জনপ্রিয় নায়ক মান্নার জন্মদিন ১৯৬৪ সালের ১৪ এপ্রিল

নায়ক মান্না
ছবি: নায়ক মান্না

জনপ্রিয় নায়ক মান্নার জন্মদিন

নায়ক মান্না নব্বই দশকের বাংলা চলচ্চিত্রের তুমল জনপ্রিয় নায়ক। যার পারিবারিক নাম এস এম আসলাম তালুকদার মান্না। তবে নায়ক মান্না হিসেবেই দেশবাসীর কাছে জনপ্রিয় তিনি। ভক্তরা অনেকেই তাকে মহানায়ক বলেও জানেন। আজ এই মহা নায়ক মান্নার জন্মদিন।

১৯৬৪ সালের ১৪ এপ্রিল টাঙ্গাইলের কালিহাতির কৈতলা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন এই মহান অভিনেতা। প্রয়াত এই মহানায়কের জন্মদিন উপলক্ষে ‘মহানায়ক মান্না ফ্যান ক্লাব’র পক্ষ থেকে প্রতিবছর এফডিসিতে নানা রকম অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়।

আরো পড়ুন…ভাইরাল আফজল-সাবিনার লাজুক প্রেম

নায়ক মান্না ১৯৮৫ সালে নতুন মুখের সন্ধানে প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হয়ে চলচ্চিত্রে আসেন মান্না। নব্বইয়ের দশকে এসে তিনি একটু করে মাথা গোঁজার ঠাঁই পেয়ে যান। কাজী হায়াতের ‘ত্রাস’ সিনেমা ব্যবসা করলে তাঁকে আর পেছনে তাকাতে হয়নি। ক্যারিয়ারে তিনি তিন শতাধিক সিনেমায় অভিনয় করেছেন। প্রায় দু’যুগেরও বেশি সময় ধরে বেশ দাপটের সাথেই অভিনয় করে গিয়েছেন তিনি।

জনপ্রিয় নায়ক মান্না বঞ্চিত মানুষের কথা সিনেমার পর্দায় সুনিপুণ অভিনয়ের মাধ্যমে তোলে ধরেন। নব্বই দশকে অশ্লীল চলচ্চিত্রের ধারা শুরু হলে যে কজন প্রথমে এর প্রতিবাদ করেছিলেন তাদের মধ্যে নায়ক মান্না অন্যতম। যদিও মাত্রাতিরিক্ত অশ্লীল ছবি ’ফায়ার’ ছিল মান্না অভিনীত। তারপরও তিনি রীতিমত যুদ্ধ করেছিলেন অশ্লীল ছবির বিরুদ্ধে। অবশেষে চলচ্চিত্র নির্মাতাদের সাথে যুদ্ধ করে জয়ী হয়েছিলেন চিত্রনায়ক মান্না।

’দাঙ্গা’, ‘লুটতরাজ’, ‘তেজী’, ’আম্মাজান’, ‘আব্বাজান’ প্রভৃতি চলচ্চিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে জনপ্রিয়তার চূঁড়া ছঁয়েছিলেন মান্না। মান্না অভিনীত ‘আম্মাজান’ চলচ্চিত্রটি বাংলাদেশের চলচ্চিত্র অঙ্গনে ব্যবসা সফল ও জনপ্রিয় ছবিগুলোর মধ্যে অন্যতম।

’কে আমার বাবা’, ‘লাল বাদশা’, ‘আব্বাজন’ এর মতো সুপারহিট ছবিতে অভিনয় করে অসামান্য সাফল্য অর্জন করেন নায়ক মান্না। এ সকল ছবিতে নায়ক মান্না ছিলেন জীবন্ত ছবি। তাঁর প্রতিটি অভিনয় ছিল বাস্তব, জীবন্ত ও প্রাণবন্ত।

তাঁর প্রথম অভিনীত ছবির নাম ‘তওবা’। কিন্তু প্রথম মুক্তি পায় ‘পাগলী’ ছবিটি। ১৯৯১ সালে মোস্তফা আনোয়ার পরিচালিত ‘কাসেম মালার প্রেম’ ছবিতে প্রথম একক নায়ক হিসেবে অভিনয করার সুযোগ পেয়েছিলেন। এর আগে সব ছবিতে মান্না দ্বিতীয় নায়ক হিসেবে অভিনয় করেছেন। ‘কাসেম মালার প্রেম’ দশর্কের মাঝে বেশ সাড়া ফেলার কারণে মান্না একের পর এক একক ছবিতে কাজ করার সুযোগ লাভ করেন।

