লিচুর উপকারিতা ও অপকারিতা ও লিচু বেশি খেলে কি হয়

 গ্রীষ্মকালীন রসালো ফল লিচু। স্বাদের জন্য লিচু অনেকের কাছেই প্রিয় ফল। লিচু বেশি খেলে কি হয় ও লিচুর উপকারিতা ও অপকারিতা সর্ম্পকে জানবো বিস্তারিত। বাজারে উঠতে শুরু করেছে লিচু। গ্রীষ্মকালীন এ রসালো ফল খুব কম সময়ের জন্য আসে বাজারে। স্বাদ ও গন্ধের জন্য লিচু অনেকের কাছেই প্রিয় ফল। শুধু স্বাদই নয়, পুষ্টিগুণেও ভরপুর এ ফল। নানা রকম অসুখের থেকে আপনাকে দূরে রাখবে এ ফল। আবার বেশি খেলেও হতে পারে ক্ষতি।

লিচুর উপকারিতা ও অপকারিতা
লিচুর উপকারিতা ও অপকারিতা

লিচুর পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা

  • পুষ্টিগুণের দিক দিয়ে এই লিচুতে আছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন সি।
  • ক্যালসিয়াম প্রয়জন হয় হাড়,চুল,দাঁত, ত্বক, নখ সুস্থ রাখতে।
  • হিসাব করে দেখা গেছে যে, ১০০ গ্রাম লিচুতে থাকে শর্করা ১৩.৬ গ্রাম।
  • ক্যালরি থাকে ৬১ গ্রাম।
  • ক্যালসিয়াম ১০ মিলিগ্রাম
  • লৌহ ০.৭ মিলিগ্রাম
  • ভিটামিন সি ৩১ মিলিগ্রাম।
  • ১০০ গ্রাম লিচু বলতে সাধারনত মাঝারি আকারের প্রায় ১০ টি লিচুকে বোঝায়।

লিচুর উপকারিতা । লিচুর উপকারিতা ও অপকারিতা 

  1. বিভিন্ন ধরনের ব্যথা দূর করতে সহায়তা করে লিচু।
  2. লিচুতে ভিটামিন, নানা খনিজ উপাদান রয়েছে যেগুলো রক্তের উপাদান তৈরিতে সহযোগিতা করে।
  3. ত্বকের বলিরেখা দূর করে।
  4. বলিরেখা দূর করতে সাহায্য করে এবং ত্বক সুন্দর ও মসৃন করে।
  5. ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য লিচু খাওয়া অনেক ভালো কারণ এতে ক্যালরির পরিমানটা বেশি থাকে।
  6. লিচু দেহের শক্তি বাড়ায় কারন এটি শরীরে ফলুইডের পরিমাণ বাড়ায়।
  7. লিচুতে ভিটামিন সি এর পরিমান কমলালেবুর তুলনায় ৪০ শতাংশ বেশি।
  8. এটি হজমে সহায়তা করে কারণ লিচুতে আছে কার্বোহাইড্রেট ও ফাইবার।
  9. লিচুতে বিটা ক্যারোটিনও পরিমান গাজরের তুলনায় বেশি থাকে।
  10. এই ফলটিতে আনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি এসিড রয়েছে।
  11. এতে রয়েছে ভিটামিন বি কমপ্লেক্স ও নিয়াসিস এবং রিবোফ্লাভিন।
  12. লিচুতে থাকা পটাসিয়াম এবং খনিজের মতো উপাদান হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়।
  13. মস্তিষ্ক বিকাশেও সহায়তা করে। স্ট্রোকের ঝুঁকি কমায়।
  14. এছাড়াও লিচু ক্যান্সার থেকে মানবদেহকে সুরক্ষা দেয়।

লিচুর অপকারিতা । লিচুর উপকারিতা ও অপকারিতা

লিচুর পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা
লিচুর পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা
  1. মাত্রাতিরিক্ত লিচু খেলে রক্তচাপ অস্বাভাবিকভাবে কমে যেতে পারে।
  2. লিচু ওজন বৃদ্ধি করে।
  3. লিচুতে প্রোটিন জরুরি ফ্যাটি এসিড নেই, ফলে বেশি পরিমাণে লিচু খেলে তা শরীরের স্বাভাবেক ব্যালেন্স নষ্ট করে।
  4. খালি পেটে লিচু খেলে শরীরে বিষক্রিয়া হতে পারে।
  5. মাত্রাতিরিক্ত লিচু খেলে রক্তের গ্লূকোজ কমে যায়।
  6. যাদের ডায়াবেটিস আছে এবং যারা ওষুধের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন তাদের লিচু খাওয়াতে সাবধানতা রাখতে হবে কারণ ওষুধ এমনেতেই রক্তে গ্লূকোজের পরিমাণ কমায়ে রাখে তার সাথে লিচুও একই কাজ করলে যেকোন বিপত্তি ঘটতে পারে।
  7. লিচু একটি গরম ফল। অতিমাত্রায় লিচু খেলে শরীরের তাপমাত্রার ব্যালেন্স নষ্ট হয়।ফলে গলাব্যথা, মুখের ভেতরে ক্ষত হতে পারে।
  8. একটানা বেশি পরিমাণ লিচু খেলে রিউমাটয়েড আরথ্রাইটিস, মাল্টিপল স্কলেরসিস, লুপাস ইত্যাদি রোগ থাকলে সেটা বেড়ে যেতে পারে।
  9. র্সাজারির রোগীদের অতিরিক্ত লিচু খাওয়া ঝুঁকির কারণ।
  10. পাকা লিচুতে হাইপোগ্লাইসিন বেশি থাকে না কিন্তু কাচাঁ লিচুতে হাইপোগ্লাইসিন অনেক বেশি পরিমাণে থাকে তাই কাচাঁ বা আধা পাকা লিচু কখনোই খাওয়া উচিৎ নয়। 

লিচু বেশি খেলে কি হয়। লিচুর উপকারিতা ও অপকারিতা

লিচুতে আছে হাইপোগ্লাইসিন নামক একটি উপাদান। এটি হতে পারে মৃত্যুর কারণ। যদি আপনি খালি পেটে বা অতিমাত্রায় লিচু খান তবে হাইপোগ্লাইসিন নামক এই উপাদান শরীরে শর্করার মাত্রা একেবারেই কমিয়ে দেয়। ফলে দেখা দেয় এই সমস্যা। শরীরে শর্করা মাত্রাতিরিক্ত কমে গেলে তা শরীরের জন্য ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠে। ফলে হতে পারে মৃত্যুও। তাই খালি পেটে লিচু খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। খাবার গ্রহণের ৩০ মিনিট পর লিচু খান। এতে সমস্যার ভয় থাকবে না।

বিষক্রিয়ার ভয় । লিচু বেশি খেলে কি হয়

আমরা যখন খালি পেটে থাকি তখন স্বাভাবিকভাবেই আমাদের শরীরে শর্করার পরিমাণ কমে যায়। এসময় লিচু খাওয়া হলে হাইপোগ্লাইসিন নামক উপাদানটি শরীরের শর্করার পরিমাণ একেবারেই শূন্যে নিয়ে যায়। এতে শরীরে বিষক্রিয়া হয়।

লিচু বেশি খেলে কি হয়
লিচু বেশি খেলে কি হয়

কাঁচা লিচু খাবেন না। লিচুর উপকারিতা ও অপকারিতা

পাকা লিচুতে হাইপোগ্লাইসিন খুব বেশি থাকে না। তবে কাচাঁ লিচুতে এই ক্ষতিকর উপাদান থাকে অনেক বেশি। যে কারণে কখনোই কাঁচা লিচু খাওয়া উচিৎ নয়। অনেক সময় শিশুরা না বুঝে কাঁচা লিচু খেয়ে ফেলে। সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। এটি যে ক্ষতিকর তা তাদের বুঝিয়ে বলতে হবে।

কখন খাবেন কতগুলো খাবেন।

লিচুর উপকারিতা ও অপকারিতা জানতে হলে আগে জানতে হবে কখন লিচু খাওয়া যাবে আর কখন খাওয়া যাবে না। খালি পেটে লিচু খাওয়া ভীষণ ক্ষতিকর হলেও ভরা পেটে লিচু খেলে সমস্যা হয় না। কাঁচা লিচু খাবেন না। আধা পাকা লিচু খাবেন না। ভরাপেটে অর্থাৎ খাওয়ার মিনিট ৩০ পর লিচু খেলে সমস্যা হবে না। তবে পছন্দের ফল বলে একসঙ্গে অনেকগুলো লিচু খাবেন না। প্রতিদিন ৭-৮ টি লিচু খেতে পারেন। তবে এর বেশি না খাওয়াই ভালো। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে খুব বেশি লিচু খেলে জ্বর হতে পারে।

গর্ভবস্থায় লিচুর উপকারিতা ও অপকারিতা 

লিচু যেহেতু গ্রীষ্মকালীন ফল তাই সবসময় এ ফল চাইলেই পাওয়া বা খাওয়া সম্ভব না। তবে গ্রীষ্মকালীন সময়ে হবু মা যদি এ ফলটি খায় তাহলে বেশকিছু উপকার পেতে পারে। তবে লিচুর উপকারিতা ও অপকারিতা দুটই রয়েছে বেশি পরিমানে। আর গর্ভকালীন সময়ে এ দিকে অনেক খেয়াল রাখতে হবে।

গর্ভবস্থায় লিচু বেশি খেলে কি হয়

  • গর্ভবতী মায়েদের অনেক সময় রক্ত সল্পতা, হার্টবিট ও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রন এ সহায়তা করে।
  • রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
  • লিভার ও ওজন নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করে।
  • হজমশক্তি বৃদ্ধির পাশাপাশি কোষ্ঠকাঠিন্য রোধ করে।
গর্ভাবস্থায় লিচু খাওয়ার উপকারিতা
গর্ভাবস্থায় লিচু খাওয়ার উপকারিতা

তাছাড়া গর্ভকালীন যে শুধু লিচু উপকারই করে এমন কিন্তু না। গর্ভকালীন সময়ে লিচু বেশি খেলে কি হয় গর্ভকালীন সময়ে লিচুর উপকারিতা ও অপকারিতা নিয়ে নিচে বর্ননা করা হলো।

  • গবেষকেরা বলছেন অতি মাত্রায়  লিচু খেলে শরীর এ ভারসাম্যহীনতা সৃষ্টি করে। 
  • এছাড়া গলাব্যথা, রক্তক্ষরণ, মুখের আলসারের মতো জটিলতা দেখা দিতে পারে।
  • রক্তচাপ বেশি কমে গেলে ঝাপসা দৃষ্টি, মাথা ঘোরা, ঠান্ডা, বমি বমি ভাব, অগভীর শ্বাসপ্রশ্বাস এবং চরম ক্লান্তি দেখা দেয়।
  • খালি পেটে লিচু বেশি খেলে কি হয় !! শরীরে বিষক্রিয়া হতে পারে। বাচ্চা ও মায়ের মৃত্যু ঝুঁকি থাকতে পারে।
  • গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত লিচু খেলে ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দেয়।
  • মৃত সন্তান জন্ম নিতে পারে।
  • অ্যালার্জির পরিমান বাড়িয়ে তুলতে পারে।
  • হবু মা সারা দিনে ৩-৪ টি লিচু খেতে পারবেন। এর বেশি নয়।

আরও পড়ুনঃ শিশুর মানসিক বিকাশ এ প্রয়ােজন খেলাধুলা ও সংস্কৃতিচর্চা

আরও পড়ুনঃ মাঙ্কিপক্স কি এবং মাঙ্কিপক্স কিভাবে ছড়াচ্ছে

বিভিন্ন ধরনের খবর জানতে চোখ রাখুন আমাদের ফেসবুক পেজেঃ সময় বুলেটিন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *