গবেষণা প্রায় নাই বললেই চলে। তাছাড়া প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে শিক্ষার্থীরা যথাযথ শিক্ষা পাচ্ছেন না।
ফলে উচ্চশিক্ষা ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের ভিত শক্ত না হওয়ায় কাক্ষিত ফল পাওয়া যাচ্ছে না। এমন আলােচনাও আছে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষে ভর্তির পর অধিকাংশ শিক্ষার্থীদের ভাষাগত দক্ষতার অভাব রয়েছে। শিক্ষা দেশের প্রতিটি নাগরিকের অধিকার। শিক্ষার আলো সবার মাঝে পৌঁছে দেওয়া আমাদের সকলের দায়িত্ব। সরকার সবাইকে শিক্ষাদানের ব্যবস্থা করবে।
শিক্ষার মান উন্নয়নে অভিভাবক দের করনীয়:
শিক্ষার মান উন্নয়ন কিংবা আপনার সন্তান সঠিক শিক্ষায় শিক্ষিত হচ্ছে কি না সেখানে অভিভাবক হিসেবে আপনারও কিছু করনীয় আছে। তাই আপনার সন্তান কে কোন প্রতিষ্ঠানে দেওয়ার আগে সেই প্রতিষ্ঠান সমন্ধে ভালো মন্দ যাচাই করুন। সেই প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার আলো কিভাবে ছড়াচ্ছে সবার মাঝে সেটা জানার চেষ্টা করুন। সেই প্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষার্থীরা সফল হচ্ছে কি না যাচাই করুন।
গ্রাম অঞ্চলে দেখা যায় অনেক মা বাবা পড়াশোনা জানেন না। তাদের সন্তান কোথা থেকে শিক্ষা অর্জন করছে এই খবর টাও ঠিক মত জানে না। কিন্ত যারা শিক্ষিত মা বাবা তারাও অনেক সময় ভুল করে বসে বা প্রতারণার স্বীকার হোন। তাই আপনার সন্তান সঠিক শিক্ষায় শিক্ষিত হচ্ছে কিনা এ বিষয়ে নজর রাখার দায়িত্ব আপনার। আপনার সন্তান কে সঠিক শিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলুন এবং শিক্ষার মান উন্নয়ন করতে জাতি কে সাহায্য করুন।
আরো পড়ুনঃ ফ্রিল্যান্সিং করে আয়
আমাদের ফেসবুক পেজঃ সময় বুলেটিন