পরে নাম লেখান প্রযোজক হিসেবে। তাঁর একাধিক সিনেমার সঙ্গে হিট তকমা লাগে। এরপর কাজী হায়াত পরিচালিত ‘দাঙ্গা’ ও ‘ত্রাস’ সিনেমা দিয়ে একক নায়ক হিসেবে প্রতিষ্ঠা পান মান্না। শুধু অভিনেতা হিসেবে নয়, প্রযোজক হিসেবে তিনি বেশ সাফল্য অর্জন করেছিলেন। ভক্তদের মণিকোঁঠায় সহজেই ঠাঁই পেয়েছিলেন।

তাঁর প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান থেকে যতগুলো ছবি প্রযোজনা করেছেন তার প্রতিটি ছবিই ব্যবসা সফল ছিল। ছবিগুলো হচ্ছে- ‘লুটতরাজ’, ‘লাল বাদশা’, ‘আমাজ্জান’, ‘স্বামী স্ত্রীর যুদ্ধ’, ’দুই বধু এক স্বামী’, ‘মনের সাথে যুদ্ধ’, ‘মান্না ভাই’ ও ‘পিতামাতার আমানত ’। মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।

একে একে মোস্তফা আনোয়ার পরিচালিত ‘অন্ধ প্রেম’, মনতাজুর রহমান আকবর পরিচালিত ‘প্রেম দিওয়ানা’, ‘ডিস্কো ড্যান্সার’, কাজী হায়াত পরিচালিত ‘দেশদ্রোহী’, ছবিগুলো ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে মান্নার অবস্থান শক্তভাবে প্রতিষ্ঠিত করতে সাহায্য করে।

এ তারকা তাঁর মৃত্যুর আগে একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলে সাক্ষাতকারে জানিয়েছেন তাঁর ইচ্ছে তিনি সংসদ সদস্য হতে চেয়েছিলেন। তাঁর উদ্দেশ্য একটাই তিনি মানুষের সেবা করতে চান। নায়ক মান্না মনে করেছিলেন সংসদ সদস্য হলে তিনি মানুষের জন্য কাজ করতে পারবেন। সাক্ষাতকারটি নিয়েছিলেন অপি করিম। উপস্থাপিকা মান্নাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন মান্না ভাই কখনও কি নির্বাচনে অংশ নেয়া ইচ্ছে আছে আপনার। হাসি মুখে উত্তর দিয়ে মান্না বলেছিলেন ’আমি নির্বাচন করব, Today or tomorrow আমি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করব, আমার ভীষণ ইচ্ছে আছে তবে সেটা সেবামূলক ভাবনা থেকেই’।

মান্নার সহধর্মিনীর নাম শেলী মান্না। তাঁদের পুত্র সিয়াম ইলতেমাস দেশের বাইরের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘মিডিয়া এন্ড ফিল্ম স্টাডিজ’ এ পড়াশোনা করেছেন। নায়ক মান্নার ছেলে নায়ক হবেন কিনা সে ব্যাপারে তাঁর স্ত্রী বলেন সে কি হবে সেটা তার উপরই নির্ভর করছে। তিনি আরও বলেন ও সাংবাদিকতা করতে পারে আবার নিমার্ণও করতে পারে, তবে অভিনয়ে খুব একটা আগ্রহ দেখিনি আমি।

২০০৩ সালে ‘বীর সৈনিক’ চলচ্চিত্রের জন্য মান্না প্রথম বারের মত শ্রেষ্ঠ অভিনেতা হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। এছাড়া ১৯৯৯ সালে ‘আম্মাজান’ চলচ্চিত্রের জন্য বাচসাস পুরস্কারে শ্রেষ্ঠ অভিনেতার পুরস্কার জিতে নেন মান্না। মেরিল প্রথম আলো পুরস্কারে ১৯৯৯, ২০০০ এবং ২০০৭ সালে শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র অভিনেতা হিসেবে পুরস্কার জিতে নিয়ে ছিলেন নায়ক মান্না।

২০০৮ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মাত্র ৪৪ বছর বয়সে নায়ক মান্না মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুর পর জানাজা এফডিসি তে হয়। দ্বিতীয় জানাজা স্মৃতিসৌধে হওয়ার কথা ছিল কিন্তু দর্শকরা তাঁকে এতটাই ভালবাসে এবং শ্রদ্ধা করে যে ভক্তকূলের ভীড় এবং পুরো ঢাকাই অত্যন্ত জ্যাম থাকাই তাঁকে সেখানে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়নি।

টাঙ্গাইল জেলায় অবস্থিত তাঁর নিজ গ্রাম এলেঙ্গায় তাঁকে সমাহিত করা হয়।

বাংলা চলচ্চিত্র ইতিহাসে মান্না নামটি স্মরণীয় হয়ে থাকবে।

জনপ্রিয় নায়ক মান্না তাঁর ভক্তদের মাঝে বেঁচে থাকবেন অনন্তকাল।

somoybulletin

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